শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মহান স্বাধীনতা দিবস আজ

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৬ মার্চ ২০২০, ০০:০০

আজ ২৬শে মার্চ। বাঙালির শৃঙ্খল মুক্তির দিন। বিশ্বের বুকে লাল-সবুজের পতাকা ওড়ানোর দিন। বাঙালি জাতির গৌরবদীপ্ত মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস আজ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হৃদয়ে ধারণ করে জাতি আজ বিনম্র শ্রদ্ধা ও গভীর কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করবে স্বাধীনতার জন্য আত্মদানকারী দেশের বীর সন্তানদের। নৃশংস গণহত্যার শিকার লাখো সাধারণ মানুষ এবং সম্ভ্রম হারানো মা-বোনের প্রতি জানাবে মনের গহিনের আকুণ্ঠ শ্রদ্ধা।

তবে স্বাধীনতা-পরবর্তীতে এবারই প্রথম এ দিবসটি উপলক্ষে দেশের কোথাও কোনো আয়োজন থাকছে না। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মরণব্যাধি করোনাভাইরাসের কারণে স্বাধীনতা দিবসের রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা স্থগিত করা হয়েছে। এমনকি সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও বঙ্গভবনে স্বাধীনতা দিবসের সব অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে।

২৬ মার্চ দিনটি জাতির জীবনে একই সঙ্গে আনন্দ ও বেদনার। স্বাধিকারের দাবিতে জেগে ওঠা নিরীহ বাঙালির প্রতি ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি

হানাদার সেনারা যে বর্বর গণহত্যা চালিয়েছিল, সেই মৃতু্যর বিভীষিকা থেকে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল

দেশের মুক্তিপাগল বীর সন্তানরা। ২৫ মার্চের গভীর রাতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগেই বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তার ডাকে সাড়া দিয়ে প্রশিক্ষণহীন নিরস্ত্র বাঙালি যেভাবে একটি সুশৃঙ্খল অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল, পৃথিবীর ইতিহাসে তেমন সংগ্রামের দৃষ্টান্ত বিরল।

হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষিত হয়েছিল। ইতিহাসের পৃষ্ঠা রক্তে রাঙিয়ে, আত্মত্যাগের অতুলনীয় দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করে একাত্তরের এই দিন যে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এ দেশের মানুষ, দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন তার চূড়ান্ত পরিণতি। রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের সূচনার সেই গৌরব ও অহঙ্কারের দিন আজ।

১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে বাংলার মানুষের ভোটে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি করতে থাকে। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আলোচনার আড়ালে সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে পাকিস্তানের সামরিক জান্তা। নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পরও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ক্ষমতা হস্তান্তরে অনীহার কারণে বাংলার মুক্তিকামী মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এমনই এক প্রেক্ষাপটে ২৫ মার্চ কালোরাত্রিতে পাক হানাদার বাহিনী ঢাকাসহ সারাদেশে 'অপারেশন সার্চলাইট' নামে ইতিহাসের বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।

মধ্যরাতেই অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বরের বাড়ি (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু ভবন) থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইপিআরের ওয়্যারলেসে স্বাধীনতার ডাক দেন। ইংরেজিতে ঘোষণা করা সেই স্বাধীনতা ঘোষণার বাংলা অনুবাদ হলো, 'এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। বাংলাদেশের জনগণ তোমরা যে যেখানেই আছ এবং যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শেষ পর্যন্ত দখলদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য আমি তোমাদের আহ্বান জানাচ্ছি। পাকিস্তান দখলদার বাহিনীর শেষ সৈনিকটিকে বাংলাদেশের মাটি থেকে বিতাড়িত করে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তোমাদের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে।' একই সঙ্গে তিনি বাংলায় যে বার্তা পাঠান সেটি হলো- 'পাকিস্তান সেনাবাহিনী অতর্কিতভাবে পিলখানা ইপিআর ঘাঁটি, রাজারবাগ পুলিশ লাইন আক্রমণ করেছে এবং শহরের রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ চলছে, আমি বিশ্বের জাতিসমূহের কাছে সাহায্যের আবেদন করেছি। সর্বশক্তিমান আলস্নাহর নামে আপনাদের কাছে আমার আবেদন ও আদেশ, দেশকে স্বাধীন করার জন্য শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যান। আপনাদের পাশে এসে যুদ্ধ করার জন্য পুলিশ, ইপিআর, বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও আনসারদের সাহায্য চান। কোনো আপস নেই, জয় আমাদের হবেই। আমাদের পবিত্র মাতৃভূমি থেকে শেষ শত্রম্ন বিতাড়িত করুন। সব আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এবং অন্যান্য দেশপ্রেমিক ও স্বাধীনতাপ্রিয় লোকদের কাছে এ সংবাদ পৌঁছে দিন। আলস্নাহ আমাদের মঙ্গল করুন। জয় বাংলা।'

চট্টগ্রামে অবস্থানকারী আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক জহুর আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার বাণী সেই রাতেই সাইক্লোস্টাইল করে শহরবাসীর মধ্যে বিলির ব্যবস্থা করেন। পরে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা সংক্রান্ত বিবৃতিটি সর্বপ্রথম পাঠ করেন আওয়ামী লীগ নেতা এমএ হান্নান। এরপর ২৭ মার্চ তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে যে ঘোষণা পাঠ করা হয় সেখানে উলেস্নখ ছিল বঙ্গবন্ধুর আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতার ঘোষণার কপি ইংরেজি ও বাংলায় ছাপিয়ে হ্যান্ডবিল আকারে চট্টগ্রামে বিলি করা হয়। এই ঘোষণা টেলিগ্রাম, টেলিপ্রিন্টার ও তৎকালীন ইপিআর'র ওয়ারলেসের মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও এই ঘোষণা প্রচারিত হয়। বঙ্গবন্ধুর এই স্বাধীনতার ঘোষণার ভিত্তিতেই ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<94175 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1