শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

উপসর্গ নিয়ে সাংবাদিকসহ ৮ জনের মৃতু্য

যাযাদি ডেস্ক
  ০৯ মে ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ০৯ মে ২০২০, ১০:৩৬

করোনাভাইরাস সংক্রমণের উপসর্গ নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকার একজন সংবাদকর্মীর মৃতু্য হয়েছে। তার নাম আসলাম রহমান (৪২)। তিনি ভোরের কাগজ পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার ও বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক ছিলেন। ভোরের কাগজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক কামরুজ্জামান খান বৃহস্পতিবার রাতে বলেন, আসলাম রহমান স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে রাজধানীর শান্তিবাগে থাকতেন। এক সপ্তাহ আগে আসলামের জ্বর, সর্দি ও কাশি দেখা দেয়। গত সোমবার তিনি মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা করান। গত বুধবার রাতে তার পরীক্ষার ফল নেগেটিভ আসে। কিন্তু বুধবার রাতে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। বৃহস্পতিবার রাতে শান্তিবাগের বাসায় অচেতন হয়ে পড়লে তাকে প্রথমে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে রাত পৌনে ১১টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আমাদের চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, নিউমোনিয়া, জ্বর ও ফুসফুসের জটিলতায় রাজধানীর নটর ডেম কলেজের শিক্ষক নিখিলেশ ঘোষের (৫০) মৃতু্য হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চাঁদপুর থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃতু্য হয়। নিখিলেশ ঘোষ নটর ডেম কলেজে বাংলা পড়াতেন। চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. সুজাউদ্দুলস্নাহ রুবেল জানান, তিনি নিউমোনিয়া ও ফুসফুসের জটিলতায় ভুগছিলেন। পরিস্থিতির অবনতি হলে বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে নিখিলেশ ঘোষকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্বজনরা। তিনি আরও বলেন, নিখিলেশ ঘোষের অবস্থা বিবেচনা করে উন্নত চিকিৎসার জন্য আমরা তাকে তাৎক্ষণিক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করি। পরে ঢামেকে নেওয়ার পথে সোনারগাঁর কাছে তার মৃতু্য হয়। বরিশাল অফিস জানায়, বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আরও এক রোগীর মৃতু্য হয়েছে। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় এই বিভাগে নতুন করে কোনো করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি। এক মাসে এটাই প্রথম ঘটনা। শুক্রবার হাসপাতালের পরিচালক বাকির হোসেন ওই ব্যক্তির মারা যাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। হাসপাতাল সূত্র জানায়, বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার বাইশারী গ্রামের ৫০ বছর বয়সি ওই ব্যক্তি একজন মুদি দোকানদার। তিনি বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি হন। বেলা ১টায় তিনি মারা যান। বৃহস্পতিবার রাতেই তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের ল্যাবে পাঠানো হয়। এ নিয়ে গত ৯ দিনে হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ১০ জনের মৃতু্য হলো। এর মধ্যে একজনের করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) শনাক্ত হয়। বাকিরা করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মারা যান। সিলেট অফিস জানায়, সিলেটে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসাকেন্দ্র শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের আইসোলেশন সেন্টারে শুক্রবার আধা ঘণ্টার ব্যবধানে দুজনের মৃতু্য হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন নারী (৩০) ও একজন পুরুষ (৫৩)। মারা যাওয়া নারী সিলেট নগরের দাড়িয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও অন্যজন সিলেটের বিশ্বনাথের বাসিন্দা ছিলেন। শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সুশান্ত কুমার মহাপাত্র বলেন, মারা যাওয়া দুজনের কেউই করোনা পজিটিভ হিসেবে নয়, সন্দেহভাজন হিসেবে ভর্তি হয়েছিলেন। তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষার পর তারা করোনা পজিটিভ ছিল কি না, জানা যাবে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিকালে সিলেটের বিশ্বনাথ থেকে এক ব্যক্তি শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হন। শুক্রবার বেলা ১১টায় জ্বর, সর্দি ও কাশি নিয়ে সিলেট নগরের এক নারী হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের হাসপাতালের আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। বেলা ২টায় নারীটির ও আড়াইটার দিকে পুরুষটির মৃতু্য হয়। আমাদের স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া জানায়, জ্বর, শ্বাসকষ্ট, পাতলা পায়খানা উপসর্গ নিয়ে বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে এক রোগী মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ৯টায় তিনি আইসোলেশন ওয়ার্ডে মারা যান। মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) শফিক আমিন এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। মারা যাওয়া ওই ব্যক্তির (৫০) বাড়ি বগুড়ার সোনাতলা উপজেলায়। তিনি পেশায় একজন অটোরিকশাচালক। শফিক আমিন বলেন, জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও পাতলা পায়খানা নিয়ে ওই ব?্যক্তি বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছিলেন। তিনি ১০ দিন ধরে জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও পাতলা পায়খানায় ভুগছিলেন। তার পরিবারের কেউ ঢাকাফেরত ছিলেন না। তবে অটোরিকশাচালক হওয়ার কারণে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে এসে থাকতে পারেন তিনি। শফিক আমিন জানান, ওই ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে পাঠানো হচ্ছে। জয়পুরহাট প্রতিনিধি জানান, জয়পুরহাটে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ ফেরত এক পোশাককর্মী মারা গেছেন। ৬০ বছর বয়সি এই ব্যক্তির বাড়ি জেলার পাঁচবিবি উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের রাইগ্রামে। জেলার সিভিল সার্জন দপ্তরের স্বাস্থ্যকর্মী শ্যামল কুমার জানান, বৃহস্পতিবার রাতে এই ব্যক্তি মারা যান। খবর পেয়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা গিয়ে পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করেন। পাঁচবিবি উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হবিবর রহমান বলেন, এই ব্যক্তি নারায়ণগঞ্জে পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। তিনি গত মঙ্গলবার জ্বর ও সর্দি-কাশি নিয়ে সস্ত্রীক বাড়ি এলে গ্রামবাসী বাধা দেয়। পরে তিনি পাশের মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের বড়পুকরা গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে আশ্রয় নেন। খবর ছড়িয়ে পড়লে সেখানেও গ্রামবাসী তাদের বের করে দেয়। পরে তাদের স্কুলঘরে রাখা হয়েছিল। আমাদের কুমিলস্না প্রতিনিধি জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কুমিলস্নার এক মুদি ব্যবসায়ীকে ঢাকায় নেওয়ার পথে অ্যাম্বুলেন্সে তার মৃতু্য হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় ঢাকায় নেওয়ার পথে চান্দিনা এলাকায় তিনি মারা যান। দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আহম্মদ কবীর এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। মারা যাওয়া ব্যক্তির নাম জামাল হাজারী (৪৫)। তিনি কুমিলস্নার দেবীদ্বার পৌরসভার চাঁপা নগর এলাকার বাসিন্দা। এ নিয়ে দেবীদ্বার উপজেলার চারজন ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। জামাল হাজারীর বোনের ছেলে মো. বাছির আহমেদ বলেন, 'মামার (জামাল হাজারী) ৫ মে থেকে জ্বর, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের নমুনা সংগ্রহকারীরা তার নমুনা সংগ্রহ করেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। এরপর বিকালে তাকে কুমিলস্না শহরে নেওয়ার জন্য রওনা হই। কুমিলস্না যাওয়ার পথেই খবর পাই মামার করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এরপর তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়। পরে রাত ৯টায় তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকার দিকে রওনা হই। চান্দিনার কাছে পৌঁছালে অ্যাম্বুলেন্সেই তিনি মারা যান।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে