বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আজ পবিত্র হজ

যাযাদি রিপোটর্
  ২০ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০
আপডেট  : ২০ আগস্ট ২০১৮, ০০:০৪

আজ পবিত্র হজ। মুসলিম মিল্লাতে সবর্বৃহৎ সম্মেলন। মিনা থেকে দলে দলে আরাফাতের ময়দানে যাচ্ছেন হাজিরা। লাখ লাখ হজ পালনকারী আল্লাহর মেহমানদের কণ্ঠে ধ্বনিত হবে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাই, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক।’ বিঘোষিত হবে আল্লাহতায়ালার একত্ব ও মহত্তে¡র কথা। কাফনের কাপড়ের মতো সাদা দু’টুকরা ইহরামের কাপড় পরে আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি ও সান্নিধ্য লাভের জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়বে সৌদি আরবে অবস্থানরত হজপালনকারীরা। আল্লাহতায়ালা এবং বান্দার মধ্যে সম্পকোর্ন্নয়নের অনন্য আবহে বিরাজ করবে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, সংহতি ও ভ্রাতৃত্বের এক অনুপম দৃশ্য। হজের সব আনুষ্ঠানিকতা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সৌদি সরকার। রেওয়াজ অনুযায়ী জোহরের নামাজের আগেই হজের খুতবা প্রদান করা হবে। ঐতিহাসিক এ বিশ্ব মুসলিম সম্মিলনে হজের খুতবা প্রদান করবেন নতুন শায়খ বিচারপতি ড. হুসাইন ইবনে আবদুল আজিজ ইবনে হাসান ইবনে আবদুল আজিজ ইবনে হুসাইন আল শেখ। সৌদি আরবের প্রেস এজেন্সি এএসপি সূত্রে জানা যায়, হারামাইন আশ-শরিফাইনের খাদেম বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল-সৌদ সম্প্রতি এক রাজকীয় ফরমান জারির মাধ্যমে এ বছর আরাফাতের ময়দানে খতিব হিসেবে তাকে নিয়োগ দেন। শায়খ ড. হুসাইন আলুশ শায়খ পবিত্র মসজিদে নববির সম্মানিত ইমাম ও খতিব। তিনি মদিনার সুপ্রিম কোটের্র আপিল বিভাগের বিচারপতির দায়িত্বও পালন করছেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল হজের খুতবা সরাসরি সম্প্রচার করবে। চলতি বছরে এক লাখ ২৭ হাজার ২৭৫ জন বাংলাদেশি হজ পালন করছেন। আরাফার ময়দানে অবস্থান প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবদুর রহমান বিন ইয়ামার আদ-দায়লি (রা.) হতে বণির্ত আছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আরাফাই তো হজ।’ ইমাম শাওকানি (রহ.) এ কথার ব্যাখ্যায় বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আরাফাতে অবস্থানের জন্য নিদির্ষ্ট দিনে ওই ময়দানে উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য অজর্ন করল তার হজ হয়ে গেল।’ জনশ্রæতি আছে, হজরত আদম (আ.) ও বিবি হাওয়া দীঘির্দন কান্নাকাটির পর জাবালে রহমতে দুজনের দেখা হয়েছিল। জাবাল মানে পাহাড়। জাবালে রহমত হলো রহমতের পাহাড়। এই পাহাড়ে একটি উঁচু পিলার আছে। একে কেউ কেউ দোয়ার পাহাড়ও বলেন। পিলারের কাছে যাওয়ার জন্য পাহাড়ের গায়ে সিঁড়ি করা আছে। মহানবী হজরত মুহম্মদ (সা.) আরাফাতে বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। আরাফাহ ও আরাফাত এই দুটো শব্দই আরবিতে প্রচলিত। দৈঘ্যের্ দুই মাইল, প্রস্থেও দুই মাইল। এই বিরাট সমতল ময়দানের নাম আরাফাত। ময়দানের তিন দিক পাহাড়বেষ্টিত। ময়দানের দক্ষিণ পাশ ঘেঁষে মক্কা হাদা তায়েফ রিং রোড। এই সড়কের দক্ষিণ পাশে আবেদি উপত্যকায় মক্কার উম্মুল কুরআ বিশ্ববিদ্যালয়। উত্তরে সাদ পাহাড়। সেখান থেকে আরাফাত সীমান্ত পশ্চিমে প্রায় এক কিলোমিটার। সেখান থেকে দক্ষিণে মসজিদে নামিরাহয় গিয়ে আরাফাত সীমান্ত শেষ হয়েছে। এএফপিসহ বিভিন্ন বাতার্ সংস্থা জানিয়েছে, নিবিের্ঘœ হজ সম্পন্ন করতে সৌদি কতৃর্পক্ষ বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। মক্কা ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে পযার্প্ত পরিমাণ পুলিশসহ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য। অস্ত্রসজ্জিত যান নিয়ে রাস্তায় টহল দিচ্ছে পুলিশ। আকাশে চক্কর দিচ্ছে সামরিক হেলিকপ্টার। ভিড়ের চাপে পদপিষ্ট হওয়াসহ যে কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা মোকাবেলায় নিয়োজিত রাখা হয়েছে হাজার হাজার কমীর্। প্রস্তুত রয়েছে হাসপাতালগুলো। আরাফার ময়দানে অবস্থিত মসজিদে নামিরা থেকে দুপুরে হজের খুতবা দেয়া হবে। এখানে খুতবার পর এক আজানে দুই ইকামতে জোহর ও আসরের কসরের (দুই রাকাত করে) নামাজ আদায় করবেন হজযাত্রীরা। এরপর হাজিরা আরাফাত থেকে মুজদালিফায় যাবেন। সেখানে গিয়ে মাগরিব ও এশার নামাজ একত্রে আদায় করবেন। মুজদালিফাতেও খোলা আকাশের নিচে রাত যাপন করবেন। সেখান থেকে জামারায় শয়তানকে মারার জন্য পাথর (কংকর) সংগ্রহ করে নেবেন। ১০ জিলহজ ফজরের নামাজ আদায় করে মুজদালিফা থেকে হাজিরা আবার মিনায় ফিরবেন। মিনায় হাজিরা পশু কোরবানি, মাথা মুÐন, শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ ও ইহরাম ছাড়ার কাজগুলো সম্পন্ন করবেন। হজের আনুষ্ঠানিকতার অংশ হিসেবে হাজিরা মিনায় গিয়ে ১০ জিলহজে কোরবানি করবেন এবং মাথা মুÐন বা চুল ছঁাটাবেন। এরপর মক্কায় পবিত্র কাবাঘর তাওয়াফ করবেন। এই তাওয়াফের নাম তওয়াফে জিয়ারাহ। এর আগে সৌদি আরব গিয়েই হজযাত্রীরা প্রথমে একবার অবশ্যই পবিত্র কাবা ঘর তওয়াফ করেন। বিদায়ী তওয়াফ সেরে আবার মিনায় ফিরে ১১ ও ১২ জিলহজ সেখানে অবস্থান করে প্রতিদিন তিন শয়তানকে পাথর মারবেন। এভাবে সম্পন্ন হবে হজের পুরো আনুষ্ঠানিকতা। ইসলাম ধমের্র পঁাচটি স্তম্ভের মধ্যে একটি হচ্ছে হজ পালন। জীবনে অন্তত একবার হজ পালন করতে হয়। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ধমর্প্রাণ মুসল্লিরা হজ পালনের উদ্দেশে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে