বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

পৌষের হাড়কাঁপানো শীতে কাঁপছে দেশ

যাযাদি রিপোর্ট
  ২০ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০
রাজধানীসহ সারাদেশে বইছে শৈত্যপ্রবাহ। এতে বিপর্যস্ত জনজীবন। ছবিটি বৃহস্পতিবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চিটাগাং রোড এলাকা থেকে তোলা -ফোকাস বাংলা

'মাঘের শীত, বাঘের গায়ে'- গ্রামবাংলায় এ প্রচলিত প্রবাদ ভেঙে এবার পৌষের শুরুতেই হাড় কাঁপানো শীত সারাদেশে জেঁকে বসেছে। এর সঙ্গে পালস্না দিয়ে দিনভর পথঘাট ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে থাকায় সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা আরও বিপর্যস্ত করে তুলেছে। শীতের কারণে স্বাভাবিক কর্মকান্ডে স্থবিরতা নামায় নিম্নআয়ের শ্রমজীবী মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচলেও বিঘ্ন ঘটছে। যাত্রীবাহী বাস, লঞ্চ ও ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছতে বিলম্ব হচ্ছে। বাসে ৭ ঘণ্টার পথ যেতে কোনো কোনো রুটে ১৪ ঘণ্টা সময় লাগছে।

আবহাওয়াবিদরা জানান, পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় এই শৈত্যপ্রবাহের বিস্তার আরও বাড়তে পারে। সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা আরও কিছুটা কমবে। তবে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে। ২২ ডিসেম্বরের পর তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে। আর ২৫ ডিসেম্বরের পর আবার মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর প্রভাব বেশি পড়তে পারে রাজশাহী, যশোর, খুলনা অঞ্চলে। মাঝারি আকারের শৈত্যপ্রবাহ হলে এই তিন অঞ্চল ছাড়াও অন্য অঞ্চলেও এর প্রভাব পড়তে পারে।

এদিকে বুধবার থেকে রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৌসুমের প্রথম শৈত্য প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকালে চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্র ৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। যা চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। থার্মোমিটারের পারদ ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে এসেছে রাজশাহী, ঈশ্বরদী, নওগাঁর বদলগাছী, কুড়িগ্রামের রাজারহাট ও যাশোরেও। ঢাকায় বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বুধবার দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল টেকনাফে ২৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস

বা কম থাকলে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে বলে ধরা হয়। থার্মোমিটারের পারদ ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলে। আর পারদ ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ চলছে বলে ধরা হয়।

আবহাওয়াবিদ আফতাব উদ্দিন বলেন, 'আরও অন্তত দুইদিন রাতের তাপমাত্রা কমবে। উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে। ২১ ডিসেম্বর শনিবার পর্যন্ত প্রচন্ড শীতের প্রকোপ অনুভূত হবে। এরপর দিন ও রাতের তাপমাত্রা খানিকটা বাড়বে।

এদিকে গ্রামাঞ্চলের সঙ্গে পালস্না দিয়ে খোদ রাজধানীতেও হাড় কাঁপানো শীত জেঁকে বসেছে। আবহাওয়াবিদরা জানান, উত্তরের কনকনে হিম বয়ে আনা বাতাসের কারণে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। এছাড়া বর্তমানে রাজধানীতে রাত দিনের তাপমাত্রার পার্থক্য প্রায় অর্ধেক কমে আসায় তা মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগামীতে এ পার্থক্য আরও কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে ঠান্ডার অনুভূতি আরও বাড়বে।

আবহাওয়াবিদ আরিফ হোসেন বলেন, উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে আসছে বাতাস, যেটাকে আমরা 'উত্তরা বাতাস' বলে থাকি। ঢাকায় বর্তমানে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৮ থেকে ১২ কিলোমিটার। এই বাতাস কনকনে হিম বয়ে এনে হাড় কাঁপুনির সৃষ্টি করেছে। এই বাতাস না থাকলে দিনের তাপমাত্রা এত কমতো না। আর এত ঠান্ডাও অনুভূত হতো না।

এই আবহাওয়াবিদ আরও জানান, স্থান ভেদে ২১ ও ২২ ডিসেম্বরের দিকে ঠান্ডা অনুভূতি কমে আসবে। এরপর আসতে পারে নিম্নচাপ। এক্ষেত্রে ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ দেশবাসীকে মাঝারি (৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা) ধরনের শৈত্যপ্রবাহের মধ্য দিয়ে যেতে হতে পারে।

পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ বর্তমানে হিমালয়ের পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। আর মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ অবস্থান করছে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে। তাই বৃহস্পতিবারও (১৯ ডিসেম্বর) অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। আর মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে মাঝারি ধরনের ঘনকুয়াশা এবং দেশের অন্যত্র কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।

ধামইরহাট (নওগাঁ): নওগাঁর ধামইরহাটে প্রচন্ড শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে নিম্নবিত্তের মানুষ শীতবস্ত্রের অভাবে ভীষণ কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। ঘন কুয়াশার কারণে বাস, ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহন হেড লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের গরম কাপড় হিসেবে কম্বল বিতরণ চলছে। এদিকে তীব্র শীতের কারণে অনেকে ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে।

শেরপুর: শৈত্যপ্রবাহের কারণে শেরপুরের মানুষ কাবু হয়ে পড়েছে। সারাদিন সূর্যের দেখা না মেলায় কর্মজীবী মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে বেশি। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা কেউ কেউ শীত উপক্ষো করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গেলেও উপস্থিতির সংখ্যা খুবই কম। অতি প্রয়োজন না হলে সহজেই কেউ সকাল সকাল বাড়ির বাইরে বের হচ্ছে না। সেখানকার তাপমাত্রা বুধবারের চেয়ে ১ ডিগ্রি কমে ১৪ ডিগ্রিতে এসে ঠেকেছে বলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

রাজারহাট (কুড়িগ্রাম): কুড়িগ্রামের রাজারহাটে শৈতপ্রবাহের কারণে মানুষজনের দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। গত ৩ দিন ধরে সেখানে স্পষ্টভাবে সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। হিমেল হাওয়ার সঙ্গে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মতো 'শীত বৃষ্টি' হচ্ছে। শীত নিবারণের জন্য গ্রামঞ্চলের মানুষ খড়কুটো জড়ো করে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে আগুন পোহাচ্ছে। তিস্তা ও ধরলা নদীর চরাঞ্চলে ছিন্নমূল মানুষ সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে। সেখানে সরকারিভাবে কিছু শীতবস্ত্র বিতরণ করা হলেও তা চাহিদার তুলনায় ছিল অপ্রতুল।

নীলফামারী: গত তিনদিন ধরে সেখানে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তীব্র শীতে মানুষজনের পাশাপাশি গবাদি পশুও যবুথবু হয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা জানান, এ এলাকা হিমালয়ের কাছাকাছি হওয়ায় প্রতিবছরেই মতো এবারও নীলফামারীতে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। সৈয়দপুর আবহাওয়া অফিস সূত্র মতে, বৃহস্পতিবার নীলফামারীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঘন কুয়াশার কারণে দুপুর পর্যন্ত সূর্যের মুখ দেখা যায়নি।

কাউনিয়া (রংপুর): পৌষের শুরুতেই রংপুরের কাউনিয়ায় জেঁকে বসেছে শীত। বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ।

রংপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজার রহমান জানান, এই অঞ্চলে গত বছরের চেয়ে এ বছর শীতের তীব্রতা অনেক বেশি। গত বছর ১৯ ডিসেম্বর সর্বনিম্ন ১২ দশমিক ০৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। কিন্তু এ বছর এইদিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার সর্বনিম্ন ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রংপুরে শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় তাপমাত্রা সর্বনিম্ন ৮ ডিগ্রিতে নামতে পারে।

ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহে শীতের তীব্রতা ভীষণভাবে বেড়েছে। বেলা বাড়ার সাথে তা কিছুটা কমলেও বিকালের পর আবার বাড়ছে শীত। এছাড়া ঘনকুয়াশার কারণে সকাল থেকে মহাসড়কগুলোতে সব ধরনের যান্ত্রিক যানবাহন হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। সরকারের পক্ষ থেকে সেখানে নিম্নবিত্তের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হচ্ছে।

রংপুর: হিমেল হাওয়ার সাথে শীত জেকে বসেছে। গত দুইদিন ধরে সেখানে সূর্যের দেখা নেই। রংপুরে গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছায় তিস্তা নদী বেষ্টিত প্রায় ৮০টি চলাঞ্চল রয়েছে। এসব চরাঞ্চলে প্রায় তিন লাখ মানুষের বসবাস। তীব্র শীত ও হিমেল হাওয়ায় সেখানকার দারিদ্র্য মানুষ চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। রংপুরে ৬০ হাজার ৩৫০ পিচ কম্বল শীতার্থদের মাঝে ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।

ফরিদপুর:দেশের মধ্যঞ্চল ফরিদপুরে শীত জেঁকে বসেছে। এর উপর ঘনকুয়াশার কারণে সেখানকার স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় অনেকটা স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। গোটা এলাকায় শীতজনিত নানা রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা এতে আক্রান্ত হচ্ছে। আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, গত দুইদিন এ জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সরকারিভাবে নয় উপজেলায় দরিদ্র শীতার্ত মানুষের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।

পঞ্চগড়: সেখানে প্রতিদিনই তাপমাত্রা কিছুটা কমছে। মঙ্গলবার ও বুধবার জেলার কোথাও সূর্যের দেখা না মিললেও বৃহস্পতিবার দুপুরে রোদের ঝলক দেখা গেছে। সকালে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস সর্বনিম্ন ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে। কনকনে শীতে ছিন্নমূল খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। খড়কুটো জ্বালিয়ে তারা শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। আবহাওয়া অফিস বলছে, চলতি সপ্তাহে জেলায় মৃদু অথবা মাঝারি ধরনের শৈতপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেখানে এখন পর্যন্ত ৩০ হাজার কম্বলসহ শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে।

ঝিনাইদহ: ঘনকুয়াশা আর তীব্র শীতে সেখানকার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীত কিছুটা কমলেও বিকালের পর থেকে শীত ও বাতাসের তীব্রতা বাড়ছে। শীতের কারণে শ্রমজীবী, পথচারী থেকে শুরু করে নানা বয়সি মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। বিশেষ করে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ দুর্ভোগের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকালে ঘন কুয়াশার কারণে মহাসড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে বাস, ট্রাকসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: শীতের তীব্রতায় সেখানকার মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাত্রায় ছন্দপতন ঘটেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের সদর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শীতার্থদের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যেই তাদের মধ্যে চার হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। রোদ না ওঠায় সেখানকার মানুষ দুইদিন ধরে ধান শুকাতে পারছে না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<80676 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1