বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রিমান্ড শেষে ২২ ছাত্র কারাগারে

যাযাদি রিপোটর্
  ১০ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০
পুলিশের ভ্যানে এক ছাত্র কান্নায় ভেঙে পড়েন Ñযাযাদি

পুলিশের ওপর হামলা ও ভাঙচুরের পৃথক দুই মামলায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ ছাত্রকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে আদালত। বৃহস্পতিবার ঢাকার মহানগর হাকিম সত্যব্রত শিকদার এই আদেশ দেন।

এর আগে পুলিশ দুই দিনের রিমান্ড শেষে তাদের আদালতে হাজির করে। ছাত্রদের আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেন। শুনানি নিয়ে আদালত ছাত্রদের জামিন আবেদন নাকচ করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এ সময় ছাত্রদের অভিভাবকরা আদালতের এজলাসে ভিড় করেন। ছাত্রদের রাখা হয়েছিল আদালতের হাজতখানায়। বিকালে তাদের প্রিজন ভ্যানে করে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার সময় অভিভাবকদের কেউ কেউ কান্নায় ভেঙে পড়েন।

এর আগে গত মঙ্গলবার এ ২২ ছাত্রের প্রত্যেকের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। গ্রেপ্তার আসামিরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইস্ট ওয়েস্ট, নথর্ সাউথ, সাউথ ইস্ট ও ব্র্যাকের ছাত্র। এর মধ্যে, বাড্ডা থানা-পুলিশ ১৪ ও ভাটারা থানা-পুলিশ ৮ ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে।

বাড্ডা থানা-পুলিশ ১৪ ছাত্রের ব্যাপারে আদালতকে জানিয়েছে, আসামিদের নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা তাদের নাম ও ঠিকানা দিয়েছেন। মামলার ঘটনার ব্যাপারে গুরুত্বপূণর্ তথ্য দিয়েছে। আসামিদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। এসব আসামিকে গ্রেপ্তার করার পর ঘটনাস্থলে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

অপরদিকে গ্রেপ্তার ৮ ছাত্রের ব্যাপারে ভাটারা থানা-পুলিশ আদালতের কাছে দাবি করে, গ্রেপ্তার আসামিরা পুলিশের ওপর হামলা করার কথা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন।

ছাত্রদের জামিন না দিতে উভয় থানা-পুলিশই আদালতকে বলে, মামলার তদন্তের জন্য পুনরায় তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজন হতে পারে।

ছাত্রদের পক্ষে তাদের আইনজীবীরা আদালতের কাছে দাবি করেন, গ্রেপ্তার শিক্ষাথীর্রা ভাঙচুর কিংবা পুলিশের ওপর হামলার সঙ্গে জড়িত না। গ্রেপ্তার ছাত্র ফয়েজ আহম্মেদ আদনানের আইনজীবী এ কে এম মুহিউদ্দিন ফারুক আদালতের কাছে দাবি করেন, তিনি নিজে দেখেছেন, পুলিশ কীভাবে ছাত্রদের নিযার্তন করেছে। গ্রেপ্তার সবাই ছাত্র অথচ পুলিশ মামলায় তা উল্লেখ করেনি। মামলার এজাহারের বক্তব্য মিথ্যা দাবি করে এই আইনজীবী বলেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিশু ছাত্ররা যে আন্দোলন করেছে, তাতে এসব শিক্ষাথীর্ সায় দিয়েছে। যারা ভাঙচুর করল পুলিশ তাদের ধরল না।

কয়েকজন শিক্ষাথীর্র আইনজীবী আদালতে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃর্পক্ষের দেয়া কাগজ জমা দিয়ে বলেছেন, তারা কোনো আন্দোলনে ছিল না। কোনো ভাঙচুর করেনি। তারা সেদিন ক্লাস করেছে। গ্রেপ্তার ছাত্র আমিনুল, হাসানুজ্জামাসহ কয়েকজন শিক্ষাথীর্র আইনজীবী আদালতকে জানান, আগামী সপ্তাহে তাদের পরীক্ষা আছে। জামিন না পেলে তাদের শিক্ষা জীবন মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হবে। আর মাসাদ মরতুজা বিন আহাদের আইনজীবী কামরুদ্দিন আদালতকে বলেন, নথর্ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছাত্রকে পুলিশ সেদিন মারধর করেছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ। হাত ও ঘাড়ে জখম হয়েছে। আদালত পরে এই ছাত্রকে কারাবিধি অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়ার নিদের্শ দেন।

ছাত্রদের আইনজীবীরা আদালতের কাছে আরও দাবি করেন, যারা হামলা করেছিল তাদের গ্রেপ্তার না করে নিরীহ এসব ছাত্রদের গ্রেপ্তার করে মারধোর করেছে পুলিশ।

এর আগে গত মঙ্গলবারও গ্রেপ্তার এসব ছাত্রদের আইনজীবীরা আদালতের কাছে দাবি করেন, পুলিশ ধরে নিয়ে তাদের থানায় নিযার্তন করেছে। সেদিন ছাত্রদের রিমান্ডে নেয়ার আবেদনে পুলিশ দাবি করে, সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা আফতাবনগর মেইন গেটের রাস্তায় যান চলাচলে বাধা দেয়। লাঠিসেঁাটা, ইটপাটকেল দিয়ে রাস্তার গাড়ি ভাঙচুর করে। পুলিশ বাধা দিলে পুলিশের ওপর আক্রমণ করে আসামিরা। আসামিরা বাড্ডা থানার ওসির গাড়ি ভাঙচুর করেছে। বাড্ডা পুলিশ ফঁাড়ি আগুন ধরাতে গেলে পুলিশ টিয়ারশেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

মঙ্গলবারের ওই রিমান্ড আবেদনে পুলিশ আরও বলে, একইদিন (সোমবার) বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার অ্যাপোলো হাসপাতাল ও নথর্ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় লোহার রড, লোহার পাইপ, ইট দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা করে আসামিরা। সকাল ১১টা থেকে বিকাল সাড়ে ৬টা পযর্ন্ত ঘটনাস্থলের আশপাশের দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসার দরজা-জানালা ভাঙচুর করে। পলাতক আসামিরা জঙ্গি গোষ্ঠীর সক্রিয় সদস্য। তাই পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার করতে এসব আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন।

বাড্ডার মামলায় গ্রেপ্তার ১৪ ছাত্র হলেন, রিসালাতুল ফেরদৌস, রেদোয়ান আহমেদ, রাশেদুল ইসলাম, বায়েজিদ, মুশফিকুর রহমান, ইফতেখার আহম্মেদ, রেজা রিফাত আখলাক, এএইচএম খালিদ রেজা, তারিকুল ইসলাম, নূর মোহাম্মদ, সীমান্ত সরকার, ইকতিদার হোসেন, জাহিদুল হক ও হাসান। আর ভাটারা থানার মামলায় গ্রেপ্তার ছাত্ররা হলেন, আজিজুল করিম, মাসাদ মরতুজা বিন আহাদ, ফয়েজ আহম্মেদ আদনান, সাবের আহম্মেদ, মেহেদী হাসান, শিহাব শাহরিয়ার, সাখাওয়াত হোসেন ও আমিনুল এহসান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<7324 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1