শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংক্রামক রোগের অপ্রতুল চিকিৎসা

জাহিদ হাসান
  ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে বেশ কিছু সংক্রামক রোগের লাগামহীন প্রার্দুভাব দেখা দিয়েছে। যেসব রোগের চিকিৎসা দিতে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে এসব রোগের জন্য পৃথক সংক্রামক ওয়ার্ড, রোগ নির্ণয়কারী জনবল (মাইক্রোবায়োলজিস্ট) ও শনাক্তকরণ সরঞ্জামের ব্যবস্থা নেই হাসপাতালগুলোতে।

চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অতীতে কলেরা, ডায়রিয়া, চিকেন পক্স, স্মল পক্সসহ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিপাহ, মিজেল, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মতো নতুন নতুন সংক্রামক রোগ দেখা দিচ্ছে। আর আক্রান্তের সংখ্যা অধিক হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা সেবা পেতে রোগীদের বেগ পোহাতে হচ্ছে। অথচ দেশে সরকারি-বেসরকারিভাবে ১১০টি মেডিকেল কলেজ থাকলেও সেখানে সংক্রামক রোগ শনাক্তকরণ ও চিকিৎসায় সেভাবে কোনো বিশেষায়িত বিভাগ বা পৃথক ওয়ার্ডের ব্যবস্থা নেই। হাসপাতালগুলোতে রোগ নির্ণয়ের কাজে নিয়োজিত প্রয়োজনীয় সংখ্যক মাইক্রোবায়োলজিস্ট, আধুনিক ল্যাবরেটরি, জীবাণু শনাক্তকরণ যন্ত্র ও রিএজেন্ট মজুদ সংকট রয়েছে। এতে করে নতুন নতুন সংক্রামক ও ভাইরাস রোগের প্রকোপে অসংখ্য মানুষ চিকিৎসা ভোগান্তিতে পড়লেও আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছেন না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এ সবের সত্যতা যাচাইয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশে গত এক দশকে ৭টি নতুন সংক্রামক রোগ দেখা দিয়েছে। বিপরীতে সংক্রামক রোগের জন্য মহাখালীতে অবস্থিত ১০০ শয্যার সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল এবং চট্টগ্রামে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি) ছাড়া পৃথকভাবে বিশেষায়িত চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। বিআইটিআইডি প্রতিষ্ঠানটি তিনতলা বিশিষ্ট একটি ভবনে হাতেগোনা ১১ জন জনবল নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। যেখানে গবেষক ও গবেষণা কাজে বরাদ্দকৃত অর্থ একেবারেই অপ্রতুল। আবার মেডিকেল কলেজগুলোতে নামমাত্র ল্যাবরেটরি থাকলেও মাইক্রোবায়োলজি বিষয়ে হাতে-কলমে শিক্ষার সুযোগ খুবই কম। অন্যদিকে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় শুধুমাত্র মেডিসিনের রোগীদের জন্য হাসপাতালগুলোতে ১৬ ধরনের পৃথক বিভাগ রয়েছে। আলাদা ওয়ার্ড, সহায়ক চিকিৎসা ব্যবস্থা অপ্রতুল হওয়ায় সাধারণ রোগীদের সঙ্গে থেকে সংক্রমণজনিত রোগের চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন মাইক্রোবায়োলজিস্ট ও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক যায়যায়দিনকে বলেন, সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে স্বয়ং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিস্নউএইচও) ৫টি কর্ম-কৌশল নির্ধারণ করেছে। যার মধ্যে কোনো দেশে সংক্রামক রোগ দেখা দিলে দ্রম্নত শনাক্তকরণ ও উৎস নিয়ন্ত্রণ করা। রোগীদের জন্য মানসম্মত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা। সন্দেহজনক রোগীদের ক্ষেত্রে পরীক্ষামূলক অতিরিক্ত প্রতিরোধব্যবস্থা তৈরি। প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবেশগত ও প্রকৌশলগত প্রতিরোধ উলেস্নখযোগ্য। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ছাড়াও অতীতে বেশকিছু সংক্রামক ও ভাইরাসজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব আতঙ্ক ছড়ালেও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অস্থায়ী ভিত্তিতে আইসোলেশন ট্রিটমেন্ট ছাড়া কোনো ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। তাই স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে জড়িত নীতি-নির্ধারকদের উচিত ডবিস্নউএইচও এর নির্ধারিত নীতিমালা ও কর্মকৌশল অনুসরণ করে সংক্রামক রোগ চিকিৎসায় প্রতিটি হাসপাতালে অন্তত একটি করে পৃথক ওয়ার্ড চালু করা।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই মাহবুব যায়যায়দিনকে বলেন, ভাইরাস ও সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। অতীতে সরকারের সমন্বিত প্রচেষ্টায় অধিকাংশ সংক্রামক রোগ নির্মূল সম্ভব হয়েছে। তবে বর্তমানে নতুন সংক্রামক রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসায় সরকারি-বেসরকারিভাবে স্বাস্থ্য খাতের অবকাঠামো অনেক দুর্বল অবস্থানে রয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, এখন পর্যন্ত দেশের কোনো মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনফেকশাস ডিজিজ বিষয়ে শিক্ষক বা কনসালট্যান্টের পদ তৈরি হয়নি। তাই সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর উচিত সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসা সেবার জন্য হায়ার স্কিল ম্যানেজম্যান্ট, প্রশিক্ষিত চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, বিভাগ ও প্রতিষেধক তৈরির উপর গুরুত্বারোপ করা। মেডিকেল পাঠ্যসূচিতে সংক্রামক রোগের কলেবর বাড়ানো রোগ নির্ণয় ও জীবাণু শনাক্তকরণসহ দ্রম্নত চিকিৎসাসেবা ব্যবস্থার উপর জোর দেয়া।

সবশেষে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক ডা. আমিনুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে, তথ্যের সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, সংক্রামক রোগের ঝুঁকি মোকাবিলায় সরকারি হাসপাতালগুলোতে আইসোলেশন ওয়ার্ড গঠনের বিষয়ে আলোচনা চলছে। পাশাপাশি ভবিষ্যৎ প্রস্তুতি হিসেবে ঢাকার আশপাশে পৃথক একটি সংক্রামক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স থেকে শুরু করে জেলা সদর হাসপাতালসহ সবখানে ট্রপিক্যাল ডিজিজেজ চিকিৎসায় অন্তত একজন করে কনসালট্যান্টের পদ তৈরি করা হবে বলে জানান তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<89834 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1