বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

করোনায় স্বামীর মৃতু্যর পর কোয়ারেন্টিনে বৃদ্ধার একাকী জীবন

যাযাদি রিপোর্ট
  ৩০ মার্চ ২০২০, ০০:০০

বাহাত্তর বছর বয়সি সাবেক স্কুল শিক্ষিকার দিন আর কাটে না। রাজধানীর পূর্বাঞ্চলীয় এলাকার চারতলা বাড়িটায় বুড়ো-বুড়ির দিন কাটছিল ভালোই। মাঝে মাঝে আলাদা থাকতে হয়েছে, তাও অসুস্থতাজনিত কারণে হাসপাতালে গেলে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ তার ৫৩ বছরের সংসার লন্ডভন্ড করে দিয়েছে।

কথা হচ্ছিল বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে মৃত সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার স্ত্রীর সঙ্গে। রোববার তিনি বলেন, শারীরিক নানা জটিলতায় তিনি একরকম শয্যাশায়ী। আগেও ঘরের বাইরে যেতে পারতেন না, এখনো যান না। তবে সেই সময়ের সঙ্গে এই সময়ের দুস্তর ফারাক। আগে অনেকে দেখতে আসতেন। দিন কাটত ধর্মকর্ম করে, অতিথি অভ্যাগতদের সঙ্গে কথা বলে আর আইপ্যাডে প্রবাসী সন্তান ও নাতি-নাতনিদের সঙ্গে কথা বলে। এখন আর কেউ আসেনি সংক্রমণের আশঙ্কায়। তিনিও চান না? তার কছে এসে কেউ বিপদে পড়ুক। তিনি আছেন সেলফ কোয়ারেন্টিনে। ফ্রিজে মাছ-মাংস আছে যথেষ্ট, চাল-ডালেরও অভাব নেই। কিন্তু রাঁধবার মানুষ নেই। করোনাভাইরাসে স্বামীর মৃতু্য, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, পুলিশের লোকজনের তোড়জোড়ের মধ্যেই গৃহকর্মীও পালিয়ে গেছেন। এখন এক ভাগনে টুকটাক যা রাঁধেন তা-ই খান, কখনো কখনো এক প্রতিবেশী, কখনো কাছে থাকা বোন খাবার পাঠান। সেগুলো খান।

মানুষের মধ্যে ভীতি এখন মারাত্মক, এবং সেটাই স্বাভাবিক বলে মনে করেন সাবেক এই স্কুল শিক্ষিকা। শুনেছেন তারা নজরদারিতে আছেন।

ঠিক কি হয়েছিল স্বামীর? গত ১৮ মার্চ সকালে মৃতু্যর পর কর্তৃপক্ষ জানায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন তার স্বামী। তার প্রবাসী দুই মেয়ে ঢাকায় এসেছিলেন দশ দিনের ছুটিতে ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে। হৃদ্‌রোগে ভোগা স্বামীর বুকে ব্যথা হচ্ছিল প্রায়ই। বাবার কি হয়, না হয় এই ভেবেই চলে এসেছিলেন তারা। ছোট মেয়েটার ধুলোয় অ্যালার্জি। প্রতিবারই দেশে এসে হাঁচি-কাশিতে ভোগেন। এবারও অন্য কিছু মনে হয়নি। দিন দুয়েক পর আর হাঁচি-কাশিও ছিল না।

তিনি বলছিলেন, তার স্বামীও জ্বরে ভুগছিলেন। সেরেও উঠেছিলেন। বুকে ব্যথাটা শুধু যাচ্ছিল না। মেয়েরা বেড়িয়ে যাওয়ার পর হাসপাতালে যাবেন বলে ঠিক করে রেখেছিলেন। ৮ মার্চ মেয়েরা যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যায়। পরদিনই রাজধানীর একটি ব্যয়বহুল বেসরকারি হাসপাতালে যান তিনি। ওই হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ছিলেন। সেখান থেকে অবস্থার উন্নতি হলে কেবিনে নেওয়া হয়। বাসায় ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। ফোন করে ঘরদোর ঝাড়পোঁছ করিয়ে রাখতে বলেছিলেন। মৃতু্যর দিন দুয়েক আগে আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েন। আইসিইউতে ছিলেন। নানার শরীর খারাপ শুনে ওই সময়েই নাতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে চলে আসেন। দুদিন বাদে মারা যান তার স্বামী। মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সে খবর জানতেও পারেননি।

সংক্রমণটা হলো কি করে? সাবেক স্কুল শিক্ষিকা বলেন, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন তার ছোটমেয়ে হয়তো ভাইরাসের বাহক ছিল। কিন্তু মেয়েরা যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে গেছে, সুস্থ আছে। নাতিও দুদিন ঢাকায় থেকে নানা যেদিন মারা যান সেদিন ফিরে গেছে। তিনি বা তার ভাগনেও আক্রান্ত নন।

মৃতু্যর জন্য তারা প্রস্তুত ছিলেন। আফসোস মৃতু্যর পর ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান হয়নি কিছুই। মৃতদেহ দাফন নিয়েও কিছু জটিলতা দেখা দিয়েছিল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট আর তার নিজের এক ভাগনে ও এক ভাইপো জানাজায় হাজির ছিলেন।

এখন প্রশ্ন উঠছে যে হাসপাতালে প্রায় দশ দিন ভর্তি ছিলেন এই ব্যক্তি, সেই হাসপাতালের চিকিৎসক বা চিকিৎসা সহকারীরা কোয়ারেন্টিনে গেছেন? যে গৃহকর্মী পরীক্ষা এড়াতে পালিয়ে গেলেন তিনি এখন কোথায়? তিনি কি কাউকে সংক্রমিত করলেন?

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই হাসপাতালের কয়েকজন কর্মীকে বসুন্ধরার একটি ভবনে রাখা হয়েছিল, গোপনে। ভবনের একটি ফ্লোর হাসপাতালের বিদেশি চিকিৎসকদের জন্য ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। ভবনের অন্য সদস্যরা আপত্তি করায় তাদের সরিয়ে নেওয়া হয়। আর গৃহকর্মীর খোঁজ নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<94640 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1