শান্তির ধর্ম ইসলাম মানুষের মৌলিক অধিকার পূরণে জোরালো তাগিদ দিয়েছে। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) মানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় জীবনব্যাপী সংগ্রাম করে গেছেন। রাজনৈতিক বা অন্য কোনো মতামত, সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় কোনো কারণে কেউ যাতে কারও মৌলিক অধিকার খর্ব না করে এ ব্যাপারে কোরআনে কঠোরভাবে হুঁশিয়ার করা হয়েছে। ইসলামে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও শিক্ষাসহ পাঁচটি মৌলিক অধিকার পূরণে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।
মহান আলস্নাহতায়ালা ইরশাদ করেন, 'পৃথিবীতে বিচরণশীল কোনো প্রাণী নেই, তবে সবার জীবিকার দায়িত্ব আলস্নাহ পাক নিয়েছেন। (সূরা-হুদ-০৬)'। আরেক স্থানে বলেছেন, 'আলস্নাহতায়ালাই তো রিজিকদাতা, শক্তির আধার, পরাক্রান্ত।' (সূরা-বাকারা-৫৮)।
বস্ত্র সম্পর্কে মহাগ্রন্থ আল-কোরআনে বলা হয়েছে, 'হে বনি আদম! আমি তোমাদের জন্য পোশাক অবতীর্ণ করেছি। যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং অবতীর্ণ করেছি, সাজসজ্জার বস্ত্র এবং পরহেজগারির পোশাক। এটি সর্বোত্তম। (সূরা আরাফ-২৬)। হে বনি আদম! তোমরা প্রত্যেক নামাজের সময় সাজসজ্জা পরিধান করে নাও। (সূরা আরাফ-৩১)।
মানুষের মৌলিক অধিকারের অন্যতম
\হবাসস্থান সম্পর্কে আলস্নাহ বলেন, 'তোমরাও তাদেরকে বের করে দাও, যারা তোমাদেরকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে।' (সূরা বাকারা-১৯১) অন্যত্র আলস্নাহ বলেন- আর তোমরা ঘরে প্রবেশ কর দরজা দিয়ে। (সূরা- বাকারা-১৮৯)। সূরা নাবাতে বলা হয়েছে- আমি কি তোমাদের জন্য ভূমিকে বিছানা করিনি? (নাবা-০৬)
ইসলামে শিক্ষার উপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আল-কোরআনের প্রথম ঐশী বাণীই শিক্ষা সংক্রান্ত। বলা হয়েছে, 'পড় তোমার প্রভুর নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। (আলাক-১-২)। সূরা আর-রাহমানের শুরুতে বলেছেন, 'করুণাময় আলস্নাহ শিক্ষা দিয়েছেন কোরআন।' (রহমান-১-২)।
বিশ্বনবী রাসূল করীম (সা.) বলেন, পৃথিবীতে জ্ঞানী ব্যক্তির দৃষ্টান্ত আকাশের তারকার ন্যায় যা পানি ও স্থলভাগকে করে আলোকিত। (মুসনাদে আহমদ)। রাসূল (সা.) অন্যত্র ইরশাদ করেছেন, 'জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক নর-নারীর উপর ফরজ। এভাবে শিক্ষার প্রতি তাগিদ দিয়ে মৌলিক মানবাধিকারের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিষয় জ্ঞান বা শিক্ষার গ্যারান্টি ইসলামে দিয়েছে।'
এদিকে মানুষের রোগ-বালাই এবং এর প্রতিকার উভয়েরই ব্যবস্থা আলস্নাহপাক করেছেন। আল-কোরআনে বলা হয়েছে, 'মধু মলিস্নকা থেকে বিভিন্ন রঙের পানীয় নির্গত হয়, তাতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিকার। (সূরা-নহল-৬৯)। অন্যত্র আলস্নাহপাক বলেন, 'আমি কোরআনে এমন বিষয় নাযিল করি যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মুমিনের জন্য রহমত।' (সূরা-বনি ইসরাইল-৮২)।
মৌলিক অধিকারের পাশাপাশি অন্যান্য অধিকার প্রতিষ্ঠায়ও ইসলাম সুস্পষ্টভাবে দিকনির্দেশনা দিয়েছে। জীবনের নিরাপত্তার অধিকার সম্পর্কে বিদায় হজের ভাষণে আলস্নাহর রাসুল (সা.) দীপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেছেন, 'সাবধান! তোমরা হত্যাকারী হয়ে কাফেরদের দলভুক্ত হয়ে যেও না।' মুসলিম শরীফের একটি হাদীসে তিনি বর্ণনা করেন, 'কোনো মুসলিম ব্যক্তির নিহত হওয়ার তুলনায় সমগ্র পৃথিবীর পতন আলস্নাহর কাছে অতি নগণ্য।'
ইসলাম রাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিকের ইজ্জত ও সম্মানের গ্যারান্টি দিয়েছে। বিদায় হজের ভাষণে আলস্নাহর রাসূল (সা.) দৃঢ় কণ্ঠে ঘোষণা করেন, হে মানবমন্ডলী! তোমাদের জন্য অপরের জান, মাল, ইজ্জত, আব্রম্নর উপর হস্তক্ষেপ হারাম করা হলো।
মুসলমানদের অধিকার সম্পর্কে আল-কোরআনে বলা হয়েছে- সকল মুমিন পরস্পর ভাই ভাই। (হুজরাত-১০)। অন্যত্র বলা হয়েছে- মুমিনদের প্রতি তোমার বিনয় ও নম্রতার ডানা সম্প্রসারিত করো। (আল কোরআন)। রাসুল (সা.) বলেছেন- আলস্নাহতায়ালা এরূপ ব্যক্তির প্রতি অনুগ্রহ করেন না, যে মানুষের প্রতি দয়া প্রদর্শন করে না। নবীজী আরও বলেন- সারা দুনিয়ার মুমিন মুসলমান একই ব্যক্তির ন্যায়, যদি তার চোখে ব্যথা হয়, তার সর্বাঙ্গে উহার ব্যথা অনুভব করে, আবার মাথায় ব্যথা হলে সমস্ত শরীরে উহা অনুভব করে।
ইসলাম অমুসলিমদেরকে যথাযথ নিরাপত্তা ও অধিকার, শিক্ষার অধিকার, মানসম্মানের অধিকার, পরিবার গঠনের অধিকারসহ সকল প্রকার অধিকার নিশ্চিত করেছে। ধর্মীয় অধিকার সম্পর্কে আল-কোরআনে বলা হয়েছে- তোমরা তাদেরকে মন্দ বল না যাদের তারা আরাধনা করে আলস্নাহকে ছেড়ে, তাহলে তারা দৃষ্টতা করে অজ্ঞতাবশতঃ আলস্নাহকে মন্দ বলবে। (সূরা-আনয়াম-১০৭)।
অন্য আয়াতে আলস্নাহপাক বলেন- দ্বীনের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি নেই। (সূরা বাকারা-২৫) হযরত মুহাম্মদ (সা.) অমুসলিমদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। একবার নাজরানের একদল লোক (নাসারা) নবীজীর নিকট মেহমান হিসেবে আগমন করে। রাসূল (সা.) মসজিদে-নববীতে তাদের থাকার ব্যবস্থা করে দেন, তাদের নিয়মানুযায়ী সেখানে উপাসনা করারও অনুমতি দিয়েছিলেন।
ইসলামই একমাত্র জীবন বিধান যে ধর্মে নারীর জীবনের অধিকার, কাজের অধিকার, শিক্ষার অধিকার, ব্যক্তি স্বাধীনতাসহ সকল প্রকার অধিকার নিশ্চিত করেছে। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, স্ত্রীরা হলো তোমাদের পোশাক, আর তোমরা তাদের পোশাক। অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, তাদের অধিকার পুরুষের দায়িত্বে যেভাবে পুরুষের অধিকার তাদের দায়িত্ব। (বাকারা-২২৮)। ন্যায়বিচারের অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও ইসলাম অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এ ক্ষেত্রে মুসলিম-অমুসলিম সবার জন্য সমভাবে প্রযোজ্য ইসলামি আইন। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, 'বল, আমার প্রভু! আমাকে ন্যায়বিচার করার নির্দেশ দিয়েছেন। তোমরা যখন বিচার কর, ন্যায়বিচার কর। তোমাদের মধ্যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আমি আদিষ্ট হয়েছি।' (সূরা শুআরা : আয়াত ১৫)। ইসলামি আইনে শাসকের গুরুত্ব প্রসঙ্গে আলস্নাহর রাসুল (সা.) বলেন, সাত শ্রেণির মানুষ সেদিন আরশে আযীমের নিচে ছায়াপ্রাপ্ত হবে। তন্মধ্যে ন্যায়পরায়ণ শাসক প্রথমেই।