শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকার হাসপাতালে ২০ বছর আগের ওষুধে অস্ত্রোপচার

যাযাদি রিপোটর্
  ১৭ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

অস্ত্রোপচারে ২০ বছর আগে মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া ওষুধের ব্যবহারের মতো বিস্ময়কর ঘটনার প্রমাণ মিলেছে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে।

অনিয়মের এখানেই শেষ নয়, এই চিকিৎসালয়ে যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়ার পরও রোগ পরীক্ষা করা হতো। তবে সেই রিপোটর্ দেয়া হতো আন্দাজে।

হাসপাতালটির পরিবেশ এতটাই নোংরা যে, অভিযান চালানো ম্যাজিস্ট্রেট একে ‘ময়লার ভাগাড়’ বলেছেন।

হাসপাতালের মালিকপক্ষ কেবল ‘ভুল হয়ে গেছে, আর করব’ না বলে পার পাওয়ার চেষ্টা করেন।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর পান্থপথের ‘বাংলাদেশ স্পাইন অ্যান্ড অথোের্পডিক জেনারেল হাসপাতাল’ পরিদশর্ন করে ওই ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় এই চিত্র দেখা যায়।

র‌্যাবের নিবার্হী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমের নেতৃত্বে র‌্যাব-২-এর এই অভিযানে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের

কমর্কতার্রাও অংশ নেন।

হাসপাতালের পরিবেশ দেখে হতভম্ভ ম্যাজিস্ট্রেট মনোকষ্ট পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। বলেছেন, ‘এই প্রতিষ্ঠানকে হাসপাতাল বললে ভুল হবে। এটাকে ময়লার ভাগাড় বললে বুল হবে না। তাদের কোনো কিছুই ঠিক নেই। খুবই ব্যথিত হয়েছি এখানে অভিযান চালিয়ে। এতদিন তারা মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করেছে।’

প্রায়ই বেসরকারি হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে নানা অনিয়ম দেখতে পাওয়া যায়। তবে এই হাসপাতালে যা পাওয়া গেছে সেটি বিস্ময়ের মাত্রাকেও অতিক্রম করে গেছে অভিযান চালানো দলকে।

অভিযান চলাকালে হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে মাকড়সার জাল দেখা যায়। সেখানকার শয্যায় ছিল ধুলোবালি।

এখানে রোগ পরীক্ষাগারে অনিয়ম আরও ভয়াবহ। তাদের কোনো মেশিন কাজ করে না। ফলে পরীক্ষা না করেই রিপোটর্ দেয়া হতো বলে জানিয়েছেন ম্যাজিস্ট্রেট। তিনি জানান, যেসব কাগজে রিপোটর্ দেয়া হতো, সেখানে আগেভাগেই বেশ কিছু ডাক্তারের সিল মারা ছিল। হাসপাতালের কমীর্রা পরে রিপোটর্ বসিয়ে দিতেন।

ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, ‘অপারেশন থিয়েটারে দেখা গেছে পুরাতন সব ওষুধ, মেয়াদোত্তীণর্ স্যালাইনের পাইপ, বিভিন্ন রকম অপারেশনের নিডল যার সবই মেয়াদহীন ও ময়লার মধ্যে পড়ে ছিল।’

‘এ ছাড়া বেশকিছু ওষুধ ছিল যার মেয়াদ ১৯৯৮ সালে শেষ হয়ে গেছে। তাদের বøাড ব্যাংকে গিয়ে দেখা গেছে সেখানেও খারাপ অবস্থা।’

তবে এতসব অনিয়মের পরও হাসপাতালটি কৃপা পেয়েছে সেটি বলাই যায়। কারণ, তাদের ১০ লাখ টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার বলেন, ‘রোগীদের কথা বিবেচনা করে হাসপাতালটি সিলগালা করে দেয়া হয়নি।’

হাসপাতালের কমীের্দর কোনো ব্যাখ্যা ছিল না এসব ঘটনায়। এখানকার দুইজন মালিকের একজন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা দুঃখিত। ভুল হয়ে গেছে। ভবিষ্যতে আর করব না।’

হাসপাতালের কমীর্রা জানান, এই চিকিৎসালয়টির মালিক দুইজন। তবে তাদের নাম কেউ বলতে রাজি হলেন না।

এদিকে অভিযানকালে হাসপাতালের মালিকপক্ষের বেশ দৌড়ঝঁাপ করতে দেখা যায়। তারা জরিমানা বন্ধ করতে প্রশাসন ও সরকারে উচ্চপদস্থ কমর্কতাের্দর পরিচয় দিতে থাকেন।

উপস্থিত র‌্যাব কমর্কতার্ নাম প্রকাশ না করার শতের্ বলেন, ‘মালিকপক্ষের একজন আমাকে সাইডে ডেকে নিয়ে বলেন, আমার বন্ধু র‌্যাবের সিনিয়র কমর্কতার্। আরেকজন প্রধানমন্ত্রী দপ্তরের ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে আছেন। এই ম্যাজিস্ট্রেট (সারওয়ার আলম) কি তার সঙ্গে কথা বলবেন?’

জবাবে র‌্যাবের এই কমর্কতার্ বলেন, ‘স্যারকে গিয়ে বলেন। তবে সাবধান, স্যার (সারওয়ার আলম) কিন্তু কারও কথা শোনেন না। বেশি লাফালে কিন্তু সব বন্ধ করে দেবেন। কারণ উনি অনেক বড় বড় হাসপাতালে অভিযান করেছেন, কারও সুপারিশ রাখেন না।’

বিআরবি হাসপাতালকেও জরিমানা

এর আগে একই এলাকায় স্বনামধন্য বিআরবি হাসপাতালে অভিযানে যায় র‌্যাবের দল। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, তাদের বøাড কালচার সঠিকভাবে করছে না।

এ ছাড়া বেশকিছু রক্তের পরীক্ষা বাইরে থেকে করে আনা হতো এখানে যা সম্পূণর্ অবৈধ।

এই হাসপাতালের ১৩ তলায় একটি ওষুধের গুদাম ছিল যেটার কোনো অনুমোদন ছিল না। পরে এসব অনিয়মের দায়ে তাদের জরিমানা করা হয় দুই লাখ টাকা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<8272 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1