শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
২১ রানে হার খুলনার

বঙ্গবন্ধু বিপিএলে চ্যাম্পিয়ন রাজশাহী রয়্যালস

বিপিএলের ফাইনালে খুলনা টাইগার্সকে ২১ রানে হারিয়েছে রাজশাহী রয়্যালস। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে শুক্রবার রাজশাহীর ১৭০ রানের জবাবে খুলনা থামে ১৪৯ রানে
ক্রীড়া প্রতিবেদক
  ১৮ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ১৮ জানুয়ারি ২০২০, ০০:৪১
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে শুক্রবার বঙ্গবন্ধু বিপিএলের ফাইনালে খুলনা টাইগার্সকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে রাজশাহী রয়্যালস। ছবিতে শিরোপা নিয়ে উচ্ছ্বসিত রাজশাহীর অধিনায়ক আন্দ্রে রাসেলসহ সতীর্থরা -বিসিবি

মাঠে কোন দলের সমর্থক বেশি ছিল, বলা কঠিন। তবে শেষ ওভারে মাঠের ভেতর থেকে হাত উঁচিয়ে ইশারায় যখন গ্যালারিকে জাগিয়ে তুললেন আন্দ্রে রাসেল, সবাই তখন যেন রাজশাহীরই সমর্থক! রাজশাহীর নামে শোনা গেল গর্জন। চারপাশ প্রকম্পিত করা সেই আওয়াজেই ম্যাচ শেষে আনন্দ উদ্‌যাপনে মেতে উঠলেন রাসেল ও তার সতীর্থরা। বঙ্গবন্ধু বিপিএলের চ্যাম্পিয়ন রাজশাহী রয়্যালস।

বিপিএলের বিশেষ আসরের শিরোপার হাসি রাজশাহীর। ফাইনালে খুলনা টাইগার্সকে হারিয়েছে তারা ২১ রানে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে শুক্রবার ফাইনালে ২০ ওভারে ১৭০ রান তুলেছিল রাজশাহী। খুলনা থমকে গেছে ১৪৯ রানে। উদ্‌যাপনের মতো মাঠের ক্রিকেটেও সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন রাসেল। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে তার বিধ্বংসী ইনিংস দলকে তুলেছিল ফাইনালে। শিরোপা লড়াইয়েও পার্থক্য গড়ে দিয়েছে তার পারফরম্যান্স। ব্যাট হাতে দারুণ এক ক্যামিওর পর বল হাতে নিয়েছেন দুটি উইকেট। ফাইনালের সেরা তো বটেই, শেষ দুই ম্যাচের পারফরম্যান্সে টুর্নামেন্টের সেরাও তিনি।

আন্দ্রে রাসেল যখন উইকেটে নামেন, তখন কানায় কানায় পূর্ণ মিরপুর শেরেবাংলা

স্টেডিয়ামের প্রায় সকল দর্শক উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়লেন। নেমেই বুঝি ঝড় তুলবেন এই ক্যারিবিয়ান। কিন্তু এদিন এই ক্যারিবিয়ানের সঙ্গে ব্যাট করতে নেমে ঝড় তুললেন পাকিস্তানি অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নাওয়াজ। অবশ্য রাসেলও কম যাননি। এরপর বল হাতেও ছিলেন তারা অনন্য। ফলে খুলনা টাইগার্সকে হারাতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি তাদের। ২১ রানের ব্যবধানে জিতে বিপিএলের নতুন চ্যাম্পিয়ন এখন রাজশাহী রয়্যালস।

ফাইনালের আরেক নায়ক মোহাম্মদ নওয়াজ। টুর্নামেন্টের বেশির ভাগ ম্যাচে বাইরে বসে থাকা পাকিস্তানি অলরাউন্ডার ফাইনালে জ্বলে উঠলেন ব্যাটে-বলে। ব্যাট হাতে দুর্দান্ত ইনিংসের পর বল হাতে নিলেন রাইলি রুশোর গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। এমনকি নায়ক হওয়ার সুযোগ ছিল মুশফিকের সামনে। কিন্তু খুলনা অধিনায়ক পারেননি শেষের কঠিন সমীকরণ মেলাতে। বরং তাকে ফিরিয়েই ম্যাচের উত্তেজনা অনেকটা শেষ করে দেন রাসেল।

এবারই প্রথম বিপিএলের ফাইনালে খেললেন মুশফিক। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ঘরোয়া ক্রিকেটে পাননি কোনো ট্রফি জয়ের স্বাদ। এবারও তার পাওয়া হলো না অধরা ট্রফির ছোঁয়া। নওয়াজ আর রাসেলের পারফরম্যান্সই ম্যাচে গড়ে দিয়েছে পার্থক্য। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা রাজশাহী প্রথম ১৫ ওভারে ছিল দিশাহীন। ওই দুজনের শেষের তান্ডবেই সম্ভাব্য মাঝারি রান থেকে তারা গড়তে পারে চ্যালেঞ্জিং স্কোর।

শেষ পাঁচ ওভারে দুজন মিলে তোলেন ৭০ রান। পাঁচে নেমে ১৬ বলে ২৭ রানে অপরাজিত ছিলেন রাসেল, ছয়ে নেমে ২০ বলে অপরাজিত ৪১ নওয়াজ। আর এই দুজন ব্যাটিংয়ে নামার আগে দারুণ ফিফটিতে রাজশাহীকে টানেন ইরফান শুক্কুর। তবে টপ অর্ডারের অন্যরা ছিলেন বিবর্ণ। শুরুটা যদিও তাদের জন্য ছিল আশা জাগানিয়া। ম্যাচের প্রথম ওভারে আমিরকে দারুণ এক কাট শটে বাউন্ডারি মারেন আফিফ। বাঁহাতি পেসারের পরের ওভারেও তার ব্যাট থেকে আসে দারুণ আরেকটি চার। তবে লড়াইয়ে জেতেন আমিরই। ওই ওভারেই মেহেদী হাসান মিরাজের দুর্দান্ত ক্যাচে ফেরেন আফিফ (৮ বলে ১০)।

শুক্কুর শুরু থেকেই ছিলেন সাবলীল। তবে লিটন খুঁজে ফিরছিলেন ছন্দ। শফিউল ইসলামকে যদিও শর্ট বলে ছক্কা মারেন, শহিদুল ইসলামের স্কোয়ারে মারেন চার। তারপরও টাইমিং পেতে ধুঁকছিলেন বাকিটা সময়। শুক্কুরের দারুণ ব্যাটিংয়ের পরও তাই রান রেট ছিল না খুব বেশি। লিটনের ভোগান্তি শেষ হয় দশম ওভারে। এবার অবশ্য টাইমিং ভালো করেছিলেন শহিদুলের বলে, কিন্তু সোজা মারেন ডিপ স্কয়ার লেগে ফিল্ডার নাজমুল হোসেন শান্তর কাছে। টুর্নামেন্টজুড়ে দারুণ খেলা ব্যাটসম্যান ফাইনালে করেন ২৮ বলে ২৫।

আর চারে নামা শোয়েব মালিককে আরও বেশি ধুঁকতে দেখা গেছে। পরপর দুই ম্যাচে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান ভোগালেন দলকে। এবার ৯ রান করেন ১৩ বল খেলে। এই সময়টায় রাজশাহীর রান বাড়ে কেবল শুক্কুরের ব্যাটে। মিরাজের এক ওভারে চার-ছক্কা মারেন তিনি, ছাড়েননি ফ্রাইলিঙ্ক-শফিউলকেও। প্রথম বিপিএল ফিফটি স্পর্শ করেন ৩০ বলে। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে আমির থামান ৩৫ বলে ৫২ রান করা ইরফানকে। রাসেল উইকেটে যাওয়ার পরপরই ছক্কা মেরে ছড়িয়ে দেন বার্তা।

তবে এরপরই দিয়েছিলেন সুযোগ। শহিদুলের বলে এক্সট্রা কাভার সীমানায় তার ক্যাচ নিতে পারেননি শান্ত। সেটির খেসারত দিতে হয়েছে দলকে। আমিরের বলে টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বড় ছক্কা মারেন রাসেল। বল ফেলেন পূর্ব গ্যালারির চূড়ায়। ওই ওভারেই নওয়াজ মারেন টানা দুটি চার। তার আগে রবি ফ্রাইলিঙ্কের ওভারে দুটি করে চার ও ছক্কা মারেন নওয়াজ। শফিউলের করা শেষ ওভার থেকেও দুজন নেন ১৫ রান। রাজশাহীর শেষটা হয় দারুণ।

এরপর রান তাড়ায় খুলনার আশায় বড় চোট লাগে শুরুতেই। আগের দুই ম্যাচে দুর্দান্ত পারফর্ম করা শান্ত ফিরে যান ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই। মোহাম্মদ ইরফানের বলে পয়েন্টে দারুণ ক্যাচ নেন লিটন। পরের ওভারেই আবু জায়েদ ফেরান মিরাজকে। শুরুর সেই ধাক্কা খুলনা দারুণভাবে সামাল দেয় শামসুর রহমান ও রাইলি রুশোর ব্যাটে। এই জুটি জমে যাওয়ার পেছনে রাজশাহীরও খানিকটা অবদান আছে। শোয়েব মালিকের বলে রুশোর সহজ ক্যাচ ছাড়েন আবু জায়েদ।

১৮ রানে পাওয়া জীবনটাকে অবশ্য খুব বড় ইনিংসে রূপ দিতে পারেননি রুশো। ২৬ বলে ৩৭ করে বিদায় নেন তিনি নওয়াজের বলে। শামসুরের সঙ্গে তার জুটিতে ৭৬ রান আসে ৯ ওভারে। খুলনা তারপরও পথে ছিল ভালোভাবেই। এক ওভারেই ম্যাচের গতিপথ ঘুরিয়ে দেন কামরুল ইসলাম রাব্বি। শামসুর আউট হন ৪৩ বলে ৫২ করে। তিন বল পর ফিরিয়ে দেন নাজিবউলস্নাহ জাদরানকেও।

এরপর ভরসা ছিলেন মুশফিক। চেষ্টাও করেন তিনি। তবে আরেক পাশে রবি ফ্রাইলিঙ্ক পারেননি দ্রম্নত রান তুলতে। সমীকরণ তাই কঠিন হতে থাকে ক্রমাগত। শেষ তিন ওভারে প্রয়োজন পড়ে ৪০ রান। অষ্টাদশ ওভারে দারুণ ইয়র্কারে মুশফিককে (১৫ বলে ২১) বোল্ড করে ম্যাচের ভাগ্য চূড়ান্ত করে দেন রাসেল। শেষ ওভারে রাজশাহী অধিনায়ক পান আরেকটি উইকেট। মেতে ওঠেন বাঁধনহারা উচ্ছ্বাসে।

পেস্নয়ার্স ড্রাফট শেষে খুব বেশি আলোচনায় ছিল না যে দল, পরে রাসেলকে দলে নিয়ে যারা দেখায় চমক, শেষ পর্যন্ত সেই রাজশাহীই নিজেদের তুলে নিল সেরার উচ্চতায়। টুর্নামেন্টজুড়ে দারুণ ক্রিকেট উপহার দিয়েও খুলনার প্রাপ্তি শেষের হতাশা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

রাজশাহী রয়্যালস: ২০ ওভারে ১৭০/৪ (লিটন ২৫, আফিফ ১০, শুক্কুর ৫২, মালিক ৯, রাসেল ২৭*, নওয়াজ ৪১*; আমির ৪-০-৩৫-২, ফ্রাইলিঙ্ক ১/৩৩, তানভির ০/১১, শফিউল ০/৩৮, মিরাজ ০/২৭, শহিদুল ১/২৩)।

খুলনা টাইগার্স: ২০ ওভারে ১৪৯/৮ (শান্ত ০, মিরাজ ২, শামসুর ৫২, রুশো ৩৭, মুশফিক ২১, নাজিবউলস্নাহ ১, ফ্রাইলিঙ্ক ১২, শহিদুল ০, শফিউল ৭*, আমির ১*; ইরফান ২/১৮, আবু জায়েদ ১/২৪, রাসেল ২/৩২, মালিক ০/১৫, নওয়াজ ১/২৯, কামরুল রাব্বি ২/৯)।

ফল: রাজশাহী রয়্যালস ২১ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ফাইনাল ও টুর্নামেন্ট: আন্দ্রে রাসেল

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<84892 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1