শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গাদের মনে আশা জাগাচ্ছে আইসিজের আদেশ

যাযাদি ডেস্ক
  ২৫ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসের (আইসিজে) আদেশে বঞ্চনার জীবনের অবসানের পথ খুলতে পারে বলে আশাবাদী হয়েছেন দেশান্তরী হয়ে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা।

তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে মিয়ানমারের ওপর অব্যাহত চাপ প্রয়োগ করে গেলে তাদের নিজেদের বসতভিটায় ফেরা সম্ভবপর হবে।

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনে গাম্বিয়ার করা এক আবেদনে আইসিজের ১৭ সদস্যের বিচারক প্যানেল বৃহস্পতিবার অন্তর্র্বর্তীকালীন আদেশ দেয়। সেখানে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় মিয়ানমারকে জরুরি ভিত্তিতে চার দফা অন্তর্র্বর্তীকালীন পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।

আদালত বলেছে, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী বা কোনো পক্ষ এমন কিছু করতে পারবে না, যা গণহত্যা হিসেবে পরিগণিত হতে পারে। গণহত্যার অভিযোগের সমস্ত আলামত তাদের সংরক্ষণ করতে

হবে।

বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার বিকালে আইসিজের প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আবদুলকাভি আহমেদ ইউসুফ নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের পিস প্যালেস থেকে এই আদেশ ঘোষণা করেন।

তবে সকাল থেকেই কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে ছোট ছোট জটলা করে কী রায় আসতে পারে, তা নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত ছিলেন রোহিঙ্গারা।

দুপুর গড়াতেই ক্যাম্পগুলোর ছোট ছোট দোকানপাট ও বাজারগুলোর দোকানের টেলিভিশনের সামনে রোহিঙ্গাদের ভিড় বাড়তে থাকে। টেলিভিশন, রেডিও ও মোবাইলে আদালতের রায় ঘোষণার খবর শোনেন তারা।

রায় ঘোষণার পর কথা হয় কক্সবাজাররের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পের রোহিঙ্গা সংগঠনের নেতা, প্রতিনিধি ও সাধারণ রোহিঙ্গাদের সঙ্গে।

উখিয়ার কুতুপালং এলাকার লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি (কমিউনিটি নেতা) ছৈয়দ আলম বলেন, 'আইসিজের এ রায়ে রোহিঙ্গারা খুশি। দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গারা নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হলেও এতদিন কোনো বিচার হয়নি।'

'এই প্রথম আন্তর্জাতিক মহলের কাছে রোহিঙ্গারা কোনো বিচার পেল। এতে আপাতত কিছুটা হলেও স্বস্তি অনুভূত হচ্ছে।'

এ রায়ের মধ্য দিয়ে নিরাপদে স্বদেশে (মিয়ানমার) ফিরতে রোহিঙ্গারা নতুন করে 'স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে' বলে জানান রোহিঙ্গা কমিউনিটির এই নেতা।

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তম্ব্রম্ন সীমান্তের শূন্যরেখার ক্যাম্পে বসবাসকারী রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ আরিফ বলেন, 'আদালত যে আদেশ প্রদান করেছে তাতে রোহিঙ্গা সংকটটি আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রথমবারের মতো স্বীকৃতি পেয়েছে। এতে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক মহলের চাপ বাড়বে।'

'আন্তর্জাতিক আদালতের এ রায় যদি মিয়ানমার বাস্তবায়ন করে এবং এ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের চাপ প্রয়োগ অব্যাহত থাকে তাহলে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পথ সুগম হবে।'

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আইসিজের আদেশ বাস্তবায়নে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে পারলেই রোহিঙ্গারা এর সুফল পাবে বলে মন্তব্য করেন কুতুপালং ৫ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি নূর কামাল।

তিনি বলেন, 'আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নাগরিক মর্যাদা দিয়ে স্বদেশে ফেরত নেওয়ার মধ্য দিয়ে ঘটবে রোহিঙ্গা সংকটের ইতি। অন্যথায় রোহিঙ্গা সমস্যার সহজ কোনো পথ নেই।'

আইসিজের আদেশে সন্তোষ প্রকাশ করে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচআর) সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ উলস্নাহ বলেন, 'আদালতে মিয়ানমারের উত্থাপিত যুক্তিতর্ক মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো গণহত্যার স্বীকৃতির প্রাথমিক জয় পেয়েছি।'

'এখন রায়টি বাস্তবায়নের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক মহল মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখুক।'

আইসিজের এই আদেশে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন কক্সবাজারের স্থানীয়রাও।

এর মধ্য দিয়ে মিয়ানমার আন্তর্জাতিকভাবে বড় ধরনের চাপের মুখে পড়বে বলে মনে করছেন 'কক্সবাজার সিভিল সোসাইটি'র সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা।

তিনি বলেন, 'আইসিজের এ রায়ে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো গণহত্যার বিষয়টি পরোক্ষভাবে প্রমাণিত হলো। এতে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ যদি অব্যাহত থাকে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষার পাশাপাশি স্বদেশে ফেরত নিতে বাধ্য হবে।'

এর মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের পথ এক ধাপ এগিয়ে গেল বলে মনে করছেন মানবাধিকারকর্মী নূর খান।

তিনি বলেন, 'এখন রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন, সুরক্ষা ও নিরাপত্তার যে বিষয়গুলো রয়েছে তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের একটা প্রচন্ড চাপ মিয়ানমারের ওপর এসেছে।'

'এটিকে কাজে লাগিয়ে আইসিজের রায়ের আলোকে বাংলাদেশকে ভূমিকা নিতে হবে আন্তর্জাতিক মহলকে আরও বেশি সোচ্চার করার। এ প্রচেষ্টা বাংলাদেশের অব্যাহত রাখা জরুরি।'

মিয়ানমারে নিপীড়নের শিকার হয়ে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশে রয়েছে। তাদের ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা ভেস্তে যাচ্ছে, কেননা মিয়ানমারের কার্যক্রমে আস্থা ফিরে পায়নি এই মুসলিম জনগোষ্ঠী।

রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অন্তর্র্বর্তীকালীন জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার যে আবেদন গাম্বিয়া করেছিল, তা যুক্তিযুক্ত বলে মনে করছে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস। সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে মিয়ানমারকে যে চারটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো-

১. রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যদের হত্যা বা হত্যার চেষ্টা, তাদের শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি করার চেষ্টা, তাদের জীবনযাপনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এমন কোনো পদক্ষেপ কিংবা ওই জনগোষ্ঠীর জন্মহার কমানোর যেকোনো ধরনের চেষ্টা বন্ধের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা মিয়ানমারকে অবশ্যই নিতে হবে।

২. মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বা কোনো সশস্ত্র গ্রম্নপ যেন এমন কোনো কর্মকান্ড না ঘটায় যা গণহত্যা বা গণহত্যার ষড়যন্ত্রের অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

৩. গণহত্যার অভিযোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো আলামত ধ্বংস করা যাবে না; বরং সেগুলো যাতে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয়, তা মিয়ানমারকে নিশ্চিত করতে হবে।

৪. এই আদেশের ভিত্তিতে মিয়ানমার কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে সে বিষয়ে এই আদেশ হওয়ার চার মাসের মধ্যে আইসিজেতে প্রতিবেদন দিতে হবে। তারপর আদালতের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসার আগ পর্যন্ত প্রতি ছয় মাস পরপর অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<85809 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1