শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
করোনাভাইরাস

চাহিদা বেড়েছে সর্দি-কাশির ওষুধের

জাহিদ হাসান
  ২৫ মার্চ ২০২০, ০০:০০

মহামারি করোনাভাইরাস মোকাবিলায় এখন পর্যন্ত ওষুধ বা ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হওয়ায় সাধারণ সর্দি-কাশি ও জ্বরের ওষুধই মানুষের একমাত্র পথ্য। তবে দেশব্যাপী ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ায় পিইপি বা ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জামের মতো এসব ওষুধের চাহিদা বেড়েছে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কোথাও কোথাও এক শ্রেণির ওষুধ ফার্মেসি মালিক কৃত্রিম সংকটের দোহাই দিয়ে উচ্চদামে বিক্রি করছেন।

সরেজমিন রাজধানীর একাধিক ওষুধ ফার্মেসি ঘুরে ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে সর্দি-জ্বর, কাশি, অ্যালার্জি ওষুধের চাহিদা বেড়েছে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলেন, সাধারণত ঋতু পরিবর্তনজনিত কারণে প্রতি বছরের ফেব্রম্নয়ারি, মার্চ ও এপ্রিলের দিকে অনেকেই সাধারণ সর্দি-কাশি ও ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। এ ধারাবাহিকতায় চলতি বছরও সিজনাল ফ্লুতে আক্রান্ত হওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। তবে এবার সংক্রমণজনিত করোনাভাইরাসের লক্ষণ ও উপসর্গ সাধারণ সর্দি-জ্বর বা নরমাল ফ্লুর মতো হওয়ায় ওষুধের চাহিদা বেড়েছে।

শাহবাগ, মোহাম্মদপুরের টউন হল, আগারগাঁওয়ের কলেজগেট ছাড়াও ফর্মগেট, মিটফোর্ড এলাকার বিভিন্ন ওষুধের বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। সেখানে সার্জিক্যাল মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের মতো নাপা, নাপা এক্সটেন্ড জাতীয় প্যারাসিটামল, ফেক্সোফেনাডিন, মন্টেলুকাস্ট গ্রম্নপের মন্ট্রিল, হিস্টাসিন, এলাট্রল, নাকের অ্যান্টাজল নেজাল ড্রপ ও পিপিআই ক্যাপসুল ও ভিটামিন-সির ঘাটতি পূরণে সিভিট জাতীয় ওষুধের চাহিদা বেড়েছে। মূলত করোনা আতঙ্কে সর্দি-জ্বর হলে অনেকেই এসব ওষুধ সেবন করছেন। এছাড়া রোগ হলে দ্রম্নত সুস্থতার জন্য অনেকে আগাম প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এসব ওষুধ কিনে রাখছেন। ফলে এলাকা বিশেষ কিছু ফার্মেসি স্বল্পমূল্যের এসব ওষুধের দামও বেশি রাখছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, সাধারণত দেশে ঠান্ডা, কাশি, জ্বর অ্যালার্জিজনিত অসুস্থতায় আক্রান্তরা চিকিৎসকের কাছে জান না। নিজেরাই নিকটস্থ ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খান। এ বছর করোনাভাইরাস ভয়ে অনেকে হাসপাতালমুখী না হয়ে নিজেরাই দোকান থেকে ওষুধ কিনে সেবন করছেন। আর এ সুযোগকে পুঁজি করে কিছু ফার্মেসি ব্যবসায়ী সংকট দেখিয়ে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করেন। এমনকি জ্বরের চিকিৎসায় ব্যবহৃত নিষিদ্ধ ঘোষিত নাপা এক্সট্রা ওষুধ পর্যন্ত বাজারে দেদার বিক্রি হতে দেখা গেছে।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজধানীর শহিদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া যায়যায়দিনকে বলেন, করোনাভাইরাস ও সাধারণ ফ্লুর উপসর্গ একই ধরনের হওয়ায় এসব ওষুধের চাহিদা বেড়েছে। আতঙ্কের কারণে অন্যান্য রোগীর সংখ্যা কমছে। একেবারে প্রয়োজন না হলে কেউ আসছে না। এ জন্য সর্দি-কাশির চিকিৎসায় হাসপাতালের বহির্বিভাগে একটা ফ্লু কর্নার চালু করা হয়েছে। প্রথমদিকে এ কর্নারে ১৫০-এর মতো রোগী হলেও সংখ্যা কমে ১১০ থেকে ১০০ জনে হয়েছে। এভাবে গতকাল ৫০ জনের মতো চিকিৎসা নিয়েছে। সোমবার এসেছে ৩৪ জন। আগে বহির্বিভাগে প্রতিদিন ৫ হাজারেরও বেশি রোগী হলেও বর্তমানে এই সংখ্যা ৫০০ থেকে ৬০০ জনে নেমে এসেছে। তবে মনে রাখতে হবে আতঙ্কের কারণে হাসপাতালে না এলেও আক্রান্তের সংখ্যা কিন্তু কমছে না। তাই ঋতু পরিবর্তনজনিত ইনফ্লুয়েনঞ্জার মতো সমস্যা হলে হাসপাতালে আসা ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বাস্থ্য বাতায়নে দেওয়া হটলাইনে ১৬২১৬৩, ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করা উচিত।

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের বহির্বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. মো. মনিরুজ্জামান যায়যায়দিনকে বলেন, এটি হার্টের সমস্যাজনিত চিকিৎসাকেন্দ্র হলেও সাধারণ সর্দি-জ্বর নিয়ে রোগী আসছেন। সবাইকে সেবা দেওয়া হচ্ছে। তবে কিছু রোগী আসছেন, যাদের ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন নেই। তারপরও আতঙ্ক দূর করতে রোগভেদে অ্যালাট্রল, হিস্টাসিন, সাধারণ প্যারাসিটামল ও সিভিট জাতীয় ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

পাবনা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের এক চিকিৎসক যায়যায়দিনকে বলেন, করোনাভাইরাস আতঙ্কে হাসপাতালে অন্যান্য রোগী তুলনামূলক কম হলেও ঠান্ডা-জ্বর, গলা ব্যথায় ভোগা রোগীর ভিড় বাড়ছে। যাদের অধিকাংশ রোগীকে সাধারণ জ্বরের ওষুধ খাওয়ার পরমার্শ দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার অন্তত ২০টি ওষুধ ফার্মেসি মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়। গত ২ মাস আগের তুলনায় জ্বর-কাশি, সর্দি, গলা ব্যথার ওষুধ বেশি বিক্রি হচ্ছে। তবে এসব ওষুধের কোনো দাম বাড়েনি বলে তারা জানিয়েছেন। মোহাম্মদপুর চাঁদ উদ্যান এলাকার মা ফার্মেসির কর্ণধার সাকিব হোসেন যায়যায়দিনকে বলেন, সামান্য গা-গরম, সর্দি-কাশির জন্য মানুষ ওষুধ কিনছেন। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ।

কলেজগেটের বাংলাদেশ ফার্মার ওষুধ বিক্রেতা সায়মন বলেন, করোনা আতঙ্কে অনেকে বেশি করে ফার্স্ট এইড তথা সর্দি-জ্বরের কমন ওষুধ কিনছেন। ফার্মগেটের কয়েকজন ওষুধ বিক্রেতা জানান করোনাভাইরাসের ফলে অনেক আগেই স্যানিটাইজার শেষ হয়েছে। এখন জ্বরের ওষুধের পাশাপাশি দিনে অন্তত ৫ থেকে ৭টা পর্যন্ত নরমাল থার্মোমিটার বিক্রি হচ্ছে।

শাহবাগ এলাকার কয়েকজন ওষুধ বিক্রেতা বলেন আগে প্রায় সব রোগীর পরামর্শ পত্রে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ লেখা থাকলেও এখন চিকিৎসকরা সর্দি-কাশি-জ্বরের ওষুধ বেশি লিখেছেন।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান যায়যায়দিনকে বলেন, এ মুহূর্তে দেশে হ্যান্ড সানিটাইজারসহ অন্যান্য উপাদানের ঘাটতি নেই। কারণ পূর্বে ৮টি প্রতিষ্ঠান হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করলেও এখন ৩১টি প্রতিষ্ঠান তৈরি করছে। ফলে আগের চেয়ে চার গুণ বেশি উৎপাদন হচ্ছে। আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তৈরির কাজ করছে। তবে আমাদের সহজাত প্রবৃদ্ধি হলো কোনো কিছুর সংকট দেখা দিলে অনেকে তা মজুত করে রাখেন। এ জন্য স্যানিটাইজারের পরিবর্তে সহজলভ্য সাবান ব্যবহারের ব্যাপারে সবাইকে উৎসাহিত করতে হবে। যা স্যানিটাইজারের চেয়ে বেশি কার্যকর। অন্যদিকে বাজারে সাধারণ সর্দি-কাশির পর্যাপ্ত ওষুধ আছে। সব ওষুধ নিয়মিতভাবে সরবরাহ করা হচ্ছে। এরপরও কেউ অতিরিক্ত দাম নিলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

\হ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<94079 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1