স্বদেশ ডেস্ক
রাত পোহালেই ঈদুল আজহা। কোরবানির পশু জবাই ও মাংস বানাতে ছুরি, চাপাতি, দা, বঁটি অত্যাবশ্যকীয়। সেগুলো সংগ্রহ এবং প্রস্তুত রাখতে এখন সবাই ব্যস্ত। আর এর উপকরণ তৈরি ও শান দেয়ার কাজে ঘুম নেই কামারপাড়ায়। সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর:
নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ): কোরবানির ঈদের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে কামারদের ব্যস্ততা।
পশু কোরবানির দা, ছুরি ও চাপাতিসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনতে মানুষ ভিড় করছেন কামারপাড়ায়। আবার কেউ কেউ পুরানো সরঞ্জাম মেরামত অথবা শান দিয়ে নিচ্ছেন।
প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাব, আর্থিক সংকটসহ নানা কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প। পাশাপাশি কয়লা আর কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভের পরিমাণ কমেছে বলেও জানান অনেকে। বর্তমান আধুনিক যন্ত্রাংশের প্রভাবে কামার শিল্পের দুর্দিন চললেও পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে জমে উঠেছে এ শিল্প।
কামারপলিস্নর সুকুমার দেব জানান, বছরের অন্য দিনগুলোতে তেমন কাজ আসে না। কিন্তু কোরবানির ঈদ এলে কাজের চাপ বেড়ে যায়। দিন-রাত কাজ করেও রেহাই পাওয়া যায় না।
কামার শিল্পী বাবুল চন্দ্র দেব বলেন, ৩৫ বছরের বেশি সময় ধরে এই ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করছি। ঈদের আর কয়েক দিন বাকি থাকলেও পাইকারী দোকানদার ও খুচরা ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ঈদের আগ পর্যন্ত ঠিকমতো নাওয়া-খাওয়ার সময় পাচ্ছি না। কারিগররা জানান, কাঁচা-পাকা লোহা দিয়ে তৈরি করা হয় ধাতব যন্ত্রপাতি। তবে পাকা লোহার দা-ছুরির চাহিদা সবসময়ই বেশি থাকে এবং বেশি দামে বিক্রি হয়ে থাকে।
বিক্রেতারা জানান, দা আকৃতি ও লোহাভেদে ১শ থেকে ৪শ ৫০ টাকা, ছুরি ৫০ থেকে ৩শ টাকা, চাকু প্রতিটি সর্বোচ্চ ৫০ টাকা, হাড় কোপানোর চাপাতি প্রতিটি ২শ থেকে ৪শ টাকা এবং ধার করার স্টিল প্রতিটি ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। পুরানো যন্ত্রপাতি শান দিতে বা পানি দিতে ১শ ৫০ টাকা পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে।
মতলব (চাঁদপুর): টুং টাং শব্দে মুখরিত চাঁদপুরের মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলার কামারশালাগুলো। উপজেলার ছেংগারচর পৌরবাজার, নিশ্চিন্তপুর বাজার, কালির বাজার, কালিপুর, মোহনপুর, নতুন বাজার, নন্দলালপুর, সুজাতপুর, এখলাছপুর, গজরা বাজার, মতলব দক্ষিণের মতলব বাজার, নায়েরগাঁওসহ কামারপাড়া ঘুরে দেখা যায়, আগুনের তাপে ঘাম ঝরছে কামারের শরীরে। ইস্পাত কঠিন হাত দু'খানা আঘাত করছে লোহার বস্তুতে। শক্ত আঘাতে বদলে যাচ্ছে লোহার ধরন। তৈরি হচ্ছে মাংস কাটার অস্ত্র্ত্র। ছুরি, চাপাতি, দা, বঁটিসহ বিভিন্ন জিনিস তৈরি ও বিক্রিতে হিড়িক পড়ে গেছে। কামারপাড়ার এ দৃশ্য নতুন নয়। তবে কোরবানির ঈদ ঘিরেই বাড়ে এ পাড়ার ব্যস্ততা।
সাধারণত একটি বড় ছুরি, কটা চামড়া ছাড়ানোর জন্য ছোট ছুরি, কটি চাপাতি নিয়ে হয় এ এলাকায় একটি সেট। এ বছর সর্বনিম্ন ২ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে একসেট ছুরি-চাপাতি। তবে কেউ যদি আলাদা কিনতে চান তবে প্রতিটি জবাইয়ের ছুরি কিনতে লাগবে ৫০০-১৫০০ টাকা, চামড়া ছাড়ানোর ছুরিতে লাগবে ১৫০-৩০০ এবং চাপাতি কিনতে লাগবে ৫০০-২০০০ টাকা। অনেকেই আসছেন পুরানো সামগ্রী একটু ধার করে নিতে।
ছেংগারচর বাজারের কামার বিষু কর্মকার, দিনেশ কর্মকার ও বিপস্নব কর্মকার জানান, সারা বছর তাদের তেমন কাজ থাকে না। শুধু কোরবানির ঈদ এলেই বেড়ে যায় তাদের চাহিদা। তারা বলেন, রেডিমেড বিক্রির পাশাপাশি অর্ডার অনুযায়ী পশু জবাইর সরঞ্জাম তৈরি করে বিক্রি করা হয়।
শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): শ্রীমঙ্গল শহরের হবিগঞ্জ সড়কের পাশেই কামারপাড়া। কোরবানির সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে কামারদের ব্যস্ততা।
শান দেয়া নতুন দা, বঁটি, ছুরি ও চাকু সাজিয়ে রাখা হয়েছে দোকানের সামনে। ভিতরে চলছে কাজ। কেউ ভারী হাতুড়ি দিয়ে পেটাচ্ছেন দগদগে লাল লোহার খন্ড। কেউ দিচ্ছেন শান, কেউ কেউ কয়লার আগুনে বাতাস দিয়ে আগুন জ্বালাচ্ছেন। প্রচন্ড দাবদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠলেও এখানের চিত্র ভিন্ন। গরমকে ছুটিতে পাঠিয়ে আগুনের কাছাকাছি কাজ করছেন কামাররা। দোকানের জ্বলন্ত আগুনের তাপে শরীর থেকে ঝরছে অবিরাম ঘাম। চোখেমুখে প্রচন্ড ক্লান্তির ছাপ। তবু থেমে নেই তারা। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত অব্দি চলছে কাজের ব্যস্ততা।
ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর): দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে ঈদুল-আজহা সামনে রেখে কামার পলিস্নতে ব্যস্ত সময় পার করছে কামার শ্রমিকরা। এ উপজেলায় পৌরসভাসহ ৪টি ইউনিয়ন রয়েছে। উপজেলার রাণীগঞ্জ বাজার, বলগাড়ী, ওসমানপুর ও ডুগডুগীহাটে গড়ে উঠেছে কামারপলিস্ন। কোরবানির ঈদ সামনে রেখে সেখানে লোহা আর হাতুড়ির শব্দে এখন আকাশ-বাতাস মুখরিত। এ পেশার মানুষ সারাবছর কমবেশি লোহার কাজ করলেও ঈদুল আজহা সামনে রেখে বৃদ্ধি পায় তাদের কর্ম ব্যস্ততা। ভোর থেকে শুরু করে রাত অবধি চলছে তাদের রকমারি কর্মযজ্ঞ।