শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিদায় সংবর্ধনায় যাওয়ার পথেই চিরবিদায়

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৮ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০
আবীর হোসেন

আর মাত্র সাত দিন পর মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হবে। এ উপলক্ষে সোমবার বেলা ১১টা থেকে রাজধানীর ওয়ারী উচ্চবিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের পরীক্ষার্থীদের জন্য বিদায় সংবর্ধনার আয়োজন করে। সংবর্ধনায় যোগ দিতে সকাল থেকেই পরীক্ষার্থীরা দল বেঁধে আসতে থাকে স্কুল প্রাঙ্গণে। নেচেগেয়ে, উচ্ছ্বাস-আনন্দে মাতিয়ে তুলছিল পুরো স্কুল। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনায় তাদের সহপাঠী আবীর হোসেনের মৃতু্যসংবাদে এই আনন্দ-উৎসব চোখের পলকে দূর হয়ে যায়। নেমে আসে বিষাদের ছায়া।

মাত্র ১৫ বছর বয়সের আবীর হোসেন সকালে জয়কালী মন্দির এলাকায় নিজের বাসা থেকে বন্ধুদের সঙ্গে বের হয়। পরনে ছিল পাঞ্জাবি-পায়জামা। কয়েক বন্ধুকে নিয়ে ওয়ারী এলাকায় বলধা গার্ডেনের পাশে সড়ক দিয়ে ঘুরে যাচ্ছিল আবীর। বলধা গার্ডেনের উত্তর পাশের গেটের সামনে ওয়াসার পানির পাম্প স্টেশন। সেখান থেকে পানি নেওয়ার পর বেপরোয়া গতিতে থাকা ওয়াসার পানির লরি ধাক্কা দেয় আবীরকে। কেবল ধাক্কা নয়, মাটিতে পড়ে যাওয়া এই কিশোরের মাথার ওপর উঠে যায় লরিটির

চাকা। আবীরের সঙ্গে থাকা সহপাঠী ও এলাকাবাসী লরির চালক চুন্নু মিয়াকে (৪৯) আটক করে। রক্তাক্ত-ক্ষতবিক্ষত এই কিশোরকে উদ্ধার করা হয়। ছুটে আসে ওয়ারী উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শিক্ষকেরা। আবীরকে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশের সহায়তায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পর চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন।

দুপুর ১২টার পর এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন ট্রাফিক বিভাগের (পূর্ব) ওয়ারী জোনের সহকারী কমিশনার তারিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ওয়াসার পানিবাহী লরিসহ (ঢাকা মেট্রো ঢ ১১-০১১৪) চালককে আটক করে ওয়ারী থানা হেফাজতে আনা হয়েছে।

মাত্র ১১ মাস আগে আবীরের মা মিনু বেগম হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। পাঁচ বছর আগে আবীরের বড় ভাই ফয়সাল হোসেন পানিতে ডুবে প্রাণ হারান। আবীরের বাবা মো. হানিফ মিয়া পুরান ঢাকার নবাবপুরে খুচরা যন্ত্রাংশ ব্যবসায়ী। বড় ছেলের মৃতু্যর পর হানিফ মিয়ার তিন সন্তানের মধ্যে আবীর ছিল সবার ছোট। বাকি দুই বোন আবীরের চেয়ে বড়। মায়ের আকস্মিক মৃতু্যর পর আবীর বড় বোন আমেনা বেগমের বাসায় অধিকাংশ সময় কাটাত। ছোট ছেলেকে নিয়ে স্বপ্ন ছিল মো. হানিফ মিয়ার। ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে ছেলের নিথর দেহ দেখার পর ডুকরে ওঠেন তিনি। হানিফ মিয়া বলেন, বড় ছেলের মৃতু্যর পর ছোট ছেলেই ছিল তার সব আশা। কিন্তু আবীরকেও চলে যেতে হলো।

আবীর হোসেনের মৃতু্যসংবাদ শুনে তার সহপাঠীরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করে। ওয়ারী উচ্চবিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে তারা সরে গিয়ে স্কুলের সামনে মানববন্ধন করে দোষী চালকের শাস্তির দাবি জানায়।

ওয়ারী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবদুল কুদ্দুস বলেন, 'এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় সংবর্ধনা ছাড়াও আজ স্কুলে বার্ষিক মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছিল। মিলাদের পর পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্রও দেওয়া হতো। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে আসার কথা ছিল স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদের। বেলা ১১টার পর অনুষ্ঠান শুরু হয়। কিন্তু অনুষ্ঠান শুরুর কিছুক্ষণ পর আবীরের দুর্ঘটনার সংবাদ আমরা জানতে পারি। এ খবর শুনেই আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আবীরকে শনাক্ত করি।'

দুর্ঘটনার কারণ জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বলেন, 'আমরা আবীরের সহপাঠীদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি, ওয়াসার গাড়িটি বেপরোয়া গতিতে চলছিল। ওয়ারী একটি আবাসিক এলাকা হলেও এখানে ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন বেপরোয়াভাবেই চলাচল করে।'

এদিকে ওয়ারী থানা সূত্রে জানা গেছে, এ ঘটনায় আবীরের পরিবারের পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হতে পারে।

আবীরের মৃতু্যর কারণে স্কুলের সব কর্মসূচি বন্ধ রাখা হয়। সেখানে কেবল আবীরের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া মাহফিল করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<86296 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1