শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ত্রাণ চুরির তথ্য দিয়ে দিনে ৮ ফোনকল

তানভীর হাসান
  ১৫ মে ২০২০, ০০:০০

করোনায় রিলিফ বিতরণে অনিয়ম ও চুরির তথ্য দিয়ে পুলিশের জরুরি সেবা ৯৯৯ এ গত ২১ দিনে সারাদেশ থেকে ফোন কল এসেছে ১৭৭টি। অর্থাৎ গড়ে দিনে ৮টিরও বেশি কল পেয়ে মাঠে অভিযান চালাতে হচ্ছে তাদের। এছাড়া একই সময়ে দিনে ৩৮৭টি কল এসেছে ত্রাণের সহায়তা চেয়ে। অর্থাৎ গড়ে ঘণ্টায় ১৬ জনের ফোন কল পেয়ে তাদের সাধ্যমতো সহায়তার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ সদস্যরা। পাশাপাশি কিছু কল তথ্যসেবা হেল্পলাইন-৩৩৩ কর্র্তৃপক্ষের কাছেও ট্রান্সফার করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ৯৯৯-এর অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ তবারক উলস্নাহ যায়যায়দিনকে বলেন, করোনা সম্পর্কিত অনেক কল পাচ্ছি। এর মধ্যে বেশিরভাগ কলারই ত্রাণ চাচ্ছেন। এর সাথে নতুন করে যুক্ত হচ্ছে ত্রাণ নিয়ে অনিয়মের তথ্য। এসব ফোন পাওয়ার পর বেশকিছু সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হয়েছে। কয়েকজনকে আইনের আওতায়ও আনা হয়েছে।

তিনি বলেন, ত্রাণের জন্য কল করলে পুলিশ সদরে বসে তার প্রয়োজন আছে কি না সেটা যাচাই করা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে আমরা কলগুলো সংশ্লিষ্ট থানার ওসি, জেলার এসপি ও ইউএনওদের কাছে ট্রান্সফার করছি। তারা যাচাই-বাছাই করে ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছেন। আবার অনেক ক্ষেত্রে ৩৩৩ থেকেও কল ট্রান্সফার করা হচ্ছে।

জানা গেছে, ৯৯৯ চালু হওয়ার পর পুলিশের পক্ষ থেকে নানা ধরনের সহায়তা প্রদান করে আসছে। পুলিশি সেবার পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স সেবাই তাদের মূল উদ্দেশ্য। তারপরও ইভ টিজিং ও সামাজিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণে এ সেবা কার্যকর ভূমিকা প্রদান করে আসছে। এর বাইরেও নানা ধরনের মানবিক কাজের সঙ্গেও যুক্ত ৯৯৯। এ ধরনের সহায়তা প্রদান করায় দিনকে দিন মানুষের আস্থা অর্জন করেছে পুলিশের এ সেবাটি। এ আস্থা থেকেই মানুষ এখন করোনা সম্পর্কিত ফোন দিচ্ছে ৯৯৯ এ।

সূত্রমতে, করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই ৯৯৯ এ কলের সংখ্যা বেড়ে যায়। এরপর মার্চ থেকে শুরু হয় ত্রাণের সহায়তা চেয়ে। এ কারণে এ বিষয়টি আলাদা নথিভুক্ত করা শুরু হয়। সে হিসাবে গত মাসের ২১ তারিখ থেকে চলতি মাসের ১১ তারিখ পর্যন্ত ত্রাণের সহায়তা চেয়ে ৮ হাজার ১৪৪টি কল আসে। ত্রাণে অনিয়ম ও চুরির অভিযোগে কল আসে ১৭২টি। সরকারের দেওয়া স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না এ ধরনের তথ্য দিয়ে পুলিশের সহায়তা চান ৯৮৭ জন। অনেকে বিদেশ থেকে এসে কোয়ারেন্টিন মানছে না, এ ধরনের ১০টি কল এসেছে ৯৯৯-এ। সব মিলিয়ে গত ২১ দিনে করোনা সম্পর্কিত এ ধরনের ৯ হাজার ৩১৩টি কলারের সমস্যা সমাধান করা হয়েছে।

সদর দপ্তরে এ শাখার দেওয়া তথ্যমতে, ত্রাণ সহায়তা চাওয়ার পাশাপাশি এবার নতুন করে ত্রাণে অনিয়মের অভিযোগ করা হয়। এ ধরনের কল আসা শুরু করে গত মাসের ২১ তারিখ থেকে। ওইদিন প্রথম ২৭টি কল আসে। এরপর এ কলগুলো সংশ্লিষ্ট উপজেলার ইউএনও ও থানার ওসিদের রেফার করা হয়। সেখান থেকে কলারের তথ্য গোপন রেখেই সংশ্লিষ্ট প্রসাশন অভিযান চালায়। অনেক সময় কলাররা মিথ্যা তথ্যও দিয়েছে। আবার ছোট ঘটনাকেও অতিরঞ্জিত করে কল দেওয়া হয়েছে। তবে তার সংখ্যাও হাতেগোনা। এসব কলারের সামাজিক নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে তাদের মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়েছে। তবে অনিয়মের অন্তত ১৫৬টি অভিযোগের সত্যতা পায় সংশ্লিষ্টরা। তারা অনেকে স্থানীয় পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি। এদের কয়েকজনকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। আবার অনেককে জরিমানা করে সতর্ক করা হয়।

সূত্রমতে, গত ২১ তারিখে ২৭ কল পাওয়ার পরদিন ২২ এপ্রিল অনিয়মের তথ্য দিয়ে ৯৯৯ এ কল আসে ৩২টি, একইভাবে পরদিন ২০, তার পরদিন ১১, এভাবে প্রতিদিনই পর্যায়ক্রমে ৭, ১৩, ১০, ৯, ৫, ৬, ১, ৫, ৩, ৫, ১, ৫, ৪, ১, ২, ৪ ও সর্বশেষ ১১ মে ১টি কল আসে। এসব কল আমলে নিয়ে যাচাই-বাছাই শেষে ব্যবস্থা দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র দাবি করেছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের এ শাখার দেওয়া তথ্যমতে, গত ১৮ মার্চ থেকে ১১ মে পর্যন্ত তারা প্রায় ১৯ লাখ ৯৬ হাজার কল পেয়েছে। করোনাসহ দেশের নানা ধরনের সমস্যার জন্য সাধারণ মানুষ কল করেন। এর মধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে প্রায় ৩ লাখ মানুষকে নানা ধরনের সেবা দেওয়া হয়।

৯৯৯ সূত্র জানায়, এসব কলারের বেশিরভাগই করোনা নিয়ে তাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা জানায়। পাশাপাশি তারা সবাই ত্রাণের জন্য পুলিশ সদস্যদের সহায়তা চান। বিশেষ করে রোজার আগে কলারের সংখ্যা বেড়ে যায়। খাবার চেয়ে অনেকে কান্নাকাটিও করেন। এমন পরিস্থিতিতে মানবিক দিক বিবেচনায় এ ধরনের কলগুলো সংশ্লিষ্ট থানার ওসির কাছে ট্রান্সফার করা হয়। এরপর থানার ওসিরা নীরবেই এসব ব্যক্তির ঘরে ত্রাণ পাঠানোর ব্যবস্থা করছেন। কিছু স্থানে ওসিদের কাছে ত্রাণ না থাকায় এ ধরনের কলগুলো ইউএনওদের কাছে পাঠানোর সীদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আবার অনেক কলের গুরুত্ব বিবেচনা করে জেলার পুলিশ সুপারদের কাছেও পাঠানো হয়েছে। জেলার পুলিশ সুপাররা তাদের ঠিকানা সংগ্রহ করে ডিসিদের সঙ্গে সমন্বয় করে ত্রাণের ব্যবস্থা করে যাচ্ছেন।

ঢাকার পাশের একটি জেলার পুলিশ সুপার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, গার্মেন্ট শ্রমিকরা কর্মস্থলে আসার পর তারা বেতন না পেয়ে খাবারের জন্য ৯৯৯ এ কল দেওয়া শুরু করে। সেখান থেকে বেশির ভাগ কল এসপি ও থানার ওসিদের কাঠে ট্রান্সফার করা হয়। এরপর পুলিশের সাধ্যমতো তাদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেখানে পুলিশের সাধ্যে ছিল না সেখানে জেলা প্রশাসক ও ইউএনওদের সহায়তা নেওয়া হয়েছে। তবে প্রত্যেক ব্যক্তিকে সহায়তার আগে বিষয়টি যাচাই-বাছাই করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<99595 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1