শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাস্থ্যসেবাদাতাদের প্রতি বৈষম্য চ্যালেঞ্জের মুখে করোনা চিকিৎসা

জাহিদ হাসান
  ১৩ মে ২০২০, ০০:০০
করোনায় আক্রান্ত কি না জানতে তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে এক যুবকের -ফাইল ছবি

চিকিৎসা পেশার সর্বস্তরের সেবাতাদের কাজে লাগাতে না পারলে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে দেশের স্বাস্থ্যখাত। তাই মহামারি করোনাভাইরাসসহ সব ধরনের রোগব্যাধির প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় এই পেশার সঙ্গে জড়িত দক্ষ জনবলকে কাজে লাগাতে হবে। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

চিকিৎসাসেবা পেশার সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, প্রায় ৫ মাস ধরে বিশ্বব্যাপী তান্ডব চালানো করোনাভাইরাসের প্রকোপ মোকাবিলায় যেখানে উন্নত দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে আমাদের ১৭ কোটির মতো জনবহুল মানুষের দেশে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসটি প্রতিরোধে সমন্বিত ভূমিকা রাখতে চাইলেও অনেক চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসাকেন্দ্রের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পরামর্শ ও সমন্বিত পদ্ধতিতে সেবাদানের সুযোগ দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।

জানা যায় দেশের অন্যতম চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসকদের করোনাভাইরাস তথা কো?ভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে গণমাধ্যমে মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নো?টিশ দিয়ে ?সতর্ক করেছে।

এছাড়া করোনাভাইরাস শনাক্তে সম্প্রতি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত জিআর কোভিড-১৯র্ যাপিড ডট বোল্ট ইমউনোস্যাসি কিটের পরীক্ষার জন্য ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদন চাওয়া হলে কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষার নামে কর্তৃপক্ষ বিভিন্নভাবে কালক্ষেপণ করছে। যদিও গণস্বাস্থ্যের উদ্ভাবিত কিট নিতে বিভিন্ন দেশ আগ্রহ দেখাচ্ছে।

এর আগে হাসপাতালে সরকারিভাবে সরবরাহকৃত সুরক্ষা সরঞ্জামের (পিপিই) মান নিয়ে প্রশ্ন তোলায় মুগদা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালককে ওএস?ডি এবং আরেকজন চিকিৎসককে বদলির আদেশ দেওয়া হয়েছে। কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতা?লে কো?ভিড-১৯ আক্রান্তদের সেবায় নিয়োজিত নার্স?রা খাদ্য ব্যবস্থাপনা ও আবাসন সংকট নি?য়ে কথা বলায় প্রজ্ঞাপন জারি করে তাদের নি?ষেধ করা হয়েছে। আর চলমান পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যসেবাদাতাদের প্রতি এমন বৈষম্যমূলক আচরণে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে।

বিষয়টি সম্পর্কে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (সংক্রামক ব্যাধি) অধ্যাপক ডা. বে-নজীর আহম্মেদ যায়যায়দিনকে বলেন, বিএসএমএমইউসহ অন্যান্য চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসক-নার্সদের ব্যাপারে যে বিধি-নিষেধ দেওয়া হয়েছে সেটি প্রতিষ্ঠানের ভালোর স্বার্থে হতে পারে। তবে পজিটিভ বিষয়ে সবারই মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকা দরকার বলে তিনি মন্তব্য করেন।

একইভাবে করোনাভাইরাস শনাক্তে গণস্বাস্থ্যের কিট অনুমোদনের ব্যাপারে বেশ কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি পিসিআর ল্যাবরেটরিতে কর্মরত ভাইরোলজিস্ট ও মাইক্রোবায়োলজিস্ট যায়যায়দিনকে বলেন, কোভিড-১৯ টেস্টিংয়ের জন্যর্ যাপিড এন্টি?বডি টেস্টিং কিট তৈরিতে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র যে উদ্যোগ নিয়েছে তা প্রশংসার দাবি রাখে। সঠিক প্রক্রিয়ায় কিট তৈরি করে কাজে লাগাতে পারলে চলমান জনস্বাস্থ্য সংকট মোকাবিলা সহজ হবে। এজন্য অনুমোদন প্রক্রিয়া সম্পন্নের জন্য দেশের সরকারি ঔষধ প্রশাসন ও যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাই সংশ্লিষ্টদের উচিত হবে গড়িমসি না করে কিভাবে দ্রম্নত কাজে লাগানো যায় সেটি নিশ্চিত করা।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায় বিভিন্ন হাসপাতালে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ভেন্টিলেটর মেশিনসহ অন্যান্য মেডিকেল সরঞ্জামগুলো সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রমে মেরামত করতে বেকার ই?লেক?ট্রো মেডিকেল ইঞ্জি?নিয়াররা প্রায় এক মাস পূর্বে স্বাস্থ্য অধিদপ্ত?রে চি?ঠি দিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করলেও জবাব দেওয়া হয়?নি। একইভাবে করোনার উপসর্গ হিসেবে চিহ্নিত ঠান্ডা-কাশি, সর্দি, গলাব্যথার মতো চিকিৎসা দিতে সরকারের কাছে অনুমতি চেয়ে উচ্চ ডিগ্রিধারী ২ হাজার হো?মিও চিকিৎসক ক?রোনা আক্রান্তদের সেবায় এ?গি?য়ে আস?তে চাইলে তাদেরও কোনো নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে না।

অন্যদিকে করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ ও শনাক্তের অন্যতম জনবল মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, প্যাথলজিস্ট ও মাইক্রোবায়োলজিস্ট ঘাটতি পূরণ না করে পিএস?সি কর্তৃক নি?য়োগ পরীক্ষায় বাদ পড়া চিকিৎসক-নার্সদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া জ্যামিতিক হারে ছড়ানো করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মতো সংকটময় মুহূর্তে বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান য?শোরের আদ?-দ্বীন হাসপাতা?লে স্বাস্থ্যকর্মী ছাঁটাই ছাড়াও চিকিৎসক-নার্সদের বেতন-ভাতা অর্ধেক করা হয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক?রোনা রোগীদের সেবার বিনিময়ে বেসরকারি ইমপালস হাসপাতালের নার্সরা বেশি বেতন চাওয়ায় কর্তৃপক্ষ তা?দের চাকরি ও হো?স্টেল ছেড়ে চ?লে যাওয়ার নি?র্দেশ দিয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করছেন। চিকিৎসক-নার্স, মেডিকেল টেকনোলজিস্টসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যসহকারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণে সব ধরনের রোগ প্রতিরোধসহ চলমান করোনাভাইরাস মোকাবিলা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। তাই সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালেই চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফ?দের সমন্বয়হীনতা ও ঘাটতি পূরণে দক্ষ জনবলদের সুষম পদ্ধতিতে কাজে লাগাতে হবে।

অধ্যাপক বে-নজীর আহম্মেদ আরও বলেন, উপজেলা পর্যায়ে প্রতিটা সররকারি হাসপাতালে গড়ে ২টি, জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে ৪ থেকে ৫টি ও মেডিকেল কলেজগুলোতে আনুপাতিক হারে মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের পদ রয়েছে। তবে সমস্যা হচ্ছে অনেকে অবসরে গিয়েছেন ও দীর্ঘদিন নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে ভাইরাস পরীক্ষার ৩৩টি ল্যাবে এই সংকট রয়েছে। যেহেতু নিয়োগদান দীর্ঘ প্রক্রিয়া, সুতরাং তাৎক্ষণিক ঘাটতি পূরণে স্বল্প মেয়াদে নিয়োগ দিয়ে সংকট মোকাবিলা করা জরুরি। এজন্য বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকের ল্যাবরেটরিগুলোকে কাজে লাগানো যেতে পারে। সর্বোপরি সঠিক পরিকল্পনা মাধ্যমে দ্রম্নত সমাধানের ব্যাপারে ভাবতে হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য ও চিকিৎসা আন্দোলনের নেতা অধ্যাপক ডা. রশীদ-ই মাহবুব যায়যায়দিনকে বলেন, যেটি নীতিগতভাবে গ্রহণযোগ্য সরকার সেটির প্রতি আগ্রহ দেখাবে। কারণ বিষয়গুলোতে একটি আইনগত বৈধতা আছে, যা নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে চলে। সুতরাং যেসব বিষয়ে সমস্যা তৈরি হচ্ছে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে এমন অভিযোগগুলোর সুরাহা করতে হবে। এতে জনগণের মধ্যকার বিভ্রান্তি দূর হবে। পাশাপাশি চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে যেসব প্রতিষ্ঠানে কর্মী জটিলতা তৈরি হচ্ছে সরকারের নজরদারি বৃদ্ধির মাধ্যমে সে সমস্যার সমাধান করতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<99324 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1