শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা বিস্তার ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে সরকার

পরিস্থিতি বুঝে সারাদেশে লকডাউনে যাওয়া হবে বিদেশফেরতদের খুঁজে বের করার ওপর জোর জরুরি অবস্থার দাবি উঠলেও সরকার সে পথে যাবে না
সোহেল হায়দার চৌধুরী
  ২৪ মার্চ ২০২০, ০০:০০

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে প্রয়োজনে কঠোর অবস্থানে যাবে সরকার। তা হতে পারে লকডাউন বা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা। সে সঙ্গে বিদেশফেরত যারা পালিয়ে রয়েছেন বা কোয়ারেন্টিনে যাননি তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। যারা বিদেশফেরতদের পালিয়ে থাকতে সহায়তা করেছেন বা করছেন তাদের ক্ষেত্রেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারি মহলে বিষয়গুলো নিয়ে গভীর পর্যালোচনা চলছে বলে জানা গেছে।

সরকার চাইছে একসঙ্গে লকডাউনে না গিয়ে ধাপে ধাপে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে। এরই অংশ হিসেবে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে পরিস্থিতি অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। প্রয়োজন হলে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত তা বাড়ানো হতে পারে। এদিকে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ বাস্তবায়নে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীও অংশ নেবে। ইতিমধ্যে সব স্থলবন্দর বন্ধ করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষা স্থগিত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিপণি বিতান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। চারটি দেশ ও অঞ্চল ছাড়া সব দেশ থেকে যাত্রী আসা বন্ধ করা হয়েছে। সব ধরনের সভা-সমাবেশ ও গণজমায়েত বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় আরও আগেই। বন্ধ করা হয়েছে জামিন ও গুরুত্বপূর্ণ বিচারিক কাজ ছাড়া নিম্ন আদালতের সব ধরনের কর্মকান্ড। স্বাধীনতা দিবসের রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান ও সংবর্ধনার আয়োজন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলাকে।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতির সূত্র ধরে বিভিন্ন মহল থেকে জরুরি অবস্থা জারির দাবি উঠলেও সরকার সে পথে যাবে না। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাস ও বাংলাদেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরবেন। একই সঙ্গে নাগরিক সমাজের করণীয় ও সরকারের পদক্ষেপগুলো বর্ণনা করবেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কর্মরত সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন এক ব্যক্তি যায়যায়দিনকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এবারের ভাষণটি হবে মূলত দিকনির্দেশনামূলক। এতে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে জনগণের করণীয় ও সরকারের পদক্ষেপ বর্ণনার পাশাপাশি নতুন নির্দেশনা আসতে পারে।

সরকারের একাধিক সূত্র জানায়, দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার নাগরিকদের সচেতন ও সতর্ক করার প্রথম কাজটি শেষ করেছে। জনগণের মধ্যে কিছুটা সতর্কতা এলেও কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে সরকার কঠোর পন্থায় যাওয়ার কথা ভাবছে। সে অনুযায়ী কর্মপরিকল্পনা তৈরির কাজ চলছে এখন। সরকারের উচ্চপর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের গুচ্ছ নির্দেশনার ভিত্তিতে বিষয়টি নিয়ে অন্যান্য বিশ্লেষণের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো মাঠ জরিপের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়মিত অবহিত করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে।

জানা গেছে, জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে করোনাভাইরাস নিয়ে প্রতিটি জেলা ও বিভাগের সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করতে। পরিস্থিতি বিবেচনায় যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে কঠোর সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সরকারের সর্বোচ্চ মহলের সঙ্গে আলোচনা করে নিতে হবে। এদিকে বিদেশফেরতদের খুঁজে বের করার জন্য প্রশাসনের সব স্তরে নির্দেশনাদানের পাশাপাশি গোয়েন্দাদের মাঠে নামানো হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন সোর্সের মাধ্যমে বা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সচেতনভাবে খোঁজ নিচ্ছে কোনো বিদেশফেরত আছে কি না।

সরকারসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, লকডাউন ঘোষণা করা হলে শুধু হাসপাতাল, ওষুধ ও খাদ্যসামগ্রী প্রতিষ্ঠান ও জরুরি সেবা বিভাগগুলো খোলা থাকবে। এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় নাগরিকদের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা থাকলেও পরিচালনার ক্ষেত্রে নতুন নীতিমালা গ্রহণ করলে তাতে সরকার বাদ সাধবে না। তবে জরুরি সেবা সংস্থাগুলো ও সরকারের সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলো প্রয়োজনীয় কারণে কিছু সময়ের জন্য খোলা হতে পারে।

সরকারের উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্র বলছে, বাংলাদেশসহ বিশ্বে চলমান করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও বিস্তার পরিস্থিতির ওপর তীক্ষ্ন দৃষ্টি রাখা হয়েছে। দেশে করোনার বিস্তার ঠেকাতে এরই মধ্যে সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। একাধিক পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে; কিন্তু পরিস্থিতি কী সেটা যেমন নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না, তেমনি মানুষের আতঙ্ক কমানো সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় সরকারের কঠোর অবস্থানে যাওয়া ছাড়া কোনো পথ খোলা নেই।

সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, জনগণের একটি বড় অংশকে তাদের চিরাচরিত অভ্যাস আইন অমান্য করা ও অসচেতনতা থেকে মুক্ত করা যাচ্ছে না। একই সঙ্গে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বা সরকারের সতর্ক নির্দেশনা পালনে বাধ্য করা যাচ্ছে না। বিষয়টি সরকারকে ভাবিয়ে তুলেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<93944 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1