শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
নিরাপদ সড়ক আন্দোলন

৪১ শিক্ষার্থীর জামিন

আন্দোলনের সময় সংঘাত, ভাঙচুর, উসকানি ও পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে পুলিশ৫১টি মামলায় ৯৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে
যাযাদি রিপোটর্
  ২০ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০
আপডেট  : ২০ আগস্ট ২০১৮, ০০:০৮
নিরাপদ সড়ক আন্দোলনকে কেন্দ্র করে মামলায় আটক ২৫ শিক্ষাথীের্ক রোববার জামিন দিয়েছে ঢাকার সিএমএম আদালত। এ খবর শুনে শিক্ষাথীর্ এবং অভিভাবকরা উচ্ছ¡াস প্রকাশ করেন Ñযাযাদি

জাফরিন হক চিৎকার দিয়ে ‘আব্বু, ভাইয়ার (জাহিদ হক) জামিন হয়ে গেছে’ বলেই আদালতের বারান্দায় আনন্দে কেঁদে ফেলেন। জাহিদ হক সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন চলার সময় ৬ আগস্ট বাড্ডায় ভাঙচুরের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এখন তিনি কারাগারে আছেন। জাহিদের মতো আরও ৪১ শিক্ষার্থীকে রোববার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত (সিএমএম) জামিন দিয়েছে।

নিরাপদ সড়ক আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পুলিশের কাজে বাধা এবং গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে করা মামলায় এসব শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার হন।

ঢাকার থানা ও আদালত সূত্র বলছে, আন্দোলনের সময় সংঘাত, ভাঙচুর, উসকানি ও পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে পুলিশ এ পর্যন্ত ৫১টি মামলায় ৯৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এদের মধ্যে ৫২ জন শিক্ষার্থী। রোববার ঢাকার আদালতে জামিন চেয়ে ২৫ শিক্ষার্থীর পক্ষে জামিন আবেদন করা হয়। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের আইনজীবীরা জামিনের পক্ষে শুনানি করেন।

শুনানিতে ছাত্রদের আইনজীবীরা আদালতের কাছে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, এসব ছাত্রের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। মামলার এজাহারেও তাদের নাম নেই। সন্দেহজনকভাবে তাদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত সবাই ছাত্র।

আদালত শুনানি নিয়ে ২৫ শিক্ষার্থীর জামিন মঞ্জুর করে।

বাড্ডা থানার মামলায় গ্রেপ্তার ১৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে রোববার জামিন পেয়েছেন ১০ জন। আর ভাটারা থানার মামলায় গ্রেপ্তার আট শিক্ষার্থীর মধ্যে জামিন পেয়েছেন ছয়জন। অন্যদিকে, ধানম-ি থানার পৃথক তিন মামলায় গ্রেপ্তার নয় শিক্ষার্থীকে জামিন দিয়েছে আদালত। ধানম-ি এলাকায় ভাঙচুর ও পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

দুপুরের পর ঢাকার বিভিন্ন মহানগর হাকিম আরও ১৬ জন শিক্ষার্থীর জামিন মঞ্জুর করেন।

গত ২৯ জুলাই রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী বাসচাপায় নিহত হন। এরপর ঘাতক বাসচালকের শাস্তি এবং নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা।

স্বজনদের চোখে আনন্দাশ্রু

জামিনের আবেদন করেছেন-এমন শিক্ষার্থীদের বাবা-মা, ভাইবোন রোববার সকাল থেকে আদালতে ভিড় করতে থাকেন। ধানম-ির মামলায় গ্রেপ্তার দুই ভাই মাহমুদুর রহমান ও মাহবুবুর রহমান। মাহমুদ পড়েন ইউল্যাবে। আর মাহবুব বিএফ শাহীন কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে এখন আইইএলটিএস করছেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জামিন হওয়ার খবর শুনেই তাদের মা বলে ওঠেন, ‘আমার ছেলেদের জামিন হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ।’

বাড্ডার মামলায় গ্রেপ্তার মেহেদী হাসানের জামিনের সংবাদ শুনে তার বাবা এম এ মাসুদ খান আদালতের বারান্দায় কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ‘আজ (রোববার) আমার আনন্দের দিন। ছেলে গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে কত যে যন্ত্রণায় ছিলাম, সে কথা কাউকে বোঝাতে পারব না।’ ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের ছাত্র রেদোয়ান আহমেদের বাবা অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ ছেলের জামিন হওয়ায় বেজায় খুশি। তিনিও বলেন, ছেলের জামিন হওয়ায় খুব ভালো লাগছে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নূর মোহাম্মাদের বোন মাবিয়া বললেন, ‘ভাইয়ার জামিন হওয়ায় আমার অনেক ভালো লাগছে। আমরা একসঙ্গে ঈদ করতে পারব।’

সেদিন স্বজনদের চোখে

ছিল উৎকণ্ঠা, ভয়

বাড্ডার আফতাবনগর এলাকার ভাঙচুরের মামলায় ১৪ ছাত্রকে এবং বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ভাঙচুরের মামলায় ৮ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ৭ আগস্ট ২২ শিক্ষার্থীর প্রত্যেকের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। এজলাসে স্বজনদের দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন ছাত্ররা। দুই দিনের রিমান্ড শেষে যখন ছাত্রদের প্রিজন ভ্যানে করে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন তা দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা।

জাহিদ হক ও নূর মোহাম্মাদের আইনজীবী আখতার হোসেন বলেন, ছাত্রদের জামিন করাতে পেরে তিনি নিজেও খুব আনন্দিত।

যারা জামিন পেলেন

বাড্ডার মামলায় জামিন পাওয়া ১০ শিক্ষার্থী হলেন রেদোয়ান আহমেদ, রাশেদুল ইসলাম, মুশফিকুর রহমান, ইফতেখার আহম্মেদ, রেজা রিফাত আখলাক, এ এইচ এম খালিদ রেজা, তারিকুল ইসলাম, নূর মোহাম্মাদ, জাহিদ হক, সীমান্ত ও হাসান। আর ভাটারা থানার মামলায় জামিন পেয়েছেন আজিজুল করিম, মাসাদ মরতুজা বিন আহাদ, ফয়েজ আহম্মেদ আদনান, মেহেদী হাসান, শিহাব শাহরিয়ার ও সাখাওয়াত হোসেন। ধানম-ির মামলায় জামিন পাওয়া নয় শিক্ষার্থী হলেন সোহাদ খান, মাসরিকুল আলম, তমাল সামাদ, ওমর সিয়াম, মাহমুদুর রহমান, মাহবুবুর রহমান, ইকবাল হাসান, মিনহাজ রহমান ও নাইমুর রহমান।

উত্তরা পশ্চিম থানার মামলার আসামি মাহবুব খান রবিন, তোফায়েল, আশিক; কোতোয়ালি থানার মামলার আসামি মেহেদী, জাহিদুল, দুলাল; রমনা থানার মামলার আসামি আরমানুল, সাইরুল, দাইয়ান; পল্টন থানার মামলার আসামি সাইফুল ইসলাম অদুদ, নিউমার্কেট থানার মামলার আসামি নূরে আলম, আজিজুর রহমান, আমিন হোসেন; শাহবাগ থানার মামলার আসামি আবু বকর সিদ্দিকী ও রিয়াজুল হক।

দুপুরে আদালতে উপস্থিত হন ড. কামাল হোসেন, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। এরা সবাই শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবি জানিয়ে আসছিলেন।

তারা বিচারকদের ধন্যবাদ জানান শিক্ষার্থীর জামিন দেয়ার জন্য। শিক্ষার্থীদের পরিবারকেও সান্ত¡না দেন তারা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে