শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভাইরাস নয়, গরিবের চিন্তা 'খামু কী'

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৩ মার্চ ২০২০, ০০:০০
অটোরিকশাচালক রনজি মিয়া -বিডি নিউজ

নভেল করোনাভাইরাসে যখন গোটা বিশ্ব আতঙ্কিত, তখন তা নিয়ে কোনো উদ্বেগই দেখা গেল না রনজি মিয়ার, তার ভাবনার বিষয় রিকশাযাত্রী কম হওয়া নিয়ে।

গাইবান্ধা সদরের খোলাবাড়ি এলাকার রনজি মিয়া কয়েক বছর ধরে রিকশা চালান ঢাকায়, রোববার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছিলেন তিনি।

বিশ্বের দেড় শতাধিক দেশে সংক্রমিত হওয়ার পর বাংলাদেশেও কভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত ও মৃতু্যর পর জনসমাগম ও গণপরিবহণ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে সরকার।

ফলে অফিস-আদালত খোলার দিন রোববারও রাজধানীতে বাইরের মানুষের সংখ্যা ছিল কম; যা চোখে পড়েছে রনজি মিয়াসহ অন্য রিকশাচালকদের।

তারা বলেন, আগে দিনে ৭০০-১০০০ হাজার টাকা আয় হলেও এখন ৫০০ টাকাও হয় না।

গ্রামে ফিরে যাচ্ছেন না কেন- এই প্রশ্নে রনজি মিয়া বলেন, 'বাড়িতে গিয়ে খামু কী? কাজ-কাম তো নাই।'

নভেল করোনাভাইরাসের কথা শুনেছেন, কিন্তু তা নিয়ে সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি তারা।

'করোনা শুনি, তয় গরিব মানুষ, অত হিসাব করি না,' বলেন রনজি মিয়া। ঘনঘন হাত ধোয়া কিংবা অন্যের স্পর্শ এড়িয়ে চলার বিষয়েও কোনো সচেতনতা নেই তার।

''সকালে নাস্তা করি হাত ধুইয়া আবার খাওনের আগে হাত ধুই। কেউ ব্যাগ ধরতে বললে ধরি। গরিব মানুষ এত 'ইয়ে' করে লাভ আছে?" ৬

রনজি মিয়ার মতো অটোরিকশাচালক হাবিবুর রহমানের দুর্ভাবনা যাত্রী কম হওয়া নিয়ে; কারণ তারও দিন আনি দিন খাই অবস্থা।

'করোনা আতঙ্কে মানুষ কম। জমার টাকাও ঠিকমতো দিতে পারি না,' বলেন তিনি।

হাবিবুর থাকেন যাত্রাবাড়ী ভাঙা প্রেস এলাকায়। তার বাড়ি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের বৌদ্ধনাথ গ্রামে।

হাত ধোয়া, গাড়ি জীবাণুমুক্ত করার কাজটিতে উদাসীন হাবিবুরও।

'দেখেন এত কিছু বুঝি না। যাত্রী নামার পর গাড়ি ন্যাকড়া দিয়ে মুছে নেই।'

কারও সঙ্গে দেখা হলে হাত মেলানোর মতো কাজটিও করে যাচ্ছেন হাবিবুর, যেখানে স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে, তা না করার কথাই বলা হচ্ছে বারবার।

ঢাকার বাসের হেলপার, যারা সারাক্ষণই বাসের দরজায় দাঁড়িয়ে বহু মানুষের সংস্পর্শে আসছেন, তাদের কোনো বিকার দেখা গেল না ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে।

রোববার দুপুর ১২টায় বাহন পরিবহণের মিরপুরগামী একটি বাস জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থামলে তার হেলপারকে যাত্রীদের স্পর্শ করেই বাসে ঢোকাতে দেখা যায়।

সেখানে দাঁড়ানো এক ব্যক্তি বলে ওঠেন, 'করোনার জন্য সবাইকে অন্তত ছয় ফুট দূরত্ব রেখে চলাফেরা করতে বলা হয়েছে। কিন্তু বাসে এভাবে আলিঙ্গন করে উঠলে তো পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেবে।'

সাভারগামী ওয়েলকাম ট্রান্সপোর্টের একটি বাস থামার পর সেখানেও দেখা যায় একই অবস্থা।

বাসটির হেলপারের কাছে জানতে চাওয়া হলো হাত ধোয়া হয় কিনা এবং জীবাণুনাশক ব্যবহার করা হয় কিনা?

'আগে যেইভাবে চলতাম, এখনো সেইভাবেই চলি,' উত্তর এলো তার কাছ থেকে, অর্থাৎ নভেল করোনাভাইরাস নিয়ে কোনো সতর্ক বার্তা তাকে ছোঁয়ায়নি।

তবে মৈত্রী পরিবহণের বাসমালিক মনজু মোলস্না বলেন, মালিক সমিতির পক্ষ থেকে পরিবহণকর্মীদের সতর্ক করা হয়েছে, গাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রাখতে বলা হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে নৌযানগুলোতে কী অবস্থা- জানতে দুদিন আগে সদরঘাটে বিআইডবিস্নওটিএর পরিবহণ পরিদর্শকের কক্ষে গেলে তখনই একজন লঞ্চের মাস্টার ঢুকে একটি হেক্সিসলের বোতল দেখে বলে ওঠেন- 'এইটা আবার কী?'

তখন সেই পরিদর্শক বললেন, 'বুঝলাম আপনারা এখনো লঞ্চ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছেন না এবং নিজেরাও এই উদ্যোগ নিচ্ছেন না।'

রোববার সেই লঞ্চ মাস্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এখন সব 'ঠিক আছে'। নিজেরা পরিচ্ছন্ন থাকেন এবং লঞ্চও পরিষ্কার রাখেন।

এমভি টিপু লঞ্চের ব্যবস্থাপক ফারুক আহমেদ বলেন, তাদের কোম্পানির ১৮টি লঞ্চ রয়েছে, কর্মচারী অন্তত ৯০০। সবাইকে হেক্সিসল ব্যবহারসহ লঞ্চ পরিষ্কার করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এদিকে গণপরিবহণের মতো রাজধানীতে বিচরণরত সাধারণ মানুষের অনেকের মধ্যেই তেমন সচেতনতা দেখা যায়নি, যদিও তাদের অনেকে মুখে মাস্ক পরেই নিজেকে সুরক্ষিত ভাবছেন।

রোববার সচিবালয়ের পূর্ব পাশের ফটকে টিসিবির ট্রাক থেকে পেঁয়াজ, তেল, চিনি কিনতে শতাধিক মানুষ লাইন ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন, যাদের একজনের সঙ্গে আরেকজনের গা লাগালাগির অবস্থা ছিল।

তা দেখে পাশের একজন বললেন, 'মাস্ক লাগিয়ে লাভ কী, যদি এভাবে জট ধরে দাঁড়ান।'

কিন্তু এতেও লাইনে দাঁড়ানোর মানুষের কোনো গা করতে দেখা যায়নি।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী বললেন, 'আমাদের মাস্ক লাগে না। কিছুই হবে না।'

এত উদাসীনতার মধ্যেও ব্যতিক্রম পাওয়া গেল মো. শাহজাহানকে; ঘুরে ঘুরে পান বিক্রি করেন তিনি। নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে হেক্সিসলের একটি বোতল সঙ্গে রেখেছেন তিনি।

তবে তারও দুর্ভাবনার বিষয়, বেচা-বিক্রি কমে গেছে।

পান বিক্রেতা শাহজাহানের মতো দুর্ভাবনা মৎস্য ভবনের সামনের রাস্তায় বসে থাকা মুচি রিপনেরও। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকায় এসে থাকেন গোলাপবাগে।

উদ্বিগ্ন কণ্ঠে রিপন বলেন, 'আয় নেই, এখনই চলতে পারছি না। সামনে যে কী হবে, বুঝতে পারছি না।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<93810 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1