বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতের পর নেপালে ব্যান্ডউইথ রপ্তানি

আহমেদ তোফায়েল
  ২৫ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি (বিএসসিসিএল) তার বিশাল অব্যবহৃত ব্যান্ডউইথ রপ্তানি করতে নতুন বাজারের খোঁজ করছে। ভারতের ত্রিপুরার পর এবার নতুন গন্তব্য হলো নেপাল। প্রায় ১০০ জিবিপিএস (গিগাবাইট প্রতি সেকেন্ড) রপ্তানি করতে বিএসসিসিএলের সঙ্গে নেপাল টেলিকমের আলোচনা চলছে।

বিএসসিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমান জানিয়েছেন, স্বল্প সময়ের মধ্যে নেপাল টেলিকমের সঙ্গে এ ব্যাপারে চুক্তি করা হবে। দীর্ঘদিন ধরে তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছিল। এখন আমরা তাদের সঙ্গে চুক্তি করতে প্রস্তুত।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নেপাল বর্তমানে প্রতিদিনের জন্য প্রায় ২৫০ জিবিপিএস চাহিদা মেটাতে চীন, ভারত এবং চেন্নাই থেকে ব্যান্ডউইথ কিনে থাকে। তবে দূরবর্তী অবস্থানের কারণে উচ্চগতির ইন্টারনেট নিশ্চিত করতে পারছে না দেশটি। এ জন্য নেপাল বাংলাদেশ থেকে ব্যান্ডউইথ কিনতে চায়।

জানা গেছে, দুটি সাবমেরিন কেবল থেকে বাংলাদেশের ২ হাজার ৬০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ সক্ষমতা রয়েছে। তবে স্থানীয়ভাবে কেবল ৯০০ জিবিপিএস ব্যবহার করা হয়। বিএসসিসিএল ২০২৩ সালের মধ্যে তার তৃতীয় কেবলটি আনতে কাজ করছে, যার মাধ্যমে আরও ৭ হাজার ২০০ জিবিপিএস যুক্ত করবে।

বিএসসিসিএল বর্তমানে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ত্রিপুরা রাজ্যে ১০ ব্যান্ডউইথের জিবিপিএস রপ্তানি করছে। ত্রিপুরায় ব্যান্ডউইথ রপ্তানি ২০১৬ সালের ৮ ফেব্রম্নয়ারি থেকে শুরু হয়েছিল।

এদিকে ইন্টারনেট সেবার উন্নয়নে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশ। ফাইভ জি বা পঞ্চম প্রজন্মের প্রযুক্তির যুগে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধিতে মাইলফলক হবে এ ক্যাবল। আগামী এপ্রিলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সম্মিলিত উদ্যোগে (কনসোর্টিয়াম) যুক্ত হতে চুক্তি করবে সরকার।

ফলে আগামী ২০২৩ সালের জুন থেকে সাবমেরিনের মূল ক্যাবলের সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। এতে আগামী ২০৩০ সাল পর্যন্ত ইন্টারনেটের চাহিদা মিটবে।

বিএসসিসিএল সূত্র জানায়, নতুন সাবমেরিন ক্যাবলের জন্য গঠিত সি-মি-উই ৬ কনসোর্টিয়ামের সদস্য হয়েছে বাংলাদেশ। সিঙ্গাপুর ও শ্রীলঙ্কার মধ্যবর্তী স্থানে সি-মি-উই ৬ কনসোর্টিয়ামে যুক্ত হবে এ ক্যাবল। কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে কক্সবাজার থেকে সিঙ্গাপুরের দিকে ও কক্সবাজার থেকে ফ্রান্সের দিকে ৫ টেরাবাইট করে মোট ১০ টেরাবাইট ব্যান্ডউইথ ইন্টারনেট পাবে বাংলাদেশ। এতে যুক্ত হতে কক্সবাজার ল্যান্ডিং স্টেশন হতে গভীর সমুদ্রের মূল লাইনের দূরত্ব হবে ১ হাজার ৮৫০ কিলোমিটার। এ সংযোগের জন্য খরচ হবে ৬৯০ কোটি টাকা। যার ৮৯ শতাংশ খরচ হবে শুধু ক্যাবল বাবদ। এপ্রিলে কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে মূল চুক্তি করবে বাংলাদেশ। এ জন্য গত সেপ্টেম্বরে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ এখন ফাইভ-জি প্রযুক্তির যুগে আছে। কিন্তু এখনো নিম্নমানের ব্রডব্যান্ড ব্যবহার হচ্ছে। এ বাস্তবতায় প্রযুক্তির উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে মাইলফলক হয়ে আসবে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল। আগামী এপ্রিলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের এ কনসোর্টিয়ামে যুক্ত হওয়ার চূড়ান্ত চুক্তি হবে। ফলে ২০২৩ সালে তৃতীয় সাবমেরিনের মূল ক্যাবলে যুক্ত হবে বাংলাদেশ। এ সংযুক্তির ফলে আগামী ২০৩০ সাল পর্যন্ত দেশের ব্যান্ডউইথ চাহিদা মিটবে। মন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ প্রযুক্তিগত উন্নয়ন করেছে। তার সঙ্গে নতুন সাবমেরিন ক্যাবল দীর্ঘমেয়াদি চাহিদা মেটাবে।

সূত্র জানায়, সি-মি-উই ৬ কনসোর্টিয়ামে সিঙ্গাপুর-ফ্রান্স সংযোগের ক্যাবল দূরত্ব ২০ হাজার কিলোমিটার। এ ক্যাবলটিতে বাংলাদেশ ছাড়াও ১৬টি দেশ সংযুক্ত হবে। এর মধ্যে চীন থেকেই যুক্ত হবে ৩টি কোম্পানি। ল্যান্ডিং স্টেশন থাকবে ২০টি। গত বছর ১৪ সেপ্টেম্বর এ কনসোর্টিয়ামে যোগ দিয়েছে বাংলাদেশ। সিঙ্গাপুর-ফ্রান্স পর্যন্ত সি-মি-উই ৬ এর যে মূল রুট হবে সেটি বাংলাদেশ থেকে ১৮৫০ কিলোমিটার দূর দিয়ে যাবে। এ দূরত্বই হচ্ছে বাংলাদেশের নিজেদের রুট। আর নিজেদের রুটের ক্যাবল বসানোর পুরো খরচ বহন করবে বাংলাদেশ। সি-মি-উই ৬ কনসোর্টিয়ামের সদস্যরা যৌথভাবে শুধু মূল লাইনের খরচ বহন করবে যেটি সিঙ্গাপুর-ফ্রান্সে বসছে। মূলত, বঙ্গোপসাগরের নিচে সিঙ্গাপুর-শ্রীলঙ্কার মধ্যবর্তী কোনো একটি স্থানে বাংলাদেশের ব্রাঞ্চ স্থাপন করা হবে।

আর এ কাজটি করবে কনসোর্টিয়ামের কাজ পাওয়া কোম্পানি। সিঙ্গাপুরে কনসোর্টিয়ামের দরপত্র মূল্যায়ন ও চূড়ান্তকরণ কার্যক্রম যে কোম্পানি সি-মি-উই ৬ এর কাজ পাবে, তারা সার্ভে করার পরই এটি চূড়ান্ত হবে।

সূত্র জানায়, ব্র্যাঞ্চিং ইউনিট হতে ক্যাবল এসে কক্সবাজারের ল্যান্ডিং স্টেশনে সংযোগ হবে। এই স্টেশন সি-মি-উই ৪ হলো, দেশের প্রথম সাবমেরিন ক্যাবলের স্টেশন। এটি এক্সটেনশন করে সি-মি-উই ৬-এর জন্য ব্যবহার করা হবে। সি-মি-উই হচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং পশ্চিম ইউরোপের সংক্ষিপ্ত নাম। সর্বশেষ সি-মি-উই ৫ কনসোর্টিয়ামে এই এলাকার দেশগুলোর মধ্যে ছিল- বাংলাদেশ, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ভারত, পাকিস্তান, সৌদি আরব, কাতার, ওমান, ইউএই, জিবুতি, মিসর, তুরস্ক, ইতালি, ফ্রান্স, মিয়ানমার, ইয়েমেন। এই ১৯ দেশ ১৯টি ল্যান্ডিং পয়েন্টের মাধ্যমে যুক্ত হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<85802 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1