শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
ইশতেহার ঘোষণা

আধুনিক ঢাকাসহ ১৪৪ প্রতিশ্রম্নতি ইশরাকের

নতুনধারা
  ২৯ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০
ঢাকা দক্ষিণে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী ইশরাক হোসেন মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন। এ সময় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন -যাযাদি

যাযাদি রিপোর্ট

পুরান ঢাকার ঐতিহ্য সমুন্নত রেখে 'আধুনিক বাসযোগ্য ঢাকা' গড়ে তোলার ১৬ দফা প্রতিশ্রম্নতিতে নির্বাচনী ইশতেহার সাজিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেন।

তার ভাষায়, আদর্শ শহর হচ্ছে সেই শহর যেখানে চাওয়ার আগেই 'উত্তম নাগরিক সেবা' নাগরিকদের দুয়ারে হাজির হবে। সামাজিক, পারিবারিক ও নাগরিক মূল্যবোধের চর্চা হবে সুদৃঢ়। মেয়র হওয়ার সুযোগ পেলে তেমন নগরই তিনি গড়তে চান।

অবিভক্ত ঢাকার শেষ মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে তার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন।

ধানের শীষের এই প্রার্থী বলেন, 'দুঃসময়ের ক্ষতচিহ্ন মুছে ফেলে নতুন করে স্বপ্ন সাজাবার জন্য পরিবর্তনের ডাক নিয়ে আমি আপনাদের খেদমতে হাজির হয়েছি।'

যুক্তরাজ্যের হার্টফোর্ডশায়ার ইউনিভার্সিটিতে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে আসা ইশরাক কীভাবে 'গর্বিত ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার সম্মিলনে' ঢাকাকে সবার বাসযোগ্য একটি 'বিশ্বমানের অত্যাধুনিক মহানগরী' হিসেবে গড়ে তোলার কথা ভাবছেন?

তিনি বলছেন, সমন্বিত ও কার্যকর নগর সরকার ধারণা বাস্তবায়নে সক্রিয় উদ্যোগ নেবেন তিনি। নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধির জন্য রাজউকের মাস্টার পস্ন্যানের সঙ্গে সমন্বয় করে অঞ্চলভিত্তিক 'অ্যাকশন এরিয়া পস্ন্যান' গ্রহণ করবেন, নাগরিক সেবার কর্মকান্ড ওয়ার্ডপর্যায়ে বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে।

মেয়রের দায়িত্ব পেলে ডেঙ্গু প্রতিরোধে বছরজুড়ে মশার 'অভয়াশ্রম' ঢাকার জলাশয়গুলো পরিচ্ছন্ন রাখার উদ্যোগ নেবেন ইশরাক। মশক নিধনে 'আধুনিক প্রযুক্তি' ব্যবহার করবেন।

ঢাকা ওয়াসাসহ রাজধানীতে সেবা প্রদানকারী সব সংস্থার সমন্বয়ের মাধ্যমে সুপেয় পানীয় জলের সরবরাহ নিশ্চিত করা, জলাবদ্ধতা দূর করা, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নের প্রতিশ্রম্নতিও তিনি দিচ্ছেন।

যানজট নিরসন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, ফুটব্রিজ, চলন্ত সিঁড়ি স্থাপন, ওয়ান স্টপ বাস সার্ভিস চালু, আন্ডারগ্রাউন্ড টানেল নির্মাণ, বৈদু্যতিক বাস ও স্কাইওয়ে নির্মাণ, জেব্রা ক্রসিংয়ে ডিজিটাল পুশ বাটন চালু, সাইকেল ও মোটরসাইকেলের জন্য পৃথক লেইন, জনসংখ্যা প্রবৃদ্ধি বিবেচনায় নিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে ৫০ বছর মেয়াদী সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণের কথা রয়েছে ইশরাকের ইশতেহারে।

জনবহুল রাজধানীর ভবিষ্যৎ জনঘনত্বের কথা বিবেচনায় রেখে পাতাল রেল নির্মাণের কর্মসূচিও নিতে চান বিএনপির প্রার্থী। প্রথম পর্বে পিলখানা থেকে লালবাগ কেলস্না, চকবাজার, সদরঘাট, গুলিস্তান হয়ে মতিঝিলে শেষ হবে এই লাইন। আরেকটি হবে শ্যামপুর থেকে যাত্রাবাড়ী হয়ে মতিঝিলে। তাতে ঢাকা দক্ষিণের যাত্রীরা এই রুটের মাধ্যমে মেট্রোরেল প্রকল্পের মতিঝিল হয়ে উত্তর ঢাকায় যাতায়াতের সুযোগ পাবে।

সস্তায় বিষমুক্ত ও ভেজালমুক্ত তাজা খাবারের ব্যবস্থা করতে নগরীর বিশেষ বিশেষ স্থানে 'কৃষক মার্কেট' ও 'নাইট মার্কেট' এবং প্রতিটি বাজারে ভেজাল/বিষ পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করতে চান ইশরাক। নাগরিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য প্রাইমারি হেলফ চেকআপ সেন্টার, প্রান্তিক ও সান্ধ্যকালীন কর্মীদের জন্য আধুনিক ওয়াকওয়ে নির্মাণ, জনসমাগম স্থলে 'ফুড কোর্ট' ও নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর আধুনিকায়নের কথাও তিনি বলছেন।

ইশরাক বলেছেন, নির্বাচিত হলে তিনি অঞ্চলভিত্তিক কমিউনিটি সেন্টার প্রতিষ্ঠা করবেন। ওয়ার্ড ভিত্তিক ব্যায়ামাগারের আধুনিকায়ন করবেন। প্রত্যেক ওয়ার্ডে আধুনিক শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপন করবেন। প্রতিটি স্থাপনায় থাকবে মাতৃদুগ্ধ কক্ষ।

নারীবান্ধব কম্প্রেহেনসিভ রিপ্রোডাক্টিভ হেলথ কেয়ার এবং প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সেন্টার করার পাশাপাশি কর্মজীবী নারী ও কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের জন্য হোস্টেল নির্মাণ করার অঙ্গীকার রয়েছে তার ইশতেহারে।

যাত্রাবাড়ী-ডেমরা এলাকায় 'ডিএনডি' বাঁধের কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধ এলাকার পানি শীতলক্ষ্যা নদীতে স্থানান্তর এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কম্পোজিট সার তৈরি ও বিদু্যৎ উৎপাদনের পরিকল্পনাও ইশরাকের রয়েছে।

তিনি বলেছেন, মেয়র হলে তিনি বুড়িগঙ্গা দূষণমুক্ত করা, নদীর তীর রক্ষা ও ওয়াকওয়ে নির্মাণ, সৌন্দর্য বর্ধন প্রকল্প নেবেন এবং নদীভিত্তিক বিনোদন কেন্দ্র, নৌ পর্যটন ব্যবস্থা গড়ে তুলবেন। শিশু পার্কসহ বিনোদন কেন্দ্রের উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন করবেন। পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর ঐতিহ্য ও স্থাপত্যশৈলী অক্ষুণ্ন রেখে সংস্কার করবেন।

সিটি করপোরেশনের সব উন্মুক্ত উদ্যান, নদী ও খাল অবৈধ দখলমুক্ত করা, নিয়মিত ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠানের আয়োজন করা, খেলাধুলার আয়োজন করা, ডিসিসির নিজস্ব জায়গায় বৃক্ষ ক্লিনিক, পোষ্যপ্রাণী ক্লিনিক করা, ছাদ-বাগান ও আরবান এগ্রিচালচারে নাগরিকদের উৎসাহ দেওয়ার কথাও ইশরাক বলছেন।

বিএনপির এই প্রার্থী বলেছেন, দল-মত ও জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে মহানগরীর সব জাতি-গোষ্ঠীর সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্ম-কর্মের অধিকার নিশ্চিত করতে তিনি কাজ করবেন।

'প্রত্যেক ধর্মাবলম্বী নিজ নিজ ধর্ম পালনের পূর্ণ অধিকার ভোগ করবেন। কোনো নাগরিকের ধর্মবিশ্বাসকে আঘাত করতে দেওয়া হবে না। ধর্ম যার যার, এ মহানগরী সবার। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির শহর ঢাকা মহানগরীর এই ঐতিহ্য কোনো রকমেই বিনষ্ট হতে দেওয়া হবে না।'

মেয়র নির্বাচিত হয়ে নগরভবনে বসার সুযোগ পেলে প্রথম ১০০ দিনে কী কী করবেন- তারও একটি রূপরেখা ইশতেহারে দিয়েছেন ইশরাক। জরুরি ও জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো চিহ্নিত করে এই সময়ের মধ্যে তিনি বাস্তবায়ন করবেন।

দুর্নীতিমুক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রম্নতি দিয়ে তিনি বলেন, 'দুর্নীতি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করে আমাদের নৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। আমি প্রতিজ্ঞা করছি আপনাদের সবার আন্তরিক সহযোগিতায় আমরা ঢাকা সিটি করপোরেশনের সর্বস্তরে দুর্নীতিমুক্ত সেবা প্রদান নিশ্চিত করব।'

সেজন্য মহানগরী ও আঞ্চলিক কার্যালয়ে হট লাইন চালু করে অভিযোগ নেওয়া এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তার সমাধানে কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়ার অঙ্গীকার করছেন ইশরাক।

তিনি বলছেন, গণশুনানির মাধ্যমে নগরবাসীর সঙ্গে আলোচনা করে তিনি সিটি করপোরেশন হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ করবেন। জন্ম-মৃতু্য সনদ, ট্রেড-লাইসেন্স এবং অন্যান্য সেবার ক্ষেত্রে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করবেন। নগরীর বাজারগুলোর আধুনিকায়ন এবং পণ্যের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করে দেবেন। আর নাগরিকদের করের টাকা কোথায় খরচ হচ্ছে বছরে দুইবার করদাতাদের সামনে সেই হিসাব দেবেন।

'যে কোনো নাগরিকের জন্য আমার দুয়ার এবং ব্যক্তিগত ফোন সার্বক্ষণিক খোলা থাকবে ইনশালস্নাহ।'

নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করে সাদেক হোসেন খোকার ছেলে বলেন, 'আমি ঢাকার সন্তান, আপনাদেরই সন্তান, আপনাদের আপনজন। এই ঐহিত্যবাহী নগরীর সন্তান হিসেবে আমার নির্বাচনী প্রতিশ্রম্নতি হচ্ছে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সমন্বয়ের বিশ্বমানের বাসযোগ্য আধুনিক ঢাকা গড়ে তোলা। এই লক্ষ্যে আমার নিজস্ব চিন্তা চেতনা, স্বপ্ন-ভাবনা ও প্রত্যাশার কাঠামো আপনাদের সমীপে তুলে ধরেছি। আপনাদের সহযোগিতা পেলে তা আরো বাস্তব, প্রায়োগিক ও নাগরিকবান্ধব করে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।'

কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার আন্দোলনের অংশ হিসেবে সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণের কথা তুলে ধরে রাজনীতিতে নবীন ইশরাক বলেন, 'আমরা বিশ্বাস করি, গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং সর্বোপরি আমাদের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব সুরক্ষার স্বার্থে আপনারা ধানের শীষ তথা বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে আপনার মূল্যবান ভোট দিয়ে আমাকে জয়যুক্ত করবেন।'

ইশরাকের ইশতেহার ঘোষণার অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুলস্নাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া, নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, বিকল্পধারার একাংশের সভাপতি নুরুল আমিন ব্যাপারী মঞ্চে ছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুলস্নাহ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সদরুল আমিন, অধ্যপক আখতার হোসেন খান, বিএনপির হাবিবুর রহমান হাবিব, আব্দুল কুদ্দুস, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, ফজলুল হক মিলন, নজরুল ইসলাম মঞ্জু, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, বিলকিস জাহান শিরিন, শ্যামা ওবায়েদ, শিরিন সুলতানা, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, গৌতম চক্রবর্তী, ফাহিমা আখতার মুন্নী, আবদুস সালাম আজাদ, শহিদুল ইসলাম বাবুল, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, হাসান জাফির তুহিন, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, খেলাফত মজলিশের মাওলানা শফিক উদ্দিনও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<86431 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1