শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কুফরির নিকৃষ্টতম প্রকার মুনাফিকি

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৫ মে ২০২০, ০০:০০

বিশ্বাসগত দিক থেকে কুফরির নিকৃষ্টতম প্রকার হলো মুনাফিকি। যার ভেতরের অবস্থা প্রকাশ্যের বিপরীত তাকে 'নিফাক' বলে। যার মধ্যে নিফাক রয়েছে সে মুনাফিক। মুনাফিকরা প্রত্যেকেই দ্বিমুখী আচরণকারী। এক মুখে তারা মুমিনদের সঙ্গে মিলিত হয়। অন্য মুখে ভোল পাল্টিয়ে তারা কাফিরদের সঙ্গে মিলিত হয়।

রাসুল সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নামের যুগে মুনাফিকদের ওহীর মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়েছে। আজও মুনাফিকদের চরিত্র বর্তমান সমাজে রয়েছে। অফিস-আদালত, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রসহ সর্বস্তরে এদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।

মুনাফিকের পরিচয় সম্পর্কে আলস্নাহ বলেন, 'তারা যখন ইমানদার লোকদের সঙ্গে মিলিত হয় তখন বলে আমরা ইমান এনেছি। কিন্তু যখন নির্জনে তারা তাদের কাফিরদের সঙ্গে মিলিত হয় তখন তারা বলে, আসলে আমরা তোমাদের সঙ্গেই আছি, আর আমরা তাদের সঙ্গে ঠাট্টা করি মাত্র। (সুরা বাক্বারাহ :আয়াত ১৪)

মুনাফিকির পরিণাম সম্পর্কে আলস্নাহ বলেন, 'হে নবী! কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করুন এবং তাদের সম্পর্কে কঠোর নীতি অবলম্বন করুন। আর তাদের পরিণতি হচ্ছে জাহান্নাম এবং তা

অত্যন্ত নিকৃষ্ট স্থান। (সুরা তাওবাহ :আয়াত ৭৩) আলস্নাহ আরও বলেন, নিশ্চয়ই মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্থানে অবস্থান করবে। (সুরা নিসা : আয়াত ১৪৫)

আলস্নাহ ওয়াদা করেছেন, মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারীদের এবং কাফেরদের জন্য রয়েছে দোজখের আগুন। তাতে তারা চিরদিন থাকবে। সেটাই তাদের জন্যে যথেষ্ট। আর আলস্নাহ তাদের প্রতি অভিসম্পাত করেছেন এবং তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী আজাব। (সুরা তাওবাহ আয়াত ৬৮)

আলস্নাহ তাআলা সুরা বাকারার ৮ থেকে ২০ পর্যন্ত মোট ১৩টি আয়াত মুনাফিকদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে নাজিল করেছেন। তা ছাড়া বিভিন্ন সুরায় আরও ৩৮টি আয়াতে মুনাফিকদের আলোচনা করেছেন। তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হলো- তারা দু'মুখো আচরণ করে এবং মুমিনদের নির্বোধ মনে করে। আলস্নাহ ও মুমিনদের সঙ্গে প্রতারণা করে। তাদের অন্তর অসুস্থ এবং ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী। যদিও তারা নিজেদেরকে বুদ্ধিমান এবং শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী বলে মনে করে।

মুনাফিকদের সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আলস্নাহ তাআলা ইরশাদ করেন, 'আর যখনই তাদের বলা হয়, পৃথিবীতে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করো না, তারা উত্তরে বলে আমরাই তো সংশোধনকারী ও শান্তিকামী।' (সুরা বাকারা: আয়াত ১১)

অথচ মুনাফিকদের প্রধান কাজই হচ্ছে সমাজে বিভিন্ন ধরনের ফ্যাসাদ ও অশান্তি সৃষ্টি করে প্রচার-প্রপাগান্ডায় নিজেদের শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী বলে পরিচয় দেয়া।

মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য এবং তাদের পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করে পবিত্র কোরআনে বলা হয়, 'যখন তাদের বলা হয়, অন্য লোকদের ন্যায় তোমরাও ইমান আনো, তখন তারা বলে, আমরা কি সেই নির্বোধ লোকদের মতো ইমান আনব? আসলে তারাই তো নির্বোধ, কিন্তু তাদের সে জ্ঞান নেই।' (সুরা বাকারা :আয়াত ১৩)

পার্থিব জগতে মুনাফিকদের তাৎক্ষণিক শাস্তি দেওয়া না হলেও পরকালে তাদের জন্য কঠিন আজাব অপেক্ষা করছে বলে পবিত্র কোরআনে সতর্ক করা হয়েছে। বলা হয়েছে, মুনাফিকদের তাদের ভ্রষ্টতার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে শাস্তি না দেওয়ায় এবং দুর্নীতিপরায়ণ হয়েও পার্থিব জগতে সুখ-শান্তিতে কালাতিপাত করার সুযোগদানের ফলে তাদের ভ্রষ্টতা আরও গভীরে অনুপ্রবেশ করে। আলস্নাহ তাআলা ইরশাদ করেন, 'বস্তুুত আলস্নাহই তাদের সঙ্গে তামাশা করছেন (তাদের তামাশার জবাব দিচ্ছেন) এবং তাদের তাদের অবাধ্যতার বিভ্রান্তিতে ঘুরে বেড়ানোর অবকাশ দিচ্ছেন।' (সুরা বাকারা-১৬)

রাসুলুলস্নাহ (সা.) বলেন, 'যখন তোমরা কোনো বান্দাকে দেখতে পাও যে সে পাপী হওয়া সত্ত্বেও তার পছন্দনীয় জিনিস তাকে দেওয়া হচ্ছে এবং সে সুখ-শান্তিতে আছে, তবে মনে করবে তা তার জন্য পাকড়াও করার অবকাশ মাত্র।' আলস্নাহ তাআলা ইরশাদ করেন, 'আমি শাস্তি না দিয়ে সুযোগ দেই পাপ বৃদ্ধির জন্য।' (সুরা আলে ইমরান: আয়াত ১৭৮)

মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আরও বলা হয়, তারা সুবিধা ভোগের জন্য ইসলামে দাখিল হয়; কিন্তু ইসলামের বিধিবিধান পালন ও ইসলামের আনুগত্যের কষ্ট স্বীকার করতে রাজি নয়। আলস্নাহ তাআলা ইরশাদ করেন, (তাদের উদাহরণ হলো) বর্ষণমুখর ঘন মেঘের মতো, যাতে রয়েছে ঘোর অন্ধকার, বজ্রের গর্জন ও বিদু্যতের চমক; বজ্রধ্বনিতে মৃতু্যভয়ে তারা তাদের কানে আঙুল ঢুকিয়ে দেয়; আলস্নাহ এসব সত্য প্রত্যাখ্যানকারী লোকদের সর্বদিক দিয়ে পরিবেষ্টন করে রেখেছেন। অর্থাৎ তারা আলস্নাহর আয়ত্তের ভেতরে আছে, তিনি তাদের সম্পর্কে জানেন।' (সুরা বাকারা :আয়াত ১৯)

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<99597 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1