বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিষেধক সৃষ্টি ছাড়া আলস্নাহ রোগ দেননি

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৩ মে ২০২০, ০০:০০

পৃথিবীতে এমন কোনো রোগ নেই, যে রোগের ওষুধ বা প্রতিষেধক সম্পর্কে আলস্নাহ মানুষকে জ্ঞান দান করেননি। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুলস্নাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, 'আলস্নাহ তায়ালা এমন কোনো রোগ অবতীর্ণ করেননি, যার নিরাময়ের উপকরণ তিনি সৃষ্টি করেননি।' (বোখারি : ৫২৭৬)

রাসুলুলস্নাহ (সা.) আরও বলেন, আলস্নাহ তায়ালা রোগ-বালাইয়ের মধ্যেও মানুষের জন্য কল্যাণ রেখেছেন। দুনিয়াতে আলস্নাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন, সবকিছুই মানুষের উপকারার্থে। এ জন্য পানি, বৃক্ষ-লতা, রোদ-বৃষ্টি ও ফল-ফলাদি থেকে শুরু করে সবকিছুর মাঝেই ঔষধি গুণ ক্ষমতা রয়েছে। যখন মানুষের মধ্যে বালা-মুসিবতের আগমন ঘটে, তখন আলস্নাহ তায়ালা বালা-মুসিবতের পাশাপাশি বান্দার জন্য কল্যাণও পাঠিয়ে দেন।

তাই যখনই কোনো রোগব্যাধি আক্রমণ করবে, তখন একজন মুমিন মুসলমানকে কঠিন ইস্পাতের মতো অন্তরে আলস্নাহর রহমতের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রেখে, ধৈর্যের সঙ্গে আলস্নাহর কাছে আরোগ্য লাভের জন্য সাহায্য চাইতে হবে। অতীত জীবনের ভুল-ত্রম্নটির জন্য বেশি বেশি তওবা ইস্তেগফার পড়তে হবে। তাহলে আলস্নাহ অবশ্যই কঠিন রোগ-বিমারের শেফা দান করবেন।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, 'আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে।' (সুরা বাকারা : ১৫৫)। 'আর ভালো এবং মন্দ দ্বারা আমি তোমাদের পরীক্ষা করে থাকি।' (সুরা আম্বিয়া : ৩৫)

হাদিসে বলা হয়েছে, আলস্নাহ তায়ালা মাঝেমধ্যে রোগ-বালাই দিয়ে বান্দার ইমানের দৃঢ়তা পরীক্ষা করে থাকেন। তিনি দেখতে চান, বিপদ-আপদে তাঁর বান্দাদের মধ্যে কে বা কারা তাঁর ওপর অবিচল আস্থা বা বিশ্বাস রেখে ধৈর্যের সঙ্গে সামনের দিকে এগোয়। কেননা রোগ-ব্যাধিতে একমাত্র আরোগ্যদানকারী মহান আলস্নাহ। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, 'যখন আমি অসুস্থ হই তখন তিনিই আমাকে সুস্থতা দান করেন।' (সুরা শুয়ারা : ৮০)

ওষুধকেই মূল আরোগ্যদানকারী মনে করা শিরক। এছাড়া রোগ-ব্যাধিতে আলস্নাহর ফয়সালার উপর সন্তুষ্ট থাকা এবং সবর করা ইমানের দাবি। আলস্নাহ তায়ালা বলেন, 'আর তোমরা ধৈর্য ধরো, নিশ্চয় আলস্নাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।' (সুরা আনফাল :আয়াত ৪৬)

তিনি আরও বলেন, 'ধৈর্যশীলদেরকেই তাদের প্রতিদান পূর্ণরূপে দেওয়া হবে কোনো হিসাব ছাড়াই।' (সুরা জুমার : ১০)

তবে ইসলামে সব ধরনের রোগ-ব্যাধিতে চিকিৎসা গ্রহণের উপরও যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। রাসুলুলস্নাহ সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়া সালস্নাম নিজেও বিভিন্ন রোগ-ব্যাধিতে ওষুধের প্রেসক্রিপশন দিয়েছেন।

হাদিসে বলা হয়েছে, মানুষের ভালো-মন্দ উভয়ের বিষয়ে আলস্নাহ তায়ালা সমভাবে ক্ষমতাবান। আমরা অসুস্থ হলে, তিনিই আমাদের সুস্থতা দান করেন। রোগ-ব্যাধি থেকে আরোগ্য লাভের ক্ষেত্রে চিকিৎসক শুধু চেষ্টা করতে পারেন। মানুষ একে অপরের জন্য কেবল দোয়া করতে পারে। আরোগ্য দানের বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে আলস্নাহ তায়ালার দয়ার ওপর নির্ভর করে। আলস্নাহর সাহায্য বা দয়া ব্যতীত কঠিন রোগ-ব্যাধি থেকে কারও আরোগ্য লাভ করা সম্ভব নয়। তিনি যদি কারও ওপর আজাব গজব দান করেন, কেউ তা প্রতিরোধ করতে পারবে না। সৃষ্টি জগতের সব কিছুই তাঁর ইচ্ছার অধীন।

কোরআনে এরশাদ হয়েছে, 'আর যদি আলস্নাহ তোমাকে কোনো দুর্দশা দ্বারা স্পর্শ করেন, তবে তিনি ছাড়া তা দূরকারী কেউ নেই। আর যদি কোনো কল্যাণ দ্বারা স্পর্শ করেন তবে তিনিই তো সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। আর তিনিই তাঁর বান্দাদের ওপর ক্ষমতাবান।' (সুরা আনআম : ১৭-১৮)

সুরা নমলের ৬২ নম্বর আয়াতে মহান আলস্নাহ বলেছেন, 'কে তিনি যিনি আর্তের ডাক শোনেন, যখন সে তাকে ডাকে এবং কে তার দুঃখ দূর করেন? আর কে তোমাদের পৃথিবীতে (নিজের) প্রতিনিধি করেন? আলস্নাহর সঙ্গে কি আর কোনো উপাস্য আছে? তোমরা সামান্যই উপদেশ গ্রহণ করো।' (২৭ : ৬২)

এ আয়াতে মানুষের জীবনে আলস্নাহর ভূমিকা সম্পর্কে কিছুটা আলোকপাত করা হয়েছে। এখানে বলা হচ্ছে, মানুষ যখন সমস্যায় পড়ে এবং সমাধানের কোনো পথ খুঁজে না পায় তখন সে কার সাহায্য কামনা করতে থাকে? এ অবস্থায় মূর্তি বা অন্যরা কি কোনো কিছু করতে পারে? আসলে যখন তোমরা কোনো কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হও তখন সেই সর্বশক্তিমান আলস্নাহর কাছেই সাহায্য চাইতে থাকো, তোমার অন্তরও যাকে সমস্যার সমাধানকারী হিসেবে চেনে।

সুরা নমলের ৬৩ নম্বর আয়াতে মহান আলস্নাহ বলেছেন, 'আর কে স্থল ও সাগরের অন্ধকারে তোমাদের পথ দেখান এবং কে (বৃষ্টির মতো) অনুগ্রহ পাঠানোর আগেই বাতাসকে সুসংবাদ হিসেবে পাঠান? আলস্নাহর সঙ্গে কি অন্য কোনো উপাস্য আছে?'

এ আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো, প্রকৃতিতে যে শৃঙ্খলা ও সমন্বয় লক্ষ্য করা যায়, তা মহাবিশ্ব ব্যবস্থাপনায় আলস্নাহর সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনারই প্রমাণ বহন করে। এটা স্পষ্ট, সৃষ্টিকর্তা ছাড়া আর কেউই এমন শৃঙ্খলা ও সমন্বয় সাধন করার ক্ষমতা রাখে না। আলস্নাহ তায়ালা সবকিছুর ঊর্ধ্বে। এমন কেউ বা এমন কোনো কিছু নেই যা আলস্নাহর সমতুল্য হতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<99329 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1