শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
পবিত্র হজ পালিত

লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখর আরাফাত ময়দান

পাপমুক্তি ও আত্মশুদ্ধির আকুল বাসনা নিয়ে বিশ্বের ১৬৪টি দেশের ২০ লাখ ধমর্প্রাণ মুসলমান গতকাল পবিত্র হজ পালন করেছেন
যাযাদি রিপোটর্
  ২১ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০
‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে সোমবার মুখরিত হয়ে ওঠে সৌদি আরবের আরাফাত ময়দান। জোহর এবং আসরের নামাজের পর মোনাজাতে অংশ নেন লাখো ধমর্প্রাণ মুসলমান Ñওয়েবসাইট

‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্?দা ওয়ান্?নি’মাতা লাকা ওয়াল মুল্?ক, লা শারিকা লাক’ (আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধুই তোমার, সব সাম্রাজ্যও তোমার, তোমার কোনো শরিক নেই) ধ্বনিতে সোমবার মুখরিত হলো পবিত্র আরাফাত ময়দান। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা লাখো ধমর্প্রাণ মুসল্লির কণ্ঠে উচ্চারিত হলো মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে আত্মসমপণের্র এই পবিত্র বাণী।

পাপমুক্তি ও আত্মশুদ্ধির আকুল বাসনা নিয়ে বিশ্বের ১৬৪টি দেশের ২০ লাখ ধমর্প্রাণ মুসলমান গতকাল পবিত্র হজ পালন করেছেন। সূযোর্দয়ের পর হাজীরা সৌদি আরবের মিনা থেকে ট্রেনে-বাসে বা হেঁটে রওনা হন আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশে।

হজের দিনে (৯ জিলহজ) এ ময়দানে অবস্থান করা হজ পালনকারীদের জন্য তিনটি ফরজের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূণর্। এ ময়দানেই মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন। মূলত ৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করাই হজ। ১২ জিলহজ হজের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে।

গত রোববার সন্ধ্যার পর থেকেই হাজিরা ইহরাম বেঁধে ‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনি উচ্চারণ করে পবিত্র মক্কা নগরী থেকে মিনার উদ্দেশে রওনা দেন। আর এর মধ্য দিয়েই শুরু হয় হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। এরপর গতকাল মিনা থেকে তারা সমবেত হন আরাফাতের ময়দানে। তারা সূযোর্দয় থেকে সূযার্স্ত পযর্ন্ত এ ময়দানে অবস্থান করেন। কেউ পাহাড়ের কাছে, কেউ সুবিধাজনক জায়গায় বসে দিনভর ইবাদত করেন। কেউ যান জাবালে রহমতের (রহমতের পাহাড়) কাছে।

হজ ভিসা নিয়ে যারা সৌদি আরবে গিয়ে অসুস্থতার জন্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন, তাদেরও হজের গুরুত্বপূণর্ এই ফরজ পালনে (আরাফাত ময়দানে উপস্থিতি) অ্যাম্বুলেন্সে আরাফাত ময়দানে স্বল্প সময়ের জন্য আনা হয়েছিল।

আরাফাত মিনা থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে। এই ময়দানে অবস্থিত মসজিদে নামিরাহতে জামাতে অংশগ্রহণকারীরা এক আজান ও দুই ইকামতের সঙ্গে একই সময়ে পরপর জোহর ও আসরের নামাজ আদায় করেন। নামাজের আগে ইমাম সাহেব খুতবা দেন। যারা এ মসজিদে নামাজের জামাতে শামিল হতে পারেননি তারা নিজ তাঁবুতে জামাতে নামাজ আদায় করেন।

গতকাল সূযাের্স্তর পর আরাফাত ময়দান থেকে মুজদালিফার উদ্দেশে রওনা দেন হাজিরা। মুজদালিফা অথর্ নৈকট্য লাভ করা। হজরত আদম (আ.) ও বিবি হাওয়া তাদের প্রথম দেখা হওয়ার পর এই মুজদালিফায় খোলা আকাশের নিচে রাত কাটিয়ে ছিলেন বলে জানা যায়।

সূযাের্স্তর পর মুজদালিফামুখী পথে হাজিদের ঢল নামে। যুবা, বৃদ্ধ, নানা বণর্, নানা বয়সী নারী-পুরুষ সবাই এক উদ্দেশ্য ও এক গন্তব্যে চলেছেন। মুজদালিফায় পেঁৗছানোর পর মাগরিব ও এশার নামাজ একসঙ্গে পড়তে হয়। তারপর মুজদালিফার খোলা প্রান্তরে রাত কাটাতে হয়। জামারায় শয়তানের উদ্দেশ্যে পরপর তিন দিন ছোড়ার জন্য প্রয়োজনীয় পাথরের টুকরা এখান থেকেই সংগ্রহ করতে হয়। পরে তা থেকে বড় শয়তানকে সাতটি পাথর মেরে, কোরবানি শেষে মাথার চুল ছেঁটে বা মাথা মুড়িয়ে স্বাভাবিক পোশাকে মিনা থেকে পবিত্র মক্কায় ফিরে তাওয়াফ করবেন (কাবা শরিফ সাত চক্কর দেয়াকে তাওয়াফ বলে) হাজিরা। জমজমের পানি পান করবেন। সাফা-মারওয়া পাহাড় সাতবার প্রদক্ষিণ করে হজের অত্যাবশ্যকীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ করবেন। এরপর তারা আবার মিনায় ফিরে পরবতীর্ দুই দিন সেখানে তিনটি শয়তানের উদ্দেশে পাথর ছুড়বেন। এভাবে হজের আনুষ্ঠানিকতা পুরোপুরি শেষ হবে। মক্কায় বিদায়ী তাওয়াফের পর হাজিরা দেশে ফিরে যাবেন।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, দক্ষিণ আরবের বাদশাহ আবরাহা রাসুলের (স.) এর জন্ম বছরে কাবাঘর ভেঙে ফেলার জন্য বিশাল হাতি বাহিনী নিয়ে এসেছিলেন। অবশ্য আলাহর বিশেষ রহমতে ও কুদরতে কাবাঘর রক্ষা পায় এবং বাদশাহ আবরাহার বিশাল হাতিবাহিনী আবাবিল পাখির নিক্ষিপ্ত পাথরে ভস্মীভ‚ত তৃণরূপ হয়ে যায়। আল কোরআনের সুরা ফিল এই প্রেক্ষাপটেই নাজিল হয়।

বিভিন্ন হাদিস ও ইতিহাস থেকে জানা যায়, জাহেলিয়া যুগের লোকেরা হজ মওসুমে নগ্ন হয়ে কাবাঘর প্রদক্ষিণ করতো। ইসলামের প্রাথমিক পযাের্য় মহানবী (স.) হজ মওসুমে মক্কায় আগত মানুষদের কাছে ইসলামের সুমহান দাওয়াত পৌঁছে দিতেন। এতে বোঝা যায়, পূবর্বতীর্ অনেক নবী-রাসুলের ওপরও হজ পালনের বিধান ছিল। তাদের স্মৃতিস্মারক ও ঐতিহ্য সম্পকের্ অবগত হওয়া এবং শ্রদ্ধা প্রদশর্ন করাও হজের অন্যতম উদ্দেশ্য।

হযরত আবদুর রহমান বিন ইয়ামার আদ-দায়লি (রা.) থেকে বণির্ত আছে, রাসূলুলাহ (সা.) বলেছেন, ‘আরাফাই তো হজ।’ ইমাম শাওকানী (রহ.) এ কথার ব্যাখ্যায় বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আরাফাতে অবস্থানের জন্য নিদির্ষ্ট দিনে ওই ময়দানে উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য অজর্ন করল তার হজ হয়ে গেল।’ ইমাম তিরমিযী (রহ.) এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘আরাফাত ময়দানে অবস্থান করার ভাগ্য যার হয়নি তার হজ বাতিল হয়ে যাবে।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<8834 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1