শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পুলিশে প্রথম সংক্রমিত কর্মকর্তার করোনা জয়ের গল্প

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৬ মে ২০২০, ০০:০০

১১ এপ্রিল সকালে খবর পাই আমার করোনা টেস্টের ফল পজেটিভ এসেছে। কী করব কী করব, বুঝে উঠতে পারছিলাম না। ওইদিন সন্ধ্যায় রাজারবাগ পুলিশ লাইন হাসপাতালে চলে যাই। ছোট্ট একটি রুমে একা ছিলাম। আমার মেয়ে বারবার ফোন করত। বলত, বাবা আস না কেন, কবে আসবা? আমি শুধু ওকে বলতাম, মা, কালই চলে আসব। এভাবে সময় এগিয়ে নিতে নিতে বেশ কয়েক দিন পর মেয়ের সঙ্গে দেখা।

কথাগুলো বলছিলেন মো. গোলাম সাকলায়েন। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (উত্তর) অতিরিক্ত উপকমিশনার। ঊর্ধ্বতন এই পুলিশ কর্মকর্তাই করোনায় সংক্রমিত বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সর্বপ্রথম ব্যক্তি। আর তিনিই প্রথম ব্যক্তি, যিনি করোনাকে জয় করে আবার কাজে ফিরেছেন।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে ১৪ মে পর্যন্ত ১ হাজার ৯৪৩ জন পুলিশ সদস্য করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। এর মধ্যে ২৯৮ জন সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়ে গেছেন। প্রাণ হারিয়েছেন সাতজন।

শুক্রবার সকালে কথা হয় মো. সাকলায়েনের সঙ্গে। করোনার সঙ্গে যুদ্ধের সময় কীভাবে কেটেছে, সে কথা জানালেন তিনি। বললেন, 'প্রায় দেড় মাস আগের ঘটনা। ২৮ মার্চ রাতে অভিযান চালিয়ে অফিসে ফেরেন। পরদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর শরীরে ভালো বোধ হচ্ছিল না। ঠান্ডার ভাব আর জ্বর ছিল। এরপর চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খাচ্ছিলাম। এরপরও শরীরটা ভালো লাগছিল না। ৮ এপ্রিল সকালে করোনা পরীক্ষা করাই। এর কয়েক দিন পর, ১১ এপ্রিল সকালবেলা করোনা পজিটিভ বলে রিপোর্ট আসে। আসামি নিয়ে ফেরার সময় হয়তো কোনোভাবে করোনায় সংক্রমিত হয়েছি। এ ব্যাপারে নিশ্চিত নই।'

মহানগর পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ভাষ্য, 'করোনা পজিটিভ রিপোর্ট পাওয়ার পর বাসায় থাকতেও অস্বস্তি হচ্ছিল। যদিও আমার স্ত্রীর অফিস ঢাকার বাইরে। সেখানেই থাকেন আমার মেয়েকে নিয়ে। আমি ঢাকার সরকারি বাসায় একা থাকতাম।'

এ কথা বলে মো. সাকলায়েন জানান, ঢাকার বাসায় থাকতে অস্বস্তি হচ্ছিল। আশপাশের ফ্ল্যাটের লোকজনও অস্বস্তিতে হয়তো পড়তে পারেন। বিবেচনা করে ১১ এপ্রিল সন্ধ্যায় রাজারবাগ পুলিশ লাইন হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। একা একটি কক্ষে থাকার ব্যবস্থা করেন। সঙ্গে ছিল ল্যাপটপ আর মোবাইল ফোন সেট। পিপিই পরে ওই কক্ষে ঢোকেন তিনি।

মো. সাকলায়েন বলেন, ওইদিন আমিসহ তিনজন রাজারবাগ পুলিশ লাইন হাসপাতালে করোনা নিয়ে ভর্তি হই। প্রথম কয়েক দিন দুশ্চিন্তা ছিল। এর সঙ্গে হালকা বুকে ব্যথা হয়েছিল, মাথা ব্যথা করত। চতুর্থ দিনের পর শরীর ভালো হতে শুরু করল। এর আগে কয়েক দিন গরম পানি দিয়ে গার্গল করতে হয়েছে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন সি জাতীয় ট্যাবলেট, ওষুধ খেয়েছি। এ সময় আমার এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কিছু বই, ও খাবার পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। ছিল সিনেমা দেখার সুযোগ। তা ছাড়া প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার আমার স্ত্রী রান্না করে পাঠাতেন। তবে বাবা-মাকে আমার অসুস্থতার কথা একেবারেই জানতে দিইনি।

চিকিৎসা চলাকালে ইতিবাচক চিন্তা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই উলেস্নখ করেন পুলিশ কর্মকর্তা মো. গোলাম সাকলায়েন বলেন, শুরুতে একটু দুশ্চিন্তা হতো। অস্থিরতাও থাকত। ধীরে ধীরে সব মানিয়ে নিতে হয়েছে। বই পড়তাম, ল্যাপটপে সিনেমা দেখেছি। ফোনে পরিচিত লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। এর পাশাপাশি নামাজ পড়েছি। সুস্থ হওয়ার জন্য এটি সবচেয়ে ভালো উপায়।

মো. গোলাম সাকলায়েন বলেন, এভাবে দিন কেটে যেতে থাকে। ২২ এপ্রিল আবার করোনা টেস্ট করাতে হয়। সেটি নেগেটিভ হয়। পরদিন ২৩ এপ্রিল ও ২৪ এপ্রিল দুটি টেস্টে নেগেটিভ রিপোর্ট আসে। রিপোর্ট পেয়ে ২৪ এপ্রিল সন্ধ্যাবেলায় বাসায় ফিরে যাই। এখানে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিনে ছিলাম। পরে খানিকটা সুস্থ হয়ে স্ত্রী ও মেয়ের সঙ্গে দেখা করি।

পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের এই অতিরিক্ত উপকমিশনার বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর মধ্যে সবার আগে আমি করোনায় সংক্রমিত হয়েছিলাম, সবার সহযোগিতায় আর নিজের মানসিক দৃঢ়তায় আমিই পুলিশ সদস্য হিসেবে সর্বপ্রথম করোনামুক্ত হয়েছি। কিছু দিন ঘরে থাকার পর গত ৮ মে আবার পেশাগত কাজে ফিরে এসেছি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<99710 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1