নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার পুটিমারী ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম ভেড়ভেড়ি আউলাকুটি। আর দশটা গ্রামের মতোই সাধারণ একটি গ্রাম। এই গ্রামেরই একটি কুঁড়েঘরে মোতাহারা বেগম (৩৮) স্বামী ও দুই মেয়ে নিয়ে বসবাস করতেন।
স্বামী মো. আজিজুল ইসলামের দিনমজুরির টাকা দিয়ে খুব কষ্টে দিনাতিপাত হতো তাদের। ঠিকমতো মজুরির টাকা পেতেন না। মোতাহারা বেগমও অন্যের বাড়িতে ও মাঠে কাজ করতেন। স্বামী-স্ত্রী মিলে কাজ করেও ১ বেলা উপোস থাকতে হতো। এমনকি আথির্ক সংকটের কারণে মেয়ে দু’টিকে স্কুলে পাঠাতে পারেননি তারা।
এখন সেই মোতাহারা বেগম স্বাবলম্বী। পরিবারে তার আর কোনো অভাব নেই। মেয়ে দুটি এখন যাচ্ছে স্কুলে। এই মোতাহারা বেগমের মতো কিশোরগঞ্জে ৩৭৫ জন মোতাহারা এখন স্বাবলম্বী। মোতাহারার হাত ধরেই বদলে যাচ্ছে কিশোরগঞ্জ দারিদ্রপীড়িত এই গ্রামের অনেক পরিবারের চিত্র।
ওই প্রকল্প থেকে তাকে প্রথমে গবাদি পশু পালন ও শাক-সবজি চাষাবাদের উপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তারপর একটি ১৪২০০/- (চৌদ্দ হাজার দুইশত) টাকা মূল্যের (হেইফার) গরু দেয়া হয়। এই গাভী থেকে বছরপ্রতি একটি করে বাছুর অথার্ৎ এখন পযর্ন্ত পঁাচটি বাছুর পান। ওই গাভী থেকে দিনে ৩ থেকে ৪ কেজি দুধ পান। ওই দুধ বিক্রি করে দুধের টাকা জমা করে। প্রথম বছরে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে ১০ শতাংশ জমি বন্ধক নেন। এরপর সেই জমিনে আমন ধান লাগান। ধান উৎপন্ন হওয়ার পর থেকে প্রতি বছর গাভীর দুধের টাকা, গোবর বিক্রির টাকা ও মজুরির কিছু টাকা দিয়ে আরও ১৬ শতাংশ জমি বন্ধক নেন। তৈরি করেন টিনের ঘর।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শুধু মোতাহারাই নয়, এ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের কয়েকশ নারী স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। এসব এলাকার অন্তত ৩৭৫ জন হতদরিদ্র নারী ওয়াল্ডর্ ভিশন বাংলাদেশের লাইভলীহুড প্রকল্পের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়ে নিজেদের ভাগ্যের পরিবতর্ন ঘটিয়েছে।
বিষয়টি স্বীকার করে পুটিমারী ইউপি চেয়ারম্যান আবু সায়েম লিটন জানান, ওয়াল্ডর্ ভিশন বাংলাদেশ কিশোরগঞ্জে লাইভলীহুড প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে এলাকায় নারীদের সহযোগিতা দিয়ে স্বাবলম্বী করে তুলেছে। তিনি সরকার ও এনজিও প্রধানের প্রতি এ ধরনের আরও দীঘের্ময়াদী প্রকল্প হাতে নেয়ার আহŸান জানান। এদিকে পানিয়াল পুকুর গ্রাম উন্নয়ন কমিটি (ভিডিসি) সভাপতি আজিজুল ইসলাম (অবঃ আমির্) জানান, এ প্রকল্পের মাধ্যমে এলাকার অনেক পরিবার এখন তিন’বেলা খেতে পারেন। তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে পারেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়াল্ডর্ ভিশন বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ এরিয়া ম্যানেজার পিকিং চাম্বু গং জানান, শুধু এ বছরই আমরা এ এলাকার ৩৭৫ জন হতদরিদ্র নারী ও তাদের পরিবারকে এ লাইভলীহুড প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দিয়ে স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করছি। এ প্রকল্প অতি দরিদ্র মানুষের জীবন-যাত্রার মান উন্নয়নে ও স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের একটি মডেল।