মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদার জামিন শুনানি আজ বিএনপিতে উদ্বেগ-অস্থিরতা

নতুনধারা
  ১২ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০
খালেদা জিয়া

হাসান মোলস্না জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন প্রশ্নে আপিল বিভাগের শুনানি আজ বৃহস্পতিবার। কী আদেশ দেন তা জানতে সবার নজর আদালতের দিকে। শুধু বিএনপি নয়, রাজনৈতিক মহল এবং সাধারণ মানুষের মধ্যেও এ নিয়ে রয়েছে ব্যাপক কৌতূহল। বিএনপির নীতিনির্ধারকসহ আইনজীবী নেতাদের আশা, শারীরিক অসুস্থতা বিবেচনায় দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে জামিন পাবেন খালেদা জিয়া। তবে কোনো ধরনের 'চাপ' ছাড়া সরকার জামিন হতে দেবে না এমন আশঙ্কাও আছে দলটিতে। এ পরিস্থিতিতে দলটির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা-অস্থিরতা বিরাজ করছে। জামিন পাবেন এমন প্রত্যাশা নিয়ে আজ আদালতের ভেতরে-বাইরে ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি নিয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। জাতীয়তাবাদী আইনজীবীদের আদালতে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে নির্দেশ না দিলেও মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা আদালতের বাইরে অবস্থান নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। গত ৫ ডিসেম্বর আদালতে অপ্রীতিকর ঘটনায় বেশ সতর্ক বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। শুনানির আগে বা শুনানিকালে এজলাস প্রাঙ্গণে যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সেদিকে সতর্ক থাকতে সবাইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত হবেন নেতাকর্মীরা। আদালতের ভেতরে এবং বাইরে ব্যাপক শোডাউন করা হবে। শুধু রাজধানীতে নয়, সারাদেশে নেতাকর্মীদের যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। সূত্র জানায়, আজ শুনানি ও রায়ের পর পরবর্তী করণীয় চূড়ান্ত করবে বিএনপি। জামিন না হলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কর্মসূচিও ঘোষণা করা হতে পারে। উচ্চ আদালত থেকে চেয়ারপারসনের জামিন না হলে রাজপথে সক্রিয় হওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে দলটির। শুরুতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিয়ে রাজপথে নেমে পরিস্থিতি বিবেচনায় দেওয়া হবে ধাপে ধাপে কঠোর কর্মসূচি। এরপর চূড়ান্তভাবে সরকার পতনের এক দফায় যাওয়ার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে দলটির হাইকমান্ডের। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা জানান, চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে মোট ৩৭টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫টি মামলায় জামিন হয়েছে। আজ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার শুনানি। এ মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন চেয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় ১৪ নভেম্বর আবেদন করেন তার আইনজীবীরা। পরে ১৮ নভেম্বর আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত আবেদনটি নিষ্পত্তির জন্য প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। এরই ধারাবাহিকতায় জামিন আবেদনটি আপিল বিভাগে কার্যতালিকাভুক্ত হয়। এরপর ২৮ নভেম্বর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ বেঞ্চে এ শুনানি শুরু হয়। এদিন আগামী ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত জামিন শুনানি মুলতবি করে আদালত। এ সময়ের মধ্যে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার সর্বশেষ প্রতিবেদন দিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয় আদালত। ৫ ডিসেম্বর বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ খালেদা জিয়ার মেডিকেল প্রতিবেদন আদালতে দাখিল না করে এ জন্য সময় চান। আদালত ১২ ডিসেম্বর শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য করে এর আগেই মেডিকেল প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। আদালতের এমন আদেশের প্রতিবাদে এজলাসের ভেতরে হট্টগোল করেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। চরম বিশৃঙ্খলার এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি এ নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন আপিল বিভাগের এজলাসে সিসি ক্যামেরা বাসানোর সিদ্ধান্ত নেয়। একই সঙ্গে আপিল বিভাগের বাইরে আগে থেকে বসানো সব ক্যামেরা অ্যাক্টিভ করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এদিকে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মেডিকেল রিপোর্ট আদালতে পাঠানো হয়েছে। বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে খালেদা জিয়ার মেডিকেল রিপোর্টটি আদালতে পাঠানো হয়। বিএসএমএমইউর উপাচার্য কনক কান্তি বড়ুয়া বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্যদের সমন্বয়ে মেডিকেল রিপোর্টটি তৈরি করা হয়েছে। তারপর সেটি সিলগালা করে আদালতে পাঠানো হয়। তবে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের যে রিপোর্ট দিয়েছে তা সরিয়ে ভিন্ন রিপোর্ট আদালতে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, তারা জানতে পেরেছেন বিএসএমএমইউ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যে রিপোর্ট দিয়েছিল সে রিপোর্টটিকে সরিয়ে দিয়ে অন্য কোনো রিপোর্ট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রকৃত রিপোর্ট আদালতে উপস্থাপনের দাবিও জানিয়েছেন। বিএনপি ও দলের চিকিৎসকরা বলেন, খালেদা জিয়া কারাগারে চরম অসুস্থ অবস্থায় দিনযাপন করছেন। দিন দিন তিনি পঙ্গুত্বের দিকে ধাবিত হচ্ছেন। সঠিক চিকিৎসা না হলে তার প্রাণহানির শঙ্কাও রয়েছে। চেয়ারপারসনের স্বাস্থ্যের এমন অবস্থায় উদ্বিগ্ন বিএনপি আশা করছে, এখন অন্তত সঠিক চিকিৎসার জন্য মানবিক কারণে খালেদা জিয়া জামিনে মুক্তি পাবেন। খালেদা জিয়ার মামলার আইনজীবী বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, মানবিক কারণেই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ খালেদা জিয়াকে জামিন দেবে বলে তারা আশাবাদী। এ মামলায় কোনো সাক্ষী, তথ্য বা স্বাক্ষর কিংবা খালেদা জিয়ার কোনো ভূমিকা নেই। তারপরও ওদিকে না গিয়ে শুধু মানবিক কারণে জামিন চাওয়া হয়েছে। এজন্য সবার আশা, সর্বোচ্চ আদালত খালেদা জিয়ার জামিন দেবে। যদি না দেয় তাহলে বুঝতে হবে, সরকারের প্রভাব বা রাজনৈতিক কারণে তার মুক্তি হচ্ছে না, মানবিক কারণেও তার মুক্তি হচ্ছে না। দলের স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, খালেদা জিয়ার জামিন না হলে বিএনপি বাধ্য হয়ে একদফার আন্দোলনে যাবে। সরকার এরই মধ্যে তা উপলব্ধি করছে। জামিন না হলে দলের অবস্থান কী হবে, জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। তাই তার জামিন পাওয়া ন্যায়সঙ্গত অধিকার। দলের সব স্তরের নেতাকর্মীরা চেয়ারপারসনের জামিন নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় সময় পার করছেন। উচ্চ আদালত সবকিছু বিবেচনা করে সঠিক রায় দেবে, এমন আশা সবার। চেয়ারপারসনের জামিনের বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়া দেখে কর্মসূচি নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। প্রসঙ্গত, গত বছরের ৮ ফেব্রম্নয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর কারাদন্ড দেয় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত। এরপর ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদন্ড ও ১০ লাখ টাকা অর্থদন্ড দেওয়া হয়। ৬৭২ দিন ধরে কারাগারে আছেন সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী। ৭৪ বছর ঊর্ধ্ব খালেদা জিয়া শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে এখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাবিন বস্নকে চিকিৎসাধীন।

তিন বাইকে আগুন:

এদিকে সুপ্রিম কোর্টের বাইরে তিনটি পৃথক স্থানে মোটরসাইকেলে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বুধবার বিকালে এই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় আজ সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় কঠোর হবে পুলিশ।

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান বলেন, নাশকতার উদ্দেশ্যেই অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা সুপ্রিম কোর্ট এলাকার বাইরে জাতীয় ঈদগাহ ময়দান, হাইকোর্ট মাজারগেট ও বার কাউন্সিল ভবনের সামনে মোটরসাইকেলে আগুন দিয়েছে। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। তবে জড়িত ব্যক্তিদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।

ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত অপারেটর জিয়াউর রহমান জানান, বুধবার বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটে সুপ্রিম কোর্টের সামনের তিনটি পৃথক স্থানে মোটরসাইকেলে আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট ঘটনাস্থল যায়। অল্প সময়ের মধ্যে ওই আগুন নিভিয়ে ফেলতে সক্ষম হয় তারা। তবে তিনটি মোটরসাইকেলের কোনো মালিক পাওয়া যায়নি।

সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় কর্তব্যরত ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) নাদিয়া ফারজানা বলেন, ‘এর আগে দ-িত খালেদা জিয়ার জামিনের শুনানির দিন আইনজীবীরা আদালতে কী ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার জামিন শুনানিকে ঘিরে সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও জোরদার করা হবে।’

ইতোমধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের এক নম্বর আদালতে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা বসানো হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ও আদালত সূত্র বলছে, খালেদার স্বাস্থ্যগত প্রতিবেদন বুধবার বিকালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা দিয়েছে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে