মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মাস্ক-গস্নাভসে বাড়ছে পস্নাস্টিক বর্জ্য

ফয়সাল খান
  ১৩ মে ২০২০, ০০:০০
ব্যবহৃত মাস্কসহ বিভিন্ন বর্জ্য পানিতে

করোনাভাইরাসের প্রকোপ থেকে সুরক্ষার জন্য মাস্ক, হ্যান্ডগস্নাভস, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার অনেক বেড়েছে। ফলে একবার ব্যবহারযোগ্য পস্নাস্টিক পণ্যের ক্রেতা ও ব্যবহারকারীর সংখ্যাও কয়েকগুণ বেড়ে গেছে।

করোনা সংক্রমণের পর ২৫ মার্চ থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত এক মাসে সারাদেশে ১৪ হাজার ১৬৫ টন স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ পস্নাস্টিক বর্জ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব বর্জ্যের বেশিরভাগই হচ্ছে, বাসাবাড়ি ও বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে একবার ব্যবহারযোগ্য পস্নাস্টিকের তৈরি সার্জিক্যাল ফেসমাস্ক, সার্জিক্যাল ও পস্নাস্টিক হ্যান্ডগস্নাভস, পস্নাস্টিক স্যানিটাইজারের বোতল ও পলিথিন ব্যাগ। এসব বর্জ্যের বড় অংশ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ মিলিয়ে এক মাসে পস্নাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন হয়েছে ৩ হাজার ৭৬ টন।

এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল অ্যান্ড সোশ্যাল অর্গানাইজেশন (এসডো) নামের একটি বেসরকারি সংস্থার জরিপে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

এসডোর গবেষণা অনুযায়ী, এসব বর্জ্যের প্রায় ১২ দশমিক ৭ শতাংশ সার্জিক্যাল ফেসমাস্ক, ২৪ দশমিক ২ শতাংশ পলিথিনের তৈরি সাধারণ হ্যান্ড গস্নাভস, ২২ দশমিক ৬ শতাংশ সার্জিক্যাল হ্যান্ড গস্নাভস এবং ৪০ দশমিক ৮ শতাংশ খাদ্যদ্রব্য বহনের একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিনের বাজারের ব্যাগ।

জরিপে আরও বলা হয়, চলমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি পস্নাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়েছে পলিথিনের শপিংব্যাগ থেকে। এক মাসেই পলিথিনের ব্যাগ থেকে উৎপন্ন হয়েছে ৫ হাজার ৭শ' ৯৬ কোটি টন পস্নাস্টিক বর্জ্য। বাসাবাড়ি ও বাজারে পলিথিনের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার হচ্ছে ত্রাণ বিতরণ এবং দোকানের তৈরি খাবার বাড়িতে সরবরাহের ক্ষেত্রে মোড়ক হিসেবেও। শুধু ঢাকাতেই বাসাবাড়ি ও কেনাকাটায় ব্যবহৃত পলিথিনের ব্যাগ এবং দুস্থদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণে ব্যবহৃত পলিথিনের প্যাকেট থেকে প্রায় ৪৪৩ টন পস্নাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

লকডাউনের এক মাসে সারাদেশে প্রায় সাড়ে ৪৫ কোটি সার্জিক্যাল ফেসমাস্ক ব্যবহার করা হয়েছে, যা থেকে অন্তত ১৫৯২ টন পস্নাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়েছে। পলিথিনের তৈরি হ্যান্ডগস্নাভস ও সার্জিকাল হ্যান্ডগস্নাভস বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। শহরাঞ্চলে বসবাসকারী এবং রাস্তায় বিভিন্ন পণ্যের ব্যবসায়ী ও দোকানদারদের মধ্যে পলিথিনের পাতলা হ্যান্ডগস্নাসের ব্যবহার বেশি। শহরবাসী ও দোকানদাররাই পলিথিনের তৈরি পাতলা হ্যান্ডগস্নাভস ব্যবহারকারীদের মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক। তারা গত এক মাসে ব্যবহার করেছে ১২১ কোটি ৬০ লাখ হ্যান্ডগস্নাভস, যে পস্নাস্টিক বর্জ্যের ওজন প্রায় তিন হাজার ৩৯ টন।

কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য কর্মীরা, যারা করোনা ভাইরাস আক্রান্ত অথবা আক্রান্ত হয়েছেন, সন্দেহ করা হচ্ছে রোগীদের সংস্পর্শে নিয়মিত আসছেন, হয়েছেন বলে সন্দেহভাজন তাদেরও নিয়মিতই একবার ব্যবহারযোগ্য ফেসমাস্ক, হ্যান্ডগস্নাভসসহ পিপিই ব্যবহার করতে হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য হাসপাতালে সতর্কতা হিসেবে চিকিৎসক ও নার্সরা ফেসমাস্ক, হ্যান্ডগস্নাভস প্রভৃতি ব্যবহার করছেন। শুধু চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিতদের ব্যবহৃত ফেসমাস্ক ও হ্যান্ডগস্নাভস থেকেই এক মাসে অন্তত ২৫০ টন পস্নাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়ে থাকতে পারে। এছাড়া কোভিড-১৯ শনাক্তকরণে নিয়োজিত পরীক্ষাগারগুলো থেকে আরও ১ দশমিক ১ টন একবার ব্যবহারযোগ্য পস্নাস্টিক বর্জ্য জমা হচ্ছে।

যখন স্বল্প সময়ে অনেক বেশি পরিমাণ চিকিৎসাসেবার বর্জ্য জমা হয় এবং তা অব্যবহৃত থাকে, তখন সেসব বর্জ্য ভাগাড়ে পাঠানো অথবা পুড়িয়ে ফেলার আগে যথোপযুক্তভাবে পৃথক করা সম্ভব হয় না। এসব ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ গাছপালা শুষে নেয় এবং পরে এসব গাছপালা মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীখাদ্য হিসেবে অথবা বিভিন্নভাবে ব্যবহার করার ফলে তাদের নানা ধরনের রোগ, অথবা মৃতু্যও হতে পারে। যথাযথভাবে বর্জ্য নিষ্কাশন না করা হলে তা সামগ্রিক খাদ্য সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করতে পারে, কারণ বিষাক্ত রাসায়নিক গাছপালার বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করে ফল ও সবজির উৎপাদন কমিয়ে দেয়।

এসব বর্জ্যের যথাযথ ব্যবস্থাপনা না করায় অ্যাজমা, ফুসফুসের রোগ, হৃদরোগে আগাম মৃতু্য, শ্বাসকষ্ট, মাথাব্যথা, ঝাপসা লাগা, চর্মরোগ, ফুসফুসের ক্যান্সার, কিডনি ও লিভারের সমস্যা, বস্নাডপ্রেশার, শিশুদের কম বুদ্ধি হওয়ার মতো সমস্যার তৈরি হতে পারে বলে মনে করছে সংস্থাটি।

জরিপ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সার্জিক্যাল মাস্ক, হ্যান্ড গস্নাভস সবকিছু বর্জ্যের সঙ্গে একত্রে মিশে যাচ্ছে। ফলে সেটা যেমন পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হচ্ছে, সেই সঙ্গে যারা এসব বর্জ্য সংগ্রহ করছেন তাদের স্বাস্থ্যের জন্যও মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে। কিন্তু এই বিষয়ে কোনো নজরদারি, নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। তাদের কোনো রকম স্বাস্থ্য সতর্কতার বালাই নেই। পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা আক্রান্ত হয়ে পড়লে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বড় একটি সংকট তৈরি হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এসডোর মহাসচিব ড. শাহরিয়ার রহমান যায়যায়দিনকে বলেন, দেশের ৬১টি জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ৫৭১ জন মানুষের সঙ্গে কথা বলে জরিপটি তৈরি করা হয়েছে। কভিড নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। এই পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষ থেকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গাইড লাইন তৈরি করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, কোভিড-১৯ থেকে সুরক্ষার জন্য ব্যবহৃত পস্নাসিকের বর্জ্য যেখানে সেখানে ফেলা হচ্ছে। এক সময় সেটা আমাদের খাদ্য চক্রে মিশে যাচ্ছে। কারণ ক্ষতিকর রাসায়নিক গাছপালা শুষে নেয়, পরবর্তীতে যা মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণী খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। ফলে এখনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে এই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।

তিনি আরও বলেন, পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা আক্রান্ত হয়ে পড়লে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বড় একটি সংকট তৈরি হবে। কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগের পাশাপাশি পরিচ্ছন্ন কর্মীদের নিয়ে ভাবা উচিত।

এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে বেশ কয়েকটি সুপারিশ করেছে এই বেসরকারি সংস্থাটি। তার মধ্যে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এমনভাবে করতে হবে যাতে সেটি জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর না হয়। মেডিকেল বর্জ্য সংগ্রহ, পরিবহণ বা ফেলার ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে দূষণ বা সংক্রমণ না হয়। পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের নিরাপত্তায় সব রকমের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিশ্চিত করতে হবে। জনসাধারণকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে সচেতন করতে হবে। আইসোলেশনে থাকা ব্যক্তিদের ব্যবহার করা জিনিসপত্র দুটা পস্নাস্টিক ব্যাগের মধ্যে ভরে ফেলতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<99327 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1