ছোট্ট শিশু। নাম তুহিন মিয়া। বয়স সাড়ে পাঁচ বছর। কদম গাছের ডালে ঝুলছিল তার নিথর দেহ। দুই কান কাটা। পেটে ঢোকানো দুটি ছুরি। নির্মমতার এখানেই শেষ নয়। তার যৌনাঙ্গটিও কেটে নেওয়া হয়েছে। নির্মম-নিষ্ঠুর এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার কেজাউরা গ্রামে। সোমবার সকালে পুলিশ গিয়ে ওই শিশুর লাশ উদ্ধার করে। তুহিনের বাবা আবদুল বাছির একজন কৃষক। সন্তানের সঙ্গে ঘটে যাওয়া এমন নিষ্ঠুরতায় পাগলপ্রায় অবস্থা বাবা আবদুল বাছির ও মা মনিরা বেগমের। নিহত শিশুটির আত্মীয় ইমরান আহমেদ বলেন, আবদুল বাছিরের তিন ছেলে ও এক মেয়ে। এর মধ্যে তুহিন দ্বিতীয়। ঘরের দুটি কক্ষে দুই ভাই বাছির ও মছব্বির তাদের পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। গতকাল রোববার রাতে খেয়েদেয়ে সন্তানদের নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন তারা। রাত আড়াইটার দিকে বাছিরের এক ভাতিজি তাদের ঘুম থেকে ডেকে তুলে বলে যে তাদের ঘরের দরজা খোলা। এরপর সবাই জেগে উঠে দেখেন তুহিন নেই। তখন প্রতিবেশীদেরও ডেকে তোলা হয়। শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। একপর্যায়ে বাড়ির পাশে রাস্তায় গিয়ে রক্ত দেখতে পান তারা। কিছুটা সামনে গিয়ে রাস্তার পাশে কদম গাছে তুহিনের ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান তারা। রাজানগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শাহজাহান মিয়া বলেন, 'এ রকম ঘটনা আমাদের এলাকায় আগে কখনো ঘটেনি। একটি শিশুকে এত বর্বরভাবে হত্যা করা হয়েছে, দেখলেই গা শিউরে ওঠে। মানুষে মানুষে বিরোধ-শত্রুতা থাকতে পারে। কিন্তু একটি নিষ্পাপ শিশুর কী অপরাধ?' আবদুল বাছিরের ভাই আবদুল মছব্বির বলেন, 'তুহিন এবার স্কুলে ভর্তি হয়েছিল। তার বাবার জমিজমা নিয়ে গ্রামের কিছু মানুষের সঙ্গে বিরোধ আছে। কিন্তু কে বা কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, আমরা বুঝতে পারছি না। যে-ই করে থাকুক, আমরা তাদের শাস্তি চাই।' দিরাই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু তাহের মোলস্নাহ সোমবার বেলা ১১টার দিকে বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে গেছে। লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এরপর ময়নাতদন্তের জন্য লাশ সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
তুহিন হত্যায় ‘পরিবারের
সুনামগঞ্জে পাঁচ বছরের শিশু তুহিন মিয়া হত্যায় পরিবারের ২/৩ জন সদস্যের সম্পৃক্ততা পাওয়ার কথা বলেছে পুলিশ।
সোমবার সন্ধ্যায় দিরাই থানায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান।
রোববার শেষ রাতে দিরাই উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের কেজাউড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল বাসিতের ছেলে তুহিন মিয়াকে (৫) হত্যা করে লাশ গাছে ঝুলিয়ে রাখে অজ্ঞাত খুনিরা।
এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সোমবার বিকালে তুহিনের বাবা আব্দুল বাসির, চাচা আব্দুল মসব্বির, নাসির উদ্দিন, চাচি খায়রুল নেছা, চাচাত বোন তানিয়া ও প্রতিবেশী আজিজুল ইসলামসহ সাতজনকে পুলিশ থানায় নিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা তুহিনের পরিবারের সাতজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে এসেছিলাম। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে ২/৩ জনের সম্পৃক্ততা আমরা পেয়েছি। যে ২/৩ জন হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত তারা পুলিশের কাছে বিষয়টি স্বীকার করেছে।
“প্রতিহিংসাবশত হতে পারে, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে হতে পারে, আবার মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে এ হত্যাকা- ঘটতে পারে; তদন্তের স্বার্থে সবকিছু বলা যাচ্ছে না।”
মিজানুর রহমান আরও বলেন, নিহতের বাবাসহ পরিবারের কয়েকজন সদস্য বিভিন্ন মামলার আসামি। এলাকায় তাদের একাধিক প্রতিপক্ষ রয়েছে। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে ঘায়েল করতে চায়।
তবে কারা হত্যাকা-ে জড়িত তা এড়িয়ে যান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, “এখনও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, সবাইকে আটক দেখানো হচ্ছে না। পুরোপুরি জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হলে হত্যা মামলা দায়ের করা হবে।”