মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

টেন্ডার ছাড়াই ৮ পশুর হাট বাগিয়ে নেয়ার পঁায়তারা

তিন দফায় বিজ্ঞপ্তি দিলেও ডিএসসিসির ৬টি হাটে কোনো দরপত্রই জমা পড়েনি অথচ এসব স্থানে হাট বসানোর জন্য গেট তৈরি ও খুঁটি লাগানোর কাজ চলছে
ফয়সাল খান
  ১৪ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০
আপডেট  : ১৪ আগস্ট ২০১৮, ০০:০৬
রাজধানীতে আসতে শুরু করেছে কোরবানির পশু

কোরবানির পশুর চাহিদা মেটাতে রাজধানীর মোট ২৩টি স্থানে অস্থায়ী হাট বসানোর জন্য দরপত্র আহŸান করে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। কয়েক দফা টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে ১৫টি হাটের ইজারা দিতে সক্ষম হয় সংস্থা দুটি, বাকি ৮টি হাটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হয় কতৃর্পক্ষ। তিন দফায় বিজ্ঞপ্তির পরও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৬টি হাটের বিপরীতে কোনো দরপত্র জমা পড়েনি, অথচ এসব স্থানে হাট বসানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। কোনোটিতে বানানো হচ্ছে গেট, লাগানো হচ্ছে বঁাশের খুঁটি। খেঁাজ নিয়ে জানা গেছে, অন্যান্য বছর নামমাত্র মূল্যে হাটের ইজারা নেয়ার জন্য লোক দেখানো টেন্ডারে অংশ নিতেন ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতাকমীর্রা; কিন্তু গত বছরের শেষ মুহ‚তের্ বেশ কয়েকটি হাট খাস আদায়ের জন্য দেয় সিটি করপোরেশন। এতে বিনা পুঁজিতে অনেক লাভ হওয়ায় এবার নতুন কৌশল অবলম্বন করেছেন তারা। কোনো রকম টেন্ডার ছাড়াই হাট বাগিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা। এ জন্য অনেক হাটে কোনো দরপত্রই জমা পড়েনি। এতে দফায় দফায় টেন্ডার আহŸান করেও ২৩ হাটের মধ্যে ১৫টি হাটের ইজারা সম্পন্ন করতে পেরেছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ৮টি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ৭টি হাটের চ‚ড়ান্ত ইজারা দিয়েছে। এলাকাভিত্তিক শক্তিশালী সিন্ডিকের কারণে এসব হাটের ইজারা প্রক্রিয়াও প্রতিযোগিতাপূণর্ হয়নি। কোনো কোনো হাটে একটি মাত্র দরপত্র জমা পড়ে এবং ওই দরদাতাই হাটের ইজারা পান। আর বাকি ৮টি হাটের ইজারা নিয়ে অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে। এতে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব হারানোর শঙ্কা তৈরি রয়েছে। জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী কাক্সিক্ষত দর না পাওয়া পযর্ন্ত তিন দফা টেন্ডার আহŸান করা হয়। এরপরও কোনো ইজারাদার না পাওয়া গেলে এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেয়। তারা হাট বসানোর সিদ্ধান্ত দেন, আবার বাতিলেরও সিদ্ধান্ত দেন। হাট বসানোর সিদ্ধান্ত হলে সবোর্চ্চ দরদাতাকে ইজারা দেয়া হয়। আর কোনো দর না পাওয়া গেলে তখন খাস আদায়ের মধ্যমে হাট বসানো হয়। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় লোকদের ওপরই দায়িত্ব দেয়া হয়। যা আয় হয় খরচ বাদে বাকি টাকা সিটি করপোরেশনে জমা হয়। কিন্তু বিগত বিভিন্ন সময়ে দেখা গেছে, খাস আদায়ের ক্ষেত্রে যে প্রকৃত আয় হয় তার পুরোটা করপোরেশনে দেয়া হয় না। বেশিরভাগ টাকাই দায়িত্বপ্রাপ্তরা ভাগ-বাটোয়ারা করে নেন। নামমাত্র কিছু টাকা সিটি করপোরেশনে জমা দেয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতারা এসব হাটকেন্দ্রিক শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। ফলে এসব হাট ইজারা নেয়ার জন্য কেউ দরপত্র জমা দেয়ার সাহস পাননি। শেষ মুহ‚তের্ সিটি করপোরেশন খাস আদায়ের অনুমতি নেয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন তারা। এ ব্যাপারে করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগও রাখছেন তারা। এ বিষয়ে হাট ব্যবসায়ের সঙ্গে যুক্ত একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, হাট ইজারা দেয়ার ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৩টি দরপত্র জমা পড়তে হয়। কিন্তু সাধারণ ইজারাদাররা এবার দরপত্রই কিনতে পারেননি। দু-একজন কিনলেও ভয়ে জমা দিতে পারেননি। ফলে প্রভাবশালীচক্র পছন্দমতো দর দিয়ে হাটগুলো ইজারা নিয়েছে। আবার বাকি কয়েকটি হাটের ক্ষেত্রে কোনো দরপত্রই জমা পড়েনি। সেগুলো অতীতের মতো ঈদের আগ মুহূতের্ দলীয় লোকদের দিয়ে পরিচালনা করা হতে পারে। দুই সিটি করপোরেশনের দরপত্র আহŸান করা মোট ৮টি হাট এখনো ইজারা হয়নি। এর মধ্যে ডিএসসিসির ৬টিতে কোনো দরপত্রই জমা পড়েনি। ডিএনসিসি পায়নি কাক্সিক্ষত দর। ডিএসসিসি এলাকার ব্রাদাসর্ ইউনিয়ন পশুর হাট, ধুপখোলা, ধনিয়া, আরমানিটোলা, কমলাপুর স্টেডিয়ামের পাশের খালি জায়গা, সাদেক হোসেন খোকা মাঠে পশুর হাট বসানোর জন্য কোনো দরপত্র পড়েনি। এই হাট ছয়টিতে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাকমীের্দর দিয়ে খাস আদায় করা হতে পারে। ডিএনসিসি এলাকার উত্তরখানের ময়নারটেক মাঠ ও আশিয়ান সিটির হাটে কাক্সিক্ষত দর না পাওয়ায় ইজারা দিতে পারেনি। এতে সিটি করপোরেশন মোটা অঙ্কের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এগুলোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত চেয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত নিদের্শনা অনুযায়ী কাজ করবে সিটি করপোরেশন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কমর্কতার্ আবদুল মালেক যায়যায়দিনকে বলেন, এরই মধ্যে ৭টি হাটের ইজারা সম্পন্ন হয়েছে। সবশেষ গত ৩১ জুলাই মেরাদিয়া হাটটির ইজারা হয়েছে। কিন্তু বাকি ৬টি হাটে তিনবার দরপত্র আহŸান করলেও কোনো সিডিউল জমা পড়েনি। তাই সিদ্ধান্ত চেয়ে মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কমর্কতার্ আমিনুল ইসলাম বলেন, এখন পযর্ন্ত ৮টি হাট বসানোর কাযর্ক্রম চ‚ড়ান্ত হয়েছে। দুই দফা টেন্ডার কাযর্ক্রমের মধ্যে ১ম দফাতেই ৬টি হাটে কাক্সিক্ষত দর পাওয়া যায়। পরে চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে আরও নতুন তিনটি অস্থায়ী হাট বসানোর কাযর্ক্রম নেয়া হয়। এখনো দুটি হাটের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। ইজারা না হওয়া এসব হাটের ইজারা দেয়া না দেয়ার সিদ্ধান্ত এখন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারে রয়েছে। অথচ সরেজমিন এসব ঘুরে দেখা গেছে, ইজারা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া হাটগুলোর পাশাপাশি ইজারা প্রক্রিয়া অসম্পন্ন হাটগুলোরও হাট বসানোর প্রস্তুতি এগিয়ে চলছে। এর মধ্যে ডিএসসিসি এলাকার ব্রাদাসর্ ইউনিয়ন সংলগ্ন বালুর মাঠ ও কমলাপুর স্টেডিয়ামের আশপাশের খালি জায়গা, আরমানিটোলা খেলার মাঠ ও আশপাশের খালি জায়গা, ধুপখোলা ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব মাঠ, দনিয়া কলেজ মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা ও সাদেক হোসেন খোকা মাঠ সংলগ্ন ধোলাইখাল ট্রাক টামির্নাল ও সংলগ্ন খালি জায়গা, এ হাটগুলো এখনো ইজারা প্রক্রিয়া অসম্পন্ন রয়েছে। অথচ এগুলোতে শ্রমিকরা হাট প্রস্তুতির জন্য কাজ করছে। ব্রাদাসর্ ইউনিয়ন সংলগ্ন বালুর মাঠ ও কমলাপুর স্টেডিয়ামের আশপাশের খালি জায়গার হাটে গিয়ে দেখা গেছে, হাটের গোপীবাগ অংশ ও কমলাপুর রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে দুটি সুবিশাল গেট তৈরির কাজ প্রায় শেষ। হাটের ভেতরেও বঁাশ-খুঁটি স্থাপনের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান নিবার্হী কমর্কতার্ খান মোহাম্মদ বেলাল যায়যায়দিনকে বলেন, ইজারা না পেয়ে এমন কাজ করে থাকলে অবশ্যই আইন অমান্য করেছে। শুধুম বৈধ ইজারাদাররা নিদির্ষ্ট স্থানে ঈদের দিনসহ মোট চারদিন অস্থায়ী হাট বসানোর অনুমতি পাবেন। এর দু’দিন আগে হাটের প্রস্তুতি নিতে পারবেন। যে হাটগুলোর ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি, সেগুলো প্রস্তুতির তো প্রশ্নই আসে না। এ ব্যাপারে খেঁাজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন তিনি। ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কমর্কতার্ আমিনুল ইসলাম বলেন, বতর্মানে টেন্ডার হয় অনলাইনে ও প্রকাশ্যে। রাজস্বও বেশি পাচ্ছেন। এরপরও কেউ সিন্ডিকেট কিংবা দুনীির্তর অভিযোগ করলে তো কিছু করার নেই। একাধিক ব্যবসায়ী সমঝোতার ভিত্তিতে বিভিন্ন টেন্ডারে স্বাভাবিকভাবেই অংশ নেন বলে জানান তিনি। ১৫ হাটের ইজারা চ‚ড়ান্ত ডিএনসিসির চ‚ড়ান্ত হওয়া পশুর হাটগুলো হলোÑ উত্তরা ১৫নং সেক্টরের ২নং ব্রিজের পশ্চিমে গোলচত্বর পযর্ন্ত সড়কের উভয় পাশের ফঁাকা জায়গা, খিলক্ষেত-বনরূপা আবাসিক প্রকল্পের খালি জায়গা, ভাটারা (সাঈদনগর) পশুর হাট, মোহাম্মদপুর বুদ্ধিজীবী সড়ক সংলগ্ন (বছিলা) পুলিশ লাইনের খালি জায়গা, মিরপুর সেকশন-২ এর (ইস্টানর্ হাউজিং) খালি জায়গা, মিরপুর ডিওএইচএসের উত্তর পাশের সেতু প্রোপাটির্ ও সংলগ্ন খালি জায়গা, তেজগঁাও পলিটেকনিক মাঠ ও কুড়িল ৩০০ ফিটের খালি জায়গা। ডিএসসিসি এলাকার চ‚ড়ান্ত হওয়া পশুর হাটগুলো হলোÑ মেরাদিয়া বাজার সংলগ্ন খালি জায়গা, জিগাতলা হাজারীবাগ মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, পোস্তগোলার শ্মশানঘাট সংলগ্ন খালি জায়গা, শ্যামপুর বালুর মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, কামরাঙ্গীরচর ও শাজাহানপুরের খালি জায়গা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে