মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক

দিনভর নৈরাজ্যের পর রাতে পরিবহণ ধর্মঘট প্রত্যাহার

লাইসেন্স, ফিটনেস সনদ আপডেটের জন্য মালিক-শ্রমিকদের ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। আইন সংশোধনের জন্য তারা যে দাবি জানিয়েছে সেটা বিবেচনার জন্য যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে
যাযাদি রিপোর্ট
  ২১ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০
আপডেট  : ২১ নভেম্বর ২০১৯, ১০:৪৮
বুধবার ভোর থেকে শনিরআখড়া-সাইনবোর্ড এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এলোপাতাড়িভাবে যানবাহন রেখে সড়ক অবরোধ করেন শ্রমিকরা। এ সময় তারা যানবাহন ভাঙচুর ও চালকদের মারধরও করেন -ফোকাস বাংলা

সড়ক পরিবহণ আইন সংশোধনের দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার পর ৪৮ ঘণ্টা না পেরোতেই পণ্যবাহী ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ধর্মঘট ডেকে আন্দোলনের নামে রাজপথে প্রকাশ্যে নৈরাজ্য চালিয়েছেন পরিবহণ শ্রমিকরা। বুধবার সকাল থেকে দিনভর রাজধানী ও আশপাশের বিভিন্ন স্থানে সব ধরনের যানবাহন চলাচলে বাধা দেন তারা। এছাড়া বেশকিছু স্থানে যানবাহন ভাঙচুর, চালকদের মারধর এবং ইট-পাটকেল, গাড়ির টায়ার ও গাছের টুকরা ফেলে সড়ক অবরোধেরও অপচেষ্টা চালান গণপরিবহণের এসব নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীরা।

পরে রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠকে দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন পরিবহণ মালিক ও শ্রমিক নেতারা। বুধবার রাত নয়টায় মন্ত্রীর ধানমন্ডির বাড়িতে এই বৈঠক শুরু হয়, যাতে পরিবহণ মালিক শ্রমিক নেতাদের পাশাপাশি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

বুধবার দিবাগত রাত পৌনে একটায় সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'আমরা তাদের নয় দফা দাবি নিয়ে আলোচনা করেছি। লাইসেন্স, ফিটনেস সনদ আপডেটের জন্য তাদের ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। আইন সংশোধনের জন্য তারা যে দাবি জানিয়েছে সেটা বিবেচনার জন্য সুপারিশ আকারে আমরা যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। তারা এগুলো বিবেচনা করে আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করবে।'

এর আগে বুধবার সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে দূরপালস্নার বাস, ট্রাকের পাশাপাশি ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচলেও শ্রমিকরা বাধা দেয়। বিষয়টি জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ যায়যায়দিনকে বলেন, ট্রাক শ্রমিকরা ধর্মঘট ডেকেছে। এর সঙ্গে মালিকদের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে শ্রমিকরা বিভিন্ন স্থানে গাড়ির ওপর চড়াও হওয়ায় ভয়ে অনেকে গাড়ি রাস্তায় নামাননি। এরপরও যাত্রীসেবা অব্যাহত রাখতে নগরীতে ও দূরপালস্নায় বাস চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে কিছুদূর পর পর আন্দোলনরত শ্রমিকরা বাধা দেওয়ায় অনেকে ভয়ে রাস্তা থেকে গাড়ি সরিয়ে নিয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।

অপর এক পরিবহণ মালিক নেতা শ্রমিক নৈরাজ্য সৃষ্টি প্রসঙ্গে বলেন, শ্রমিকরা প্রথমেই সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে আন্দোলনে নামেনি। তারা আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান চেয়েছেন। তারা তাদের সমস্যা তুলে ধরে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। কিন্তু সরকার তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকিয়ে দিয়েছে। তাই জীবন-জীবিকার তাগিদে তারা এ পথে নেমেছেন। তবে এতে তাদের কোনো ইন্ধন নেই বলে দাবি করেন ওই মালিক নেতা।

যাত্রাবাড়ী-শনিরআখড়া এলাকায় যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী বেশ কয়েকজন পরিবহণ শ্রমিক জানান, পরিবহণ মালিকরা রীতিমতো বৈঠক করে তাদের এ ধরনের কার্যক্রম চালানোর সায় দিয়েছেন। তাদের প্রশ্রয় না থাকলে এককভাবে শ্রমিকদের এ ধরনের তৎপরতা চালানোর কোনো সুযোগ নেই বলেও স্বীকার করেন তারা।

এদিকে গণপরিবহণ শ্রমিক সংগঠনের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, শুধু মালিকরাই নন, এর নেপথ্যে প্রভাবশালী আরও অনেকে রয়েছেন। সরাসরি কারও নাম উলেস্নখ না করলেও বর্তমান সরকারের সাবেক দুই মন্ত্রীর এ ব্যাপারে জোরালো ইন্ধন রয়েছে বলে দাবি করেন তারা।

এদিকে গণপরিবহণ শ্রমিকদের গতকাল সকাল থেকে রাজধানীসহ আশপাশের বিভিন্ন স্থানে নৈরাজ্য চালালেও তাদের প্রতিহত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তেমন কোনো তৎপরতা চালাতে দেখা যায়নি। বরং কোথাও কোথাও তাদের সামনে ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচলে বাধা, সড়কে প্রতিবন্ধকতা তৈরি এবং চালকদের মারধরের ঘটনা ঘটলেও তাদের নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে। যা সাধারণ মানুষকে ভীষণভাবে হতাশ করেছে। অনেকেই এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির একজন নেতা বলেন, ধর্মঘটের নামে যেভাবে প্রাইভেট কার, সিএনজি অটোরিকশা, মোটরসাইকেল ও রিকশা চলাচলে বাধা দেওয়া হচ্ছে, চালক ও যাত্রীদের হেনস্থা করা হচ্ছে, এটিকে নৈরাজ্য ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। বিশৃঙ্খল এ পরিস্থিতির জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি আরও বলেন, কোনো ধরনের প্রস্তুতি ছাড়াই সরকার নতুন সড়ক আইন বাস্তবায়ন করতে মাঠে নেমে জনগণকে দুর্ভোগে ফেলেছে।

সবুজবাগের বাসা থেকে কাঁচপুরে নিজ কর্মস্থলে যাওয়ার সময় যাত্রাবাড়ীতে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী শ্রমিকদের হাতে লাঞ্ছিত হওয়া পারটেক্স গ্রম্নপের একজন প্রকৌশলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'মন্ত্রীরা সাইরেন বাজিয়ে প্রটোকল নিয়ে রাস্তায় চলেন, তাদের পথে কোনো ঝুটঝামেলা হওয়ার ভয় নেই। তাদের কোনো ব্যাপারে জনগণের কাছে জবাবদিহিতাও নেই। তাই তারা কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই এ ধরনের উদ্যোগ নিয়ে জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলেন।' নতুন সড়ক আইন কার্যকরে মাঠে নামার আগে সরকারকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা জরুরি বলে মন্তব্য করেন ওই ভুক্তভোগী প্রকৌশলী।

এদিকে শুধু রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকাতেই নয়, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে পরিবহণ শ্রমিকরা আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য চালিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুপুরের পর শ্রমিকরা বেশ কয়েকটি স্থানে যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। তারা এ সময় বেশ কয়েকটি বাস-মিনিবাস ও ব্যক্তিগত যানবাহনের ওপর চড়াও হয়। ওইসব গাড়ির কি-হোল থেকে চাবি বের করে শ্রমিকরা বেশকিছু সময় আটকে রাখে। আগামী দিন তারা আর গাড়ি চালাবে না এ প্রতিশ্রম্নতি আদায় করে পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এ সময় সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত থাকলেও তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছেন বলে জানান স্থানীয়রা।

ঢাকা মহানগর ট্রাফিকের ডেমরা বিভাগের সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম জানান, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ অংশে শ্রমিকরা রাজধানীতে বাস প্রবেশে বাধা দেন। এতে গণপরিবহণ যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। এ পরিস্থিতিতে মহাসড়কে রিকশাভ্যান চলাচলের সুযোগ দেওয়া হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<76475 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1