বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী কায়সারের ফাঁসি আপিলেও বহাল

নতুনধারা
  ১৫ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০
মোহাম্মদ কায়সার

যাযাদি রিপোর্ট

মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণের মতো যুদ্ধাপরাধের দায়ে সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের মৃতু্যদন্ডের যে রায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনাল দিয়েছিল, সর্বোচ্চ আদালতের চূড়ান্ত রায়েও তা বহাল রয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের এ সিদ্ধান্তের ফলে জাতীয় পার্টির সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারকে ফাঁসিকাষ্ঠেই যেতে হবে।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারকের আপিল বেঞ্চ মঙ্গলবার মাত্র এক মিনিটে রায়ের সংক্ষিপ্তসার জানিয়ে দেয়। কায়সারের আপিল আংশিক মঞ্জুর করা হলেও দুটি অভিযোগে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের ভিত্তিতে এবং একটি অভিযোগে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে সর্বোচ্চ সাজা বহাল থাকে।

এই বেঞ্চের অন্য তিন সদস্য হলেন- বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি জিনাত আরা এবং বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান।

একাত্তরের মুসলিম লীগ নেতা কায়সার ছিলেন পাকিস্তানি বাহিনীর একজন বিশ্বস্ত সহযোগী। 'কায়সার বাহিনী' নামে দল গড়ে তিনি যেসব যুদ্ধাপরাধ ঘটিয়েছেন, সে জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জের মানুষ তাকে একজন কুখ্যাত ব্যক্তি হিসেবেই চেনে।

সেই কায়সারই স্বাধীন বাংলাদেশে জিয়াউর রহমানের আমলে হয়ে যান

বিএনপির লোক, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সময় জাতীয় পার্টির; দল বদলের কৌশলে প্রতিমন্ত্রীও বনে যান।

২০১৪ সলের ২৩ ডিসেম্বর ট্রাইবু্যনাল তার রায়ে বলেছিল, 'কায়সার এতটাই নগ্নভাবে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পক্ষ নিয়েছিলেন যে নিজের গ্রামের নারীদের ভোগের জন্য পাকিস্তানিদের হাতে তুলে দিতেও কুণ্ঠিত হননি।'

সেই রায়ে সাতটি অভিযোগে ট্রাইবু্যনাল কায়সারকে মৃতু্যদন্ড দেয়, যার মধ্যে দুই নারীকে ধর্ষণের ঘটনা রয়েছে। এই দুই বীরাঙ্গনার মধ্যে একজন এবং তার গর্ভে জন্ম নেওয়া এক যুদ্ধশিশু এ মামলায় সাক্ষ্যও দেন। আর একটি ঘটনায় ছিল নির্বিচারে হত্যার অভিযোগ।

এছাড়া অপহরণ, আটকে রেখে নির্যাতন ও হত্যায় সংশ্লিষ্টতার চারটি অভিযোগে তাকে আমৃতু্য কারাদন্ড এবং তিনটি অভিযোগে আরও ২২ বছরের কারাদন্ড দিয়েছিল যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবু্যনাল।

আপিলের রায়ে তিনটি অভিযোগে কায়সারের মৃতু্যদন্ড বহাল রাখা হয়েছে। তিনটি অভিযোগে তার প্রাণদন্ডের সাজা কমিয়ে আমৃতু্য কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। একটি অভিযোগে ট্রাইবু্যনাল কায়সারকে মৃতু্যদন্ড দিলেও আপিল বিভাগ তাকে খালাস দিয়েছে।

২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধের বহু প্রতীক্ষিত বিচার শুরুর পর আপিলে আসা এটি নবম মামলা, যার ওপর চূড়ান্ত রায় হলো।

নিয়ম অনুযায়ী আসামি এ রায় পর্যালোচনার আবেদন করতে পারবেন। তাতে সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত না বদলালে আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারবেন। তাতেও তিনি বিফল হলে সরকার সাজা কার্যকরের পদক্ষেপ নেবে।

রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের আইনজীবী এসএম শাহজাহান সাংবাদিকদের বলেন, 'রায়ের অনুলিপি পেলে ভালো মত দেখে রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করা হবে।'

অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, 'এ রায়ে আমাদের দেশে ধর্ষণে সহযোগিতা করার দায়ে প্রথম কোনো আসামিকে মৃতু্যদন্ড দেওয়া হলো। ওই অভিযোগের যে ভিকটিম, সে নিজে কোর্টে এসে সাক্ষ্য দিয়েছে এবং তার মেয়েও আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে বলেছে দুর্দশার কথা।

এই ১২ নম্বর অভিযোগটিতে চার বিচারপতিই একমত হয়ে মৃতু্যদন্ড বহাল রেখেছেন। আর ৫ ও ১৬ নম্বর অভিযোগে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে মৃতু্যদন্ড দিয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<84432 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1