রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে রাজি করানোর জন্য মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধিদল গত দুই দিন (বুধ ও বৃহস্পতিবার) যাবৎ উখিয়ার শরণার্থী ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনা করলেও কোনো লাভ হয়নি। সেই পুরানো ইসু্যতেই আটকে আছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের চেষ্টা।
মিয়ানমার এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট বা আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর ১৫ সদস্যের একটি যৌথ প্রতিনিধি দল কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শরণার্থীদের সঙ্গে আলোচনা চালায়।
এই প্রতিনিধিদলে নয়জন সদস্য ছিলেন মিয়ানমারের এবং আসিয়ান প্রতিনিধিদলে ছিলেন ছয়জন। মিয়ানমার প্রতিনিধিদলে নেতৃত্বে দিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক।
গণহত্যার অভিযোগে দ্য হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মিয়ানমারের বিচার শুরু হওয়ার কয়েক দিন পরেই এই দুটো প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে গিয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলল।
মিয়ানমার আসিয়ানের অন্য সদস্য দেশগুলোকে দেখাতে চায় যে তারা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চেষ্টা করছে।
মিয়ানমারের প্রতিনিধিদল রোহিঙ্গাদের প্রস্তাব দিয়েছে যে মিয়ানমারে তাদের জন্য দুইটি 'অভ্যর্থনা কেন্দ্র' তৈরি করা হয়েছে। দেশে ফিরে গেলে তাদের কিছুদিন সেখানে রাখা হবে এবং পর্যায়ক্রমে তাদের
\হবাড়িতে ফিরতে দেওয়া হবে।
সেজন্য তাদের 'ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড' দেওয়া হবে অস্থায়ীভাবে। এরপর রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে হবে।
কিন্তু রোহিঙ্গারা এসব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা বলেছে, মিয়ানমার আবারও সেই 'পুরানো খেলা' খেলছে।
মিয়ানমারের কাছে বক্তব্য তুলে ধরেছেন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের একজন প্রতিনিধি মো. রফিক।
তিনি বলেছেন, সম্প্রতি জাতিসংঘের আদালতে মিয়ানমারের বিপক্ষে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত রোহিঙ্গা গণহত্যার তদন্ত নিয়ে তৎপর হয়েছে।
এসব বিষয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে ঘোরানোর জন্যই মিয়ানমার প্রতিনিধিদল রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এসেছে বলে তিনি মনে করেন।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা মনে করে মিয়ানমার সরকার তাদের ফিরিয়ে নিতে চায় না। সেজন্য তারা নানা 'টালবাহানা এবং সময়ক্ষেপণের' আশ্রয় নিয়েছে।
মো. রফিক বলেন, 'আমাদের বাপ-দাদা সবাই ওখানকার। আমাদের এখানে থাকতে ইচ্ছা করে না। কিন্তু নিরাপত্তা না হলে আমরা কিভাবে ফেরত যাব?'
মিয়ানমার প্রতিনিধিদলের সফর প্রসঙ্গে বাংলাদেশের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন বিষয়ক কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে রাজি এবং সে কথা তারা জানিয়েছে।
তিনি বলেন, 'তারা (মিয়ানমার দল) রোহিঙ্গাদের দাবি শুনে গেছে। এরপর দেশে ফিরে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাবে। গত বছর যে আলোচনা হয়েছিল, এ সফর সেটার ধারাবাহিকতা।'
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা এরই মধ্যে দুই দফা ব্যর্থ হয়েছে। তৃতীয় দফায় আবারও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ সরকার।
শরণার্থীবিষয়ক কমিশনার বলেন, প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার আলোচনা অব্যাহত রেখেছে। বিবিসি বাংলা