শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ

যাযাদি রিপোটর্
  ১৬ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০
ঘাতকের বুলেট থামাতে পারেনি বঙ্গবন্ধুর প্রতি বাঙালির হৃদয়ের আকুতি। বুধবার জাতীয় শোক দিবসে ধানমÐিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে তার প্রতি অশেষ শ্রদ্ধা জানান সবর্স্তরের মানুষ Ñযাযাদি

গভীর শোকাবহ পরিবেশে বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় বিভিন্ন কমর্সূচির মধ্য দিয়ে সারাদেশে পালিত হলো হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৩তম শাহাদতবাষির্কী ও জাতীয় শোক দিবস। বুধবার রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত এ দিবসের শুরুতে তার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। দিনটি পালনের অংশ হিসেবে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর কবরে শ্রদ্ধাঞ্জলি, দোয়া-মাহফিল, আলোচনা সভা, দেশব্যাপী গরিব ও দুস্থদের মধ্যে খাদ্য বিতরণ করা হয়। সমাজসেবা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ১০ হাজার ১৫২ বার পবিত্র কোরআন খতম দেয়া হয়। এছাড়া রক্তদান কমর্সূচি, শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, আলোকচিত্র প্রদশর্নীসহ নানা কমর্সূচিতে বাঙালির মুক্তির পথপ্রদশের্কর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানায় রাষ্ট্র ও সরকারের ঊধ্বর্তন ব্যক্তিসহ দেশের আপামর মানুষ।

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বুধবার সরকারি, আধাসরকারি, বেসরকারি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসহ সব প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অধর্নমিত রাখা হয় এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। রাজপথ থেকে অলিগলি সবর্ত্রই বঙ্গবন্ধুর ছবি, শোক প্রকাশ করে বিভিন্ন ব্যানার-ফেস্টুন লাগানো হয়। সব মিলিয়ে সারাদেশেই বিরাজ করছিল শোকাবহ এক পরিবেশ।

এদিন বিভাগীয় ও জেলা শহরে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসায় যথাযোগ্য মযার্দায় দিনটি পালিত হয়। সবর্স্তরের মানুষ শোকের এ দিনে বিভিন্ন কমর্সূচিতে নিজেদের একাত্মতা ঘোষণা করেন। দেশের সব মসজিদে দোয়া মাহফিলের পাশাপাশি সব ধমীর্য় উপাসনালয়ে বঙ্গবন্ধু ও অন্য শহীদদের জন্য প্রাথর্না করা হয়। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কমর্ নিয়ে সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ সব বেসরকারি রেডিও এবং টিভি চ্যানেল থেকে প্রচার করা হয় বিশেষ অনুষ্ঠান। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বুধবার ছিল সরকারি ছুটির দিন।

সূযোর্দয়ের ক্ষণে বঙ্গবন্ধু ভবন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কাযার্লয়সহ দেশব্যাপী সব দলীয় কাযার্লয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অধর্নমিতকরণের মাধ্যমে শোক দিবসের কমর্সূচি শুরু হয়। সকাল সাড়ে ৬টায় ধানমÐি ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে তার প্রতিকৃতিতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রদ্ধাঞ্জলি অপর্ণ করেন। সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল এ সময় সালাম জানায়। বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। পরে কোরআন থেকে তেলাওয়াত করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

এরপর শ্রদ্ধা জানান জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এরপর শ্রদ্ধা জানান। পরে দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় সঙ্গে ছিলেন উপদেষ্টামÐলীর সদস্য শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমÐলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, আবদুর রাজ্জাক, সম্পাদকমÐলীর সদস্য খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আবদুস সোবহান গোলাপ, দেলোয়ার হোসেনসহ অনেকে।

পরে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, আওয়ামী যুবলীগ, যুব মহিলা লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সহযোগী অঙ্গ ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকমীর্রা, সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী স্থান ত্যাগ করার পর বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে দলীয় নেতাকমীের্দর পাশাপাশি সবর্স্তরের মানুষের ঢল নামে। পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খেতে হয় নিরাপত্তারক্ষীদের। পুষ্পে পুষ্পে ভরে যায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ও এর আশপাশ।

বনানীতে শহীদদের কবরে শ্রদ্ধা : বনানী কবরস্থানে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ১৫ আগস্ট নিহত স্বজনদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানাসহ দলের অন্য নেতারা। নিহতদের স্মরণে বেশ কিছুক্ষণ দঁাড়িয়ে থাকেন প্রধানমন্ত্রী ও তার সঙ্গীরা। সেখানে ফাতিহা পাঠ ও মোনাজাতে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। প্রত্যেক শহীদের কবরে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বনানী কবরস্থান সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এরপর সেখানে আওয়ামী লীগের সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম-সমমনা সংগঠনসহ সবর্স্তরের অগণিত মানুষ নিহতদের স্মরণে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা : জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল ১০টার পর বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধের বেদিতে পুষ্পাঘর্্য অপর্ণ করেন তিনি। এরপর ছোট বোন শেখ রেহানা ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ফাতিহা পাঠ ও মোনাজাতে অংশ নেন।

প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানান দলটির কেন্দ্রীয় ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা। এরপর বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধ কমপ্লেক্স মসজিদ প্রাঙ্গণে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, এলজিইডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খোন্দকার মোশাররফ হোসেন, নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাহাজান খান এমপি, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, লে. কনের্ল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামÐলীর সদস্য কাজী আকরাম উদ্দীন আহমেদ, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, ধমির্বষয়ক সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, প্রধানমন্ত্রীর চাচাতো ভাই শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি, গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি চৌধুরী এমদাদুল হক, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খান, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী লিয়াকত আলী লেকু, সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম মিঠুসহ অনেকে।

বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির মিলাদ : জাতীয় শোক দিবস ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৩তম শাহাদাতবাষির্কী উপলক্ষে বুধবার বাদ জোহর বঙ্গভবনে দরবার হলে দোয়া ও মিলাদের আয়োজন করা হয়। এ সময় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট একদল ঘাতকের বুলেটে নিমর্মভাবে নিহত হন বঙ্গবন্ধু, তার পরিবারের সদস্য ও ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সবোর্চ্চ আত্মত্যাগকারী শহীদ এবং বিভিন্ন সময় গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে রাষ্ট্রপতির পরিবারের সদস্য, সংশ্লিষ্ট সচিব, বেসামরিক ও সামরিক কমর্কতার্ এবং বঙ্গভবনের কমর্কতার্-কমর্চারীরা মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে যোগ দেন। বঙ্গভবন জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মুহাম্মদ সাইফুল কবির মোনাজাত পরিচালনা করেন। এর আগে বঙ্গভবনে দরবার হলে চলচ্চিত্র প্রকাশনা অধিদপ্তরের পরিচালনায় বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কমের্র ওপর একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদশর্ন করা হয়।

১৯৭৫ সালের শোকাবহ এই কালো দিবসে সেনাবাহিনীর কিছু সংখ্যক বিপথগামী সদস্য ধানমÐির বাসভবনে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<8128 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1