শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানী সুপার মার্কেটের অর্ধশত দোকান পুড়ে ছাই ক্ষতি অর্ধশত কোটি টাকা

নতুনধারা
  ২১ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০
আপডেট  : ২১ নভেম্বর ২০১৯, ০০:৪২

যাযাদি রিপোর্ট

টিকাটুলীর রাজধানী সুপার মার্কেটের বর্ধিত অংশ নিউ রাজধানী সুপার মার্কেটের অর্ধশত দোকান আগুনে ভস্মীভূত হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যা সোয়া ৫টার দিকে মার্কেটের দোতলায় একটি তৈরি পোশাক বিক্রির দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। দোতলার সব দোকান তৈরি পোশাক বিক্রির দোকান বলে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ওই সময় মার্কেট খোলা ছিল। আগুন দেখে আত্মরক্ষার্থে চিৎকার করে দোকানের ক্রেতা ও বিক্রেতারা হুড়মুড়িয়ে বেরিয়ে পড়েন।

খবর পেয়ে প্রথম দফায় ফায়ার সার্ভিসের ৪টি ইউনিট গিয়ে আগুন নেভানো শুরু করে। আগুনের লেলিহান শিখা বাড়তে থাকায় পর্যায়ক্রমে ২৫টি ইউনিট দুই ঘণ্টার চেষ্টায় সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ আগুনে অর্ধশত দোকানের সব মালামাল পুড়ে গেছে। মার্কেটের দোকান মালিকরা ধারণা করছেন, ক্ষয়ক্ষতি প্রায় অর্ধকোটি টাকা। রাজধানী সুপার মার্কেটসংলগ্ন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মুক্তিযোদ্ধা মুরাদ কমিউনিটি সেন্টারে র‌্যাব-৩ এর কার্যালয় অবস্থিত।

১৯৯৫ সালে চালু হওয়া দোতলা টিনশেড এই বিপণিবিতানে নিত্যপ্রয়োজনীয় নানা পণ্যের ১৭৮৮টি দোকান রয়েছে। প্রথম দফায় নির্মিত অংশের নাম রাজধানী সুপার মার্কেট। এরপর ১০ বছর আগে এই মার্কেটের সামনের খোলা অংশে অনুরূপ ডিজাইনে স্টিল ও টিন দিয়ে তৈরি করা হয় নিউ রাজধানী সুপার মার্কেট। এই মার্কেটের দোকান মালিক সমিতির স্বঘোষিত সভাপতি ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ময়নুল হক মঞ্জু সম্প্রতি চাঁদাবাজি ও দোকান দখলের অভিযোগে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন। নিউ রাজধানী সুপার মার্কেটের দোতলায় ৬৩টি দোকান রয়েছে। এসব দোকানে বেশিরভাগ তৈরি পোশাক ও কসমেটিকস বিক্রি হয়। মার্কেটের নিচতলায় বেশিরভাগ দোকানে জুয়েলারি-সামগ্রী বিক্রি হয়।

ওয়ারী থানার ওসি আজিজুর রহমান বলেন, রাজধানী সুপার মার্কেট বন্ধ থাকে রোববার। আগুন যখন লাগে তখন সব দোকান খোলাই ছিল। আগুনে অর্ধশত দোকান পুড়ে গেছে। তবে এ ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের অপারেটর আবদুল খালেক জানান, কীভাবে আগুনের সূত্রপাত হলো তা এখনো স্পষ্ট নয়। বিকালে মার্কেটের পূর্ব দিক থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখে ফায়ার সার্ভিসে ফোন দিয়ে আগুনের বিষয়টি জানায় একজন ব্যক্তি।

প্রত্যক্ষদর্শী শাহ পরান দোকানের মালিক শাহ পরান বলেন, নিউ রাজধানী সুপার মার্কেটের দোতলায় তার দোকান। তার দোকানের সামনে প্রবেশ গেটের কলাবশিবল গেটে ঝালাইয়ের কাজ চলছিল। তার দোকানের পাশেই একটি ফোম বিক্রির দোকান। ঝালাইয়ের কাজ করার সময় ওয়েল্ডিং থেকে আগুনের ফুলকি দোকানের সামনে রাখা ফোমে পড়ে আগুন ধরে যায়। মুহূর্তের মধ্যে ফোমের মধ্যে কালো ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়। তখন সবাই আগুন আতঙ্কে চার দিক দ্বিগি¦দিক ছোটাছুটি করতে থাকে। ক্রেতারাও আত্মরক্ষার্থে সিঁড়ি দিয়ে নামতে থাকে।

নিউ রাজধানী সুপার মার্কেটের নিচতলায় আল মাহের জুয়েলার্সের মালিক আবু তাহের বলেন, নিচতলায় তার দোকানসহ ৪৩টি স্বর্ণলঙ্কার বিক্রির দোকান আছে। আগুন লাগার পর প্রাণ হাতে নিয়ে বেরিয়ে আসার সময় শাটার নামানো হলেও অনেকে তালা মারতে পারেননি। তার ধারণা মার্কেটের দোতলায় মাঝ বরাবর আগুনের সূত্রপাত হয়। সেখানে পোশাক, টেইলার্স, ফোম, কসমেটিকস, খেলনা ও খাবারের দোকান আছে।

আগুন লাগার পর পাশের অভিসার সিনেমা হলসংলগ্ন রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। পুলিশ সদস্যরা রাস্তায় অবস্থান নিয়ে ভিড় সামলানোর চেষ্টা করেন। ওয়ারী থানার ওসি আজিজুর রহমান বলেন, আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে আগে মার্কেটের মালামালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ চারদিকে ব্যারিকেড দিয়ে দেয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটগুলো আসার পর তাদের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার কাজে সহায়তা করা হয়।

ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শক পলাশ চন্দ্র মোদক বলেন, ২৫টি ইউনিট প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন সাংবাদিকদের বলেন, দুই ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে আগুনের সূত্রপাত ও এর ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে।

প্রত্যক্ষদর্শী এক ব্যবসায়ী জানান, বাথরুম থেকে তিনিই প্রথম আগুন দেখতে পান। এরপর সবাইকে জানান। তার ধারণা, দ্বিতীয় তলার ফোম, বেডশিটের দোকান থেকেই আগুনের সূত্রপাত। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত আগুন দোতলাতেই ছিল বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত রাজধানী সুপার মার্কেট ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। মার্কেটটি মূলত টিনশেড। এখানে পোশাক, প্রসাধনসামগ্রী, নিত্যপণ্য, জুয়েলারিসহ বিভিন্ন রকমের সামগ্রীর দোকান রয়েছে। ঢাকার মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্তরাই এখানে কেনাকাটা করে থাকেন। মার্কেটটির নিচতলা পাকা হলেও অবৈধভাবে টিনশেড তৈরি করে তা দোতলায় পরিণত করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে