বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ওষুধের দোকানের আড়ালে জমজমাট ইয়াবা ব্যবসা

যাযাদি রিপোটর্
  ১৭ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০
রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের দুটি বাসা থেকে ইয়াবাসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব Ñযাযাদি

জহির আহাম্মেদ ওরফে মৌলভী জহির (৬০)। ঢাকা ও টেকনাফে দুই জায়গায় বিচরণ তার। টেকনাফে ওষুধের দোকান আছে। কিন্তু এই ব্যবসার আড়ালে তিনি ইয়াবা ব্যবসা করেন। তার সঙ্গে জড়িত স্ত্রী, ছেলেমেয়ে ও জামাতাসহ অন্যান্য স্বজন।

জহিরের ইয়াবা ব্যবসার সন্ধান পায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এরপর অভিযান। অভিযানে র?্যাব-২ বুধবার রাতে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের দুটি বাসা থেকে দুই লাখ সাত হাজার ১০০টি ইয়াবা উদ্ধার করে। মাদক বিক্রির ১৬ লাখ ৬৪ হাজার টাকাসহ ছয়জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়। র?্যাব বলছে, উদ্ধার করা মাদকদ্রব্যের মূল্য প্রায় সাত কোটি ২৫ লাখ টাকা।

বৃহস্পতিবার কারওয়ান বাজারে র?্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র?্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ। জহির ছাড়া গ্রেপ্তার করা অন্যরা হলেন ফয়সাল আহাম্মেদ (৩১), মিরাজ উদ্দিন নিশান (২১), তৌফিকুল ইসলাম ওরফে সানি (২১), সঞ্জয় চন্দ্র হালদার (২০) ও মমিনুল আলম ওরফে মোমিন (৩০)।

মুফতি মাহমুদ বলেন, জহির হলেন ইয়াবা চোরাচালান চক্রটির মূল হোতা। তিনি ও তার বড় ছেলে জহিরুল ইসলাম ওরফে বাবু (২৮) পঁাচ-ছয় বছর ধরে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বাসাভাড়া করে ইয়াবা ব্যবসা করছেন। বাবু গত ২৫ এপ্রিল মাদকদ্রব্যসহ ধানমÐি এলাকা থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে গ্রেপ্তার হন। এখন তিনি কারাগারে। ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত জহিরের স্ত্রী, মেয়ে, বড় জামাতা আবদুল আমিন, জামাতার ভাই নুরুল আমিন। জহিরের সঙ্গে টেকনাফের বেশ কয়েকজন জড়িত। এই সিন্ডিকেটে আরও জড়িত পরিবহন খাতে

কমর্রত কয়েকজন চালক ও সহকারী, দুটি কুরিয়ার সাভিের্সর কমর্চারী, ঢাকার কয়েকজন খুচরা বিক্রেতা। এই সিন্ডিকেটের সদস্য সংখ্যা ২৫-৩০ জন।

মুফতি মাহমুদ বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে জহির জানান, এই সিন্ডিকেটের মিয়ানমারের প্রতিনিধি আলম ওরফে বমার্ইয়া আলম। তিনি মিয়ানমারের মংডুতে স্থায়ীভাবে বাস করছেন। টেকনাফেও বমার্ইয়া আলমের একটি বাড়ি রয়েছে। তিনি টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা দিয়ে নৌপথে মংডু থেকে ইয়াবা পাচার করে টেকনাফের নাজিরপাড়া, জালিয়াপাড়াসহ টেকনাফের বিভিন্ন এলাকার বাড়িতে ইয়াবা মজুদ রাখেন। মজুদ করা ইয়াবা জহির ও তার জামাতা আবদুল আমিন, নুরুল আমিন ও মোমিন টেকনাফে বমার্ইয়া আলমের কাছ থেকে সংগ্রহ করে থাকেন। পরে তারা টেকনাফ বা কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী বিভিন্ন পরিবহন, কুরিয়ার সাভিের্সর মাধ্যমে ঢাকায় পাঠান।

বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রিক্যাল সরঞ্জামাদি যেমনÑ ফ্যান, ওয়াশিং মেশিন, এসি ইত্যাদির ভেতর ইয়াবা লুকিয়ে পরিবহন বা কুরিয়ার সাভিের্সর মাধ্যমে ঢাকায় পাঠানো হতো। যাত্রীবাহী বাসে পরিবহনের সময় টেকনাফের দুই ব্যক্তি বাহক হিসেবে কাজ করতেন। মাঝেমধ্যে বহনকারী ছাড়া নিধাির্রত চালক ও সহকারীর মাধ্যমেও ঢাকায় ইয়াবা পাঠানো হতো। উদ্ধারকৃত ইয়াবাগুলো সাত-আট দিন আগে দুটি চালানে কাটের্ন এসি ও ফ্যানের ভেতরে ঢুকিয়ে ঢাকায় আনা হয়েছিল। এই সিন্ডিকেটের আবদুল আমিন ও তার ভাই নুরুল আমিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকায় আছেন।

র?্যাব বলছে, ফয়সাল আহাম্মেদ জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তিনি একটি বেসরকারি ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার পদে কমর্রত। তিন বছর ধরে ইয়াবা সেবন করে আসছেন এবং ধীরে ধীরে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন।

জিজ্ঞাসাবাদে মিরাজ উদ্দিন জানান, তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্সে প্রথম সেমিস্টারে পড়েন। গ্রেপ্তার করা মোমিন ও তার বাড়ি একই অঞ্চলে হওয়ায় পরিচয় সূত্রে তিনি ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। তিনি ইয়াবা সেবনকারীও।

জিজ্ঞাসাবাদে তৌফিকুল ইসলাম জানান, তিনি ঢাকায় একটি কলেজে ম্যানেজমেন্টে প্রথম বষের্ পড়েন। তার কলেজের বন্ধু গ্রেপ্তারকৃত মিরাজ উদ্দিন নিশানের সূত্র ধরে গ্রেপ্তারকৃত মোমিনের সঙ্গে পরিচয়। তিনি গত দেড় বছর থেকে ইয়াবা সেবন এবং ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত।

জিজ্ঞাসাবাদে সঞ্জয় চন্দ্র হালদার জানান, তিনি মাদারীপুর একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে বতর্মানে পারিবারিক ব্যবসায় যুক্ত হয়েছেন। তিনি এক বছর ধরে ইয়াবা সেবন করছেন এবং গ্রেপ্তারকৃত তৌফিকুল ইসলামের মাধ্যমে গ্রেপ্তারকৃত নিশানের সঙ্গে পরিচয় সূত্রে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। তিনি ইয়াবা সংগ্রহ করে শরীয়তপুরে খুচরা বিক্রি করে আসছিলেন।

মুফতি মাহমুদ বলেন, তারা গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। তিনি মনে করেন, জিজ্ঞাসাবাদে আরও তথ্য বেরিয়ে আসবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<8287 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1