শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংক থেকে হরদম ঋণ নিচ্ছে সরকার -কেন?

যাযাদি ডেস্ক
  ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

সরকার চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাস বাকি থাকতেই ব্যাংক থেকে টার্গেটের তুলনায় অনেকে বেশি ঋণ নেওয়ায় বেসরকারি বিনিয়োগ এবং উন্নয়ন কর্মকান্ডে নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত সাত মাসেই সরকার টার্গেটের চেয়ে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা বেশি ঋণ নিয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজস্ব আদায় কম হওয়ায় অর্থসংকট কাটাতে এ বছর ব্যাংকের ওপর সরকারের নির্ভরশীলতা আরও বাড়তে পারে।

কর্মকর্তারা জানান, অর্থবছরের বাকি কয়েক মাসে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া কমানোর চেষ্টা তাদের রয়েছে। চলতি অর্থবছরে সরকার ব্যাংক থেকে প্রায় সাড়ে ৪৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিতে চেয়েছিল।

কিন্তু এখন পর্যন্ত সাত মাসেই সেই টার্গেট ছাড়িয়ে সরকার প্রায় সাড়ে ৫৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

অর্থনীতিবিদদের অনেকে পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন। তারা বলেন, সরকার অর্থসংকটের কারণে ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।

কিন্তু কেন এই অর্থসংকট?

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আদায় অনেক কম হওয়ার কারণেই সরকারকে এবার বেশি মাত্রায় ঋণ নিতে হচ্ছে।

'রাজস্ব আহরণ টার্গেটের থেকে প্রথম ৬ মাসে অনেক কম হয়েছে। ফলে অর্থের জন্য সরকারকে অন্য সূত্র খুঁজতে হচ্ছে। এখন অন্য সূত্রের মধ্যে সঞ্চয়পত্র যেটা ছিল, সেখান থেকে গত বছরে টার্গেটের চেয়ে অনেক বেশি অর্থ নেওয়া হয়েছিল। এরপর সরকার সঞ্চয়পত্র নিয়ে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিল। সে জন্য মানুষ এবার সঞ্চয়পত্র কম কিনেছে। সুতরাং সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে অর্থ পাচ্ছে না।'

মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, 'শেয়ারবাজারেও অনুকূল পরিস্থিতি নেই। শেয়ারবাজারেও সরকার টাকা তোলার জন্য যেতে পারছে না। আবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা ছাপিয়ে ঘাটতি মেটাতে গেলে তাতে মূল্যস্ফীতি হবে। এ রকম একটা অবস্থায় ব্যাংকের ওপর তারা ভর করেছে।'

এর প্রভাব কী হবে?

ব্যাংকের ওপর সরকারের এই ভর করার প্রেক্ষাপটে অর্থনীতিবিদরা বিনিয়োগ এবং উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে নানা আশঙ্কার কথা বলছেন।

তারা মনে করেন, সরকারের এই ঋণ নেওয়ার মাত্রা অব্যাহত থাকলে বড় সংকটে পড়বে ব্যক্তি বা বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ। কারণ ব্যাংকগুলো ব্যক্তি পর্যায়ে ঋণ দেওয়া কমিয়ে দেবে।

সরকারি গবেষণা সংস্থা বিআইডিএসের নাজনীন আহমেদ বলেন, সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কাজেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

'রাজস্ব আদায় বছরের দ্বিতীয় ধাপে কিছুটা বাড়ে। তবে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পুরো অর্জিত হবে, এটা কেউই আসলে এখন মনে করছেন না। সেই বিচারে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেওয়া ইতিমধ্যে মাত্রা ছাড়িয়েছে। সেটা হয়তো আরও বাড়বে।'

তিনি আরও বলেন, 'রাজস্ব ব্যয় তো কমানো যাবে না। বেতন-ভাতাতো দিতে হবে। তখন কমানোর জায়গা হবে উন্নয়ন বাজেটের ব্যয়।'

সরকার কী বলছে

সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান পরিস্থিতিকে অর্থসংকট হিসেবে দেখতে রাজি নন। তিনি বলেন, 'সংকট কিছু আমি দেখছি না। এটা তো কমবেশি হয়। আপডাউন হয়।'

কিন্তু সরকারের ব্যাংক ঋণ নেওয়ার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে রাজস্ব আদায় কম হওয়ার বিষয়কে যে কারণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে, সেটা স্বীকার করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী।

তিনি বলেন, 'এটা স্বীকার্য অবশ্য যে টার্গেটের চেয়ে রাজস্ব আদায় কম হয়েছে। এর কারণও আছে, যেহেতু এবার টার্গেটটা উচ্চমাত্রার ছিল। কারণ আশা ছিল, এবার সরকার নতুন যে ভ্যাট-কর বাস্তবায়ন করল, এর ফলে একটা বড় অংকের টাকা আশা করা হয়েছিল। সেটা আদায়ের ব্যাপারে হয়তো সব মেশিনারি পুরোপুরি কাজ করেনি।'

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা বলেন, অর্থবছরের দ্বিতীয় ধাপে অর্থাৎ বাকি কয়েক মাসে রাজস্ব আয় বাড়ানোর তৎপরতা জোরদার করা হচ্ছে, যাতে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার মাত্রা কমিয়ে আনা যায়। সে আশা কতটা পূরণ হবে অর্থনীতিবিদদের অনেকেরই তাতে সন্দেহ রয়েছে। বিবিসি বাংলা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<89322 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1