বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আইসিজের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে রোহিঙ্গারা

যাযাদি ডেস্ক
  ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর পরিচালিত গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে শুনানি শেষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার শেষ দিনের শুনানিতে প্রথমে মামলার বাদী গাম্বিয়া ও পরে মিয়ানমার তাদের স্ব স্ব যুক্তি তুলে ধরে। তবে শুনানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত কি আসছে, সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা সদস্যরা। ভবিষ্যতে নিজ দেশে ফেরা ও তাদের ওপর পরিচালিত নির্যাতনের বিচার হবে কিনা তা নিয়েই এখন তাদের যত উদ্বেগ ও চিন্তা।

রোহিঙ্গাদের অভিযোগ, দেশটির স্টেট পৃষ্ঠা ২ কলাম ২

অং সান সু চি'র কারণেই বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী আজ শরণার্থী।

আইসিজের শুনানি নিয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অনেক আগ্রহ। বৃহস্পতিবার কক্সবাজারের টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়ে দেখা যায়, বিদু্যৎ না থাকায় বেশিরভাগ রোহিঙ্গা সদস্যই হেগের খবর জানতে মোবাইল ও রেডিও ব্যবহার করছেন।

এসময় জাদিমুরা এলাকার এক চা স্টলে বসে হেগের খবর জানার চেষ্টা করছিলেন মিয়ানমারের মংডু থেকে পালিয়ে আসা মোহাম্মদ করিম (৭০)। তিনি হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমুরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ই-বস্নকের বাসিন্দা।

মোহাম্মদ করিম বলেন, 'শুনেছি রোহিঙ্গাদের গণহত্যার দায়ে মিয়ানমারের বিচার শুরু হয়েছে। এর জন্য গাম্বিয়া ও বাংলাদেশসহ বিশ্বের যেসব দেশ সহায়তা করেছে তাদের ধন্যবাদ। তবে বাংলাদেশে আমরা বোঝা হয়ে থাকতে চাই না। আমাদের ভবিষ্যৎ গন্তব্য কোথায়, তা আমরা জানি না। দিন দিন রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বাড়ছে, এখনই সমস্যার সমাধান হওয়া দরকার।'

এ সময় নিজেকে বদি আলম (৬৮) পরিচয় দিয়ে অপর এক রোহিঙ্গা সদস্য দাবি করেন, 'মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি যখন গৃহবন্দি ছিলেন, তখন রোহিঙ্গারাও তার মুক্তি আন্দোলনে যুক্ত হয়। তবে মুক্ত হওয়ার পর সু চি রোহিঙ্গাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। আন্তর্জাতিক আদালতেও সু চি মিথ্যাচার করেছেন। এটিই তার আসল চেহারা। সু চির কারণেই রোহিঙ্গারা এখন শরণার্থী হয়েছে। কিন্তু আমরা শরণার্থী হয়ে থাকতে চাই না। নাগরিক অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে আমরা দেশে ফিরতে প্রস্তুত।'

মিয়ানমারের মংডু শহরের বলিবাজার এলাকা থেকে চার সন্তান নিয়ে পালিয়ে এসেছেন সাবেকুন নাহার (৩০)। আশ্রয় নিয়েছেন টেকনাফের লেদা ক্যাম্পে। গত দুই বছর আগে মিলিটারি সেনারা হত্যা করেছে তার স্বামীকে। সন্তানদের নিয়ে আগামী দিনগুলো কীভাবে কাটবে এ নিয়েই তার যত চিন্তা।

সাবেকুন নাহারের মতো মিয়ানমারের দক্ষিণ ধুনছে এলাকা থেকে পালিয়ে এসেছেন কুলসুমা বেগম। যার কোলে দেড় বছরের এক শিশু। তিনি জানান, তার রয়েছে ৮ সন্তান। সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি খুবই চিন্তিত। কুলসুমা বলেন, তিন বছর ধরে রোজাসহ বিশেষ প্রার্থনা করছি, যাতে নিজেদের অধিকার নিয়ে দেশে ফিরে যেতে পারি। তা না হলে এভাবে (শরণার্থী হয়ে) বেঁচে থাকা সম্ভব না।

বাংলাদেশ-মিয়ানমার ঘুমধুম শূন্য রেখা রোহিঙ্গা শিবিরের চেয়ারম্যান দিল মোহাম্মদ বলেন, 'রাখাইনে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সহিংসতার গুরুতর যেসব অভিযোগ উঠেছে, শুনানিতে মিয়ানমার সেগুলো অস্বীকার করার চেষ্টা করেনি। এছাড়া ২০১৭ সালে নির্মূল অভিযান শুরুর পর গণহারে রোহিঙ্গাদের দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার বিষয়টিও তার অস্বীকার করার চেষ্টা করেনি। এতেই বোঝা যায় তারা গণহত্যার সঙ্গে জড়িত।'

তিনি বলেন, 'রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাচ্ছে সেটি নিয়ে আমরা চিন্তিত। বৃহস্পতিবার ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেড ক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির (আইএফআরসি) প্রতিনিধি দল এসেছিল। এসময় নাগরিকত্ব ছাড়া অন্যসব দাবি মেনে নিলে রোহিঙ্গারা ফিরবে কিনা এমন প্রশ্নে নাগরিকত্বের অধিকার ও নিরাপত্তা পেলেই কেবল সবাই ফিরবে বলে জানানো হয়েছে।'

কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা মুঠোফোনে জানান, 'রোহিঙ্গা সমস্যা দ্রম্নত সমাধান না হলে বাংলাদেশ বহুমুখী সংকটের মধ্যে পড়বে। তাই দ্রম্নত এর সমাধান দরকার।'

প্রসঙ্গত, গত ১১ নভেম্বর ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সমর্থনে গাম্বিয়া মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে মামলাটি করে। গাম্বিয়াও গণহত্যা সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ। এদিকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্মম নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর অল্প সময়ের মধ্যে রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে আসেন প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা। এর আগে থেকে এ দেশে অবস্থান করছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা। সীমান্তবর্তী জেলা কক্সবাজারের প্রায় ৩৪টি শিবিরে বর্তমানে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছে।

বাংলাদেশের সন্তোষ

রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিপ্রায়ে সংঘটিত নৃশংস অপরাধে গাম্বিয়ার পক্ষ থেকে দায়ের করা আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে (আইসিজে) জবাবদিহিতার প্রচেষ্টায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ।

শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে উলেস্নখ করা হয়, নেদারল্যান্ডসের হেগে পিস প্যালেসে গত ১০-১২ ডিসেম্বর এ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। আদালতকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অধিকার ফিরিয়ে দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের জন্য মিয়ানমারের অভিযুক্ত দোষীদের দায়মুক্তির চলমান সংস্কৃতির অবসান ঘটাতে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

আইসিজেতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ওআইসির ৫ সদস্যের পক্ষে গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলার শুনানিতে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল উপস্থিত ছিল। প্রতিনিধি দলের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান যোগ দেন। গাম্বিয়া বনাম মিয়ানমারের মামলার শুনানি ১০ ডিসেম্বর শুরু হয়ে ১২ ডিসেম্বর শেষ হয়। ১০ ডিসেম্বর গাম্বিয়ান আইনজীবীদের আইসিজে ১৫ জন বিচারকের কাছে তাদের মামলা উপস্থাপনের মাধ্যমে শুনানি শুরু করেন। ১১ ডিসেম্বর অং সান সু চির নেতৃত্বে মিয়ানমারের প্রতিনিধি তার উপস্থাপনা দেন। ১২ ডিসেম্বর সকালে গাম্বিয়ান আইনজীবী আদালতে অং সান সুচি এবং তার আইনি দলটির উপস্থাপনাগুলো প্রত্যাখ্যান করেন। একই দিন বিকেলে মিয়ানমার চূড়ান্ত পর্যবেক্ষণ এবং যুক্তি দেয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<79841 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1