শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বদলে গেছে পাঁচ তারকা হোটেলের ব্যবসার ধরন

আহমেদ তোফায়েল
  ১৬ মে ২০২০, ০০:০০
রাজধানীতে একটি পাঁচ তারকা হোটেল -ফাইল ছবি

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কোপে ধস নেমেছে হোটেল ব্যবসায়। ৪৪টি তারকা হোটেলসহ সারাদেশের ৫ শতাধিক হোটেল-মোটেল অতিথিশূন্য। ফলে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হোটেল খাত। তবে আর্থিক ক্ষতি কিছুটা কাটিয়ে উঠতে তারকা হোটেলগুলো বদলে ফেলেছে তাদের ব্যবসার ধারণ।

রাজধানীর কয়েকটি হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাধারণত বছরের এ সময়ে ৭০ শতাংশের বেশি রুমে অতিথি থাকে। অতিথিদের হল ও রুম ভাড়া দেওয়া হোটেলগুলোর মূল ব্যবসা। কিন্তুু করোনার প্রভাবে সেটি ২ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। এ জন্য পাঁচতারকা হোটেলগুলো তাদের কিছু ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বিকল্প হিসেবে তারা অনলাইনে অর্ডার নিয়ে বাসাবাড়িতে খাবার সরবরাহ করছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, কিছু হোটেল হোম ডেলিভারি খাবার পরিষেবা চালু করেছে। আবার কিছু হোটেল রমজান মাসে ইফতারের সেবা শুরু করেছে। তবে এ বিকল্প সেবায় তাদের বিশাল ক্ষতির পরিমাণ পুষিয়ে আনা সম্ভব হবে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, করোনার কারণে অতিথি না আসায় প্রায় হোটেলই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের ব্যবসায়ের তিনটি প্রধান দিক রয়েছে। যেমন কক্ষ ভাড়া দেওয়া, বনভোজনের জন্য হল ভাড়া এবং এবং রেস্তোরাঁ ব্যবসা। করোনার কারণে এখন কোনো ব্যবসায়ই হচ্ছে না। বেশিরভাগ হোটেলই হল ও কক্ষ ভাড়া প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমেছে। এখন কিছু হোটেল আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে গ্রাহকদের ইফতার ও খাবার সরবরাহ শুরু করেছে।

রাজধানীর সিক্স সিজন হোটেলের মহাব্যবস্থাপক মো. আল আমিন যায়যায়দিনকে বলেন, 'করোনাভাইরাসটির ভ্যাকসিন উদ্ভাবিত না হওয়া পর্যন্ত এ সংকট অব্যাহত থাকবে বলে মনে হচ্ছে। তবে আমরা জানি না ভ্যাকসিনের জন্য আর কত মাস অপেক্ষা করতে হবে। সে কারণেই আমরা অস্তিত্ব রক্ষার জন্য কিছু বিকল্প সন্ধানের চেষ্টা করছি।'

তিনি বলেন, অনলাইনের মাধ্যমে বিকল্প ব্যবসা হিসেবে তারা খাবার ও ইফতারের হোম ডেলিভারি সার্ভিস শুরু করেছেন। এ বিকল্প থেকে যে ব্যবসা হচ্ছে তা অন্য সময়ের মোট ব্যবসার মাত্র পাঁচ শতাংশ। তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষ লকডাউন শিথিলের অপেক্ষায় আছেন। আশা করা যাচ্ছে লকডাউনের পর হোটেল ব্যবসায় ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

রেডিসন বস্নুর পরিচালক (বিক্রয় ও বিপণন) শরফুদ্দিন নেওয়াজ বলেন, তারা পরিবার ও ব্যক্তি উভয়ের জন্য ইফতারের পাঁচটি প্যাকেজ চালু করেছেন। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকদের অগ্রিম অর্ডার দিতে হয়। হোটেলের বর্তমান পরিস্থিতি উলেস্নখ করে তিনি জানান, তাদের হোটেলে এখন মাত্র দুজন অতিথি রয়েছেন।

পাঁচতারা হোটেল ঢাকা রিজেন্সি হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের নির্বাহী পরিচালক শহীদ হামিদ বলেন, তারা ইফতার সেবা শুরু করেছেন। অন্যান্য বছর তারা প্রতিদিন প্রায় ১০-১৫ লাখ টাকার ইফতারের খাবার বিক্রি করতেন করেনার কারনে এবার সে বিক্রি নেমে এসেছে ২০-২৫ হাজার টাকায়। তিনি বলেন, অতিথি সেবামূলক খাতটি মহামারি শেষ হওয়ার পরও বছরের পর বছর ভুগতে হতে পারে। যদিও বিকল্প লোকসান কাটাতে ইফতার সেবা পর্যাপ্ত নয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার কারণে ধস নেমেছে দেশের হোটেল ব্যবসায়। নতুন করে বুকিং দিচ্ছেন না কেউ। আগের বুকিং আদেশও বাতিল হয়েছে। ফলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ও পরিচালন ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অস্তিত্ব বাঁচাতে কর মওকুফ ও আর্থিক প্রণোদনা চান খাত সংশ্লিষ্টরা।

তথ্য মতে, গত জানুয়ারি থেকেই হোটেল খাতে করোনার প্রভাব পড়তে শুরু করে। বিশেষ করে তখন থেকেই বিদেশি অতিথিশূন্য হয়ে পড়ে হোটেলগুলো। আর গত ৮ মার্চ দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকে পুরোপুরি অতিথি শূন্য হয় হোটেলগুলো। আর গত ২৬ মার্চ থেকে দেশে অঘোষিত লকডাউন চলছে। এটার শেষ কবে, তাও বলতে পারছেন না কেউ। ফলে অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটছে এ খাতের উদ্যোক্তাদের।

বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএইচএ) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত ফেব্রম্নয়ারি থেকে আগামী জুন ২০২০ পর্যন্ত পূর্বানুমান হিসেবে তাদের অন্তর্ভুক্ত হোটেলগুলো এবং অন্যান্য ৫০০টি হোটেল প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

বিআইএইচএ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে বিদেশি অতিথিদের বেশিরভাগই আসেন চীন, জাপান, ভারত, ফ্রান্স, ডেনমার্ক ও শ্রীলঙ্কা থেকে। সাধারণত বছরের এ সময়ে ৭০ শতাংশের বেশি রুমে অতিথি থাকলেও করোনার প্রভাবে সেটি ২ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে।

তারকা হোটেলগুলোর কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, বছরের প্রথম চার মাসে ব্যবসায়িক কাজে বিদেশিরা বেশি আসেন। তারকা হোটেলে তারা থাকার পাশাপাশি ব্যবসায়িক মিটিং করেন। এছাড়া পর্যটকরাও ঘুরতে এসে অনেকে তারকা হোটেলে ওঠেন।

অন্যদিকে হোটেলের বলরুমগুলোতে হয় নানা রকম মেলা, সভা, সেমিনার ও অনুষ্ঠান। প্রায় প্রতিটি হোটেলেই এ সময়ে ৭০-৮০ শতাংশ রুমে অতিথি থাকেন। কোনো কোনো হোটেলে শতভাগ রুম অতিথিতে পরিপূর্ণ থাকে। কিন্তু করোনার প্রাদুর্ভাবে ক্রমাগত বুকিং বাতিল হয়েছে। নতুন করে অতিথিরা বুকিং করছেন না।

রাজধানীর প্রাচীনতম পাঁচতারকা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল এরই মধ্যে তাদের সুইমিংপুল, জিমনেশিয়াম ও বারসহ বেশকিছু সেবা সীমিত করে এনেছে। কর্মীদের অনেককে ছুটিও দিয়েছে।

আরেক পাঁচতারকা হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলমগীর জানান, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হোটেলটির ৩০ শতাংশ কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

হোটেল স্যারিনার নির্বাহী পরিচালক মাশকুর সারওয়ার বলেন, পরিস্থিতি খুবই খারাপ। অবস্থার উন্নতি না ঘটলে বড় ধরনের বিপর্যয়ে পড়তে হবে।

বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের সচিব মহসিন হক হিমেল বলেন, যেখানে ৮০ শতাংশ অতিথি থাকত সেখানে কমে মাত্র ৫ শতাংশে পৌঁছেছে। হোটেল চালানো কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএইচএ) প্রেসিডেন্ট এইচএম হাকিম বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হোটেলগুলো পড়েছে চরম সংকটে। কোনো কোনো হোটেলের অকোপেন্সির হার ১ শতাংশ থেকে ২ শতাংশ। এরূপ অবস্থা বহাল থাকলে হোটেলগুলোর পক্ষে অপারেশন কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হবে না।

বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করে বিআইএইচএ বলছে, তাদের অন্তর্ভুক্ত হোটেলগুলোর শ্রমিক ও কর্মচারীদের ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত বেতন বাবদ প্রতি মাসে প্রত্যেক কর্মচারীদের ৫০ হাজার টাকা আর্থিক অনুদান প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। এছাড়া হোটেলগুলোর মাসিক বিদু্যৎ বিল, গ্যাস বিল ও পানির বিল ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত মওকুফ এবং শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার ওপর আয়কর মওকুফ করা প্রয়োজন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<99705 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1