শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আবরার হত্যার অভিযোগপত্র নভেম্বরে

ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত: আজ থেকে ফের আন্দোলন
যাযাদি রিপোর্ট
  ১৫ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ডের তদন্ত শেষে আগামী মাসে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম।

সোমবার সকালে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ হত্যার তদন্ত 'নভেম্বরের শুরুর দিকে' শেষ হবে বলে তিনি জানান।

মনিরুল বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে চারজনের আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে এসেছে যে, তারা শিবির সন্দেহে আবরারকে ডেকে নিয়ে মারপিট করছিল। একপর্যায়ে তার মৃতু্য হয়।

'বাকিদের জবানবন্দির পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তির বিশ্লেষণ ও অন্যান্য পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হবে যে, তারা আবরারকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিট করেছিল নাকি মারপিটের জন্য মারপিট করছিল।'

হত্যার উদ্দেশ্য না থাকলেও 'মারপিটের মাত্রা বেশি হওয়ায়' আবরারের মৃতু্য হয়ে থাকতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, 'শিবির সন্দেহে পেটানোর' কারণেই আবরারের মৃতু্য হয়েছে নাকি অন্য কিছু ছিল সে বিষয়েও তদন্ত করা হবে। কারও কারও জবানবন্দিতে এসেছে কয়েক ঘণ্টা ধরে মারধর করা হয়েছে।'

'তবে আমরা আশ্বস্ত করতে চাই, আগামী মাসের শুরুতে বিজ্ঞ আদালত যে তারিখ দিয়েছে তার আগেই, অর্থাৎ আমরা আশা করছি, আগামী মাসের শুরুর দিকে- এই মামলার তদন্ত কাজ শেষ হবে। তখন আমরা একটা পূর্ণাঙ্গ চিত্র দিতে পারব।'

তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে গত ৬ অক্টোবর রাতে শেরেবাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে কয়েক ঘণ্টা ধরে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়।

বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ একদল নেতাকর্মী শিবির সন্দেহে যে তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে, তা সংগঠনটির তদন্তে উঠেছে। আসামিদের জবানবন্দির বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে পুলিশও একই কথা বলছে।

আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় ১৯ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন, যাদের মধ্যে এজাহারভুক্ত ১৫ জন রয়েছেন বলে জানান মনিরুল।

ওই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, 'পুলিশ রাত ২টায় নয়, ৩টার পরে গিয়েছিল। কিন্তু পুলিশকে তখনো বলেছে, ভেতরে কোনো সমস্যা নাই।'

'সমস্যা থাকলে, কেউ (কর্তৃপক্ষ) জানালে তখন পুলিশ ঢুকে। সমস্যা না থাকলে হলে ভেতরে যাওয়ার রেওয়াজটা ওই ভাবে নাই।'

ওই রাতে সে এলাকায় টহলের তিনজন পুলিশ সদস্য ছিল জানিয়ে মনিরুল বলেন, হলে গোলমাল হয়েছে জেনে সেখানে গিয়েও কোনো চিহ্ন পায়নি তারা।

'জিজ্ঞাসাবাদে আমরা যেটা পেয়েছি, কেউ কেউ বলছে, পুলিশ যাওয়ার আগেই আবরার মারা গিয়েছে।'

শঙ্কা কাটিয়ে বুয়েটে

ভর্তি পরীক্ষা

আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে আন্দোলনে উত্তাল বুয়েট ক্যাম্পাসে কোনোরকম শঙ্কা ছাড়াই অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা। ভর্তি পরীক্ষার কারণে আন্দোলনকারীরা তাদের কার্যক্রম শিথিল করলে বুয়েট কর্তৃপক্ষ গতকাল ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করে।

সোমবার সকাল ৯টায় এই ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়। দুপুর ১২টা পর্যন্ত টানা তিন ঘণ্টা লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। স্থাপত্য বিভাগে ভর্তির জন্য আবেদনকারীদের দুপুর ২টায় অঙ্কন পরীক্ষা শুরু হয়। বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে এই পরীক্ষা।

এদিকে ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। ভর্তি পরীক্ষা শেষে আবীর নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, 'পরীক্ষা ভালো হয়েছে। কোনো রকম সমস্যায় পড়তে হয়নি।'

বুয়েট ক্যাম্পাসে অবস্থান করে দেখা যায়, বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে একবার ওয়ার্নিং দেয়া হয় পরীক্ষার্থীদের। এরপর পাঁচ মিনিট পর ১১টা ৫৯ মিনিটে পরীক্ষা সমাপ্তির ঘণ্টা বাজে।

এর আগে সকাল থেকেই পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভিড় জমে বুয়েট ক্যাম্পাসে। সকাল ৯টায় পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে কক্ষে প্রবেশ করলে অভিভাবকরা বাইরে অবস্থান নেন। পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য ফ্রি পানির ব্যবস্থা করে বুয়েট কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়াও অভিভাবকদের জন্য বসার সুব্যবস্থাও রাখে কর্তৃপক্ষ।

বুয়েটে রাসায়নিক প্রকৌশল বিভাগে ৬০, ধাতব প্রকৌশলে ৫০, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ১৯৫, পানিসম্পদ প্রকৌশলে ৩০, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ১৮০, নৌস্থাপত্য ও সামুদ্রিক প্রকৌশলে ৫৫, শিল্প ও উৎপাদন প্রকৌশলে ৩০, বৈদু্যতিক ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশলে ১৯৫, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশলে ১২০, বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ৩০, স্থাপত্য বিভাগে ৫৫ এবং নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগে ৩০টি আসন রয়েছে।

বুয়েটে ভর্তি আবেদন শুরু হয় ৩১ আগস্ট। আবেদন ও ভর্তি ফি প্রদানের শেষ দিন ছিল ৯ সেপ্টেম্বর। ভর্তি পরীক্ষার যোগ্য প্রার্থীদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয় ১৮ সেপ্টেম্বর। আবেদনকারীদের ভেতর থেকে প্রথম ১২ হাজার জনকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়।

আজ থেকে ফের আন্দোলন

আবরার ফাহাদ হত্যার বিচারসহ বিভিন্ন দাবিতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) আন্দোলন করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সোমবার আবরার হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন আন্দোলনকারীরা। আজ মঙ্গলবার থেকে আবার আন্দোলন পুরোদমে চলবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থী সাইদুল আরাফাত বলেন, তারা শিক্ষার পরিবেশ ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্দোলন করছেন। সব দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নিয়েছে, তাহলে আন্দোলন কেন, জানতে চাইলে সাইদুল আরাফাত বলেন, মেনে নেওয়ার ঘোষণা আর বাস্তবায়ন এক নয়। শিক্ষার্থীরা কেবল আশ্বাস নয়, বাস্তবায়নও দেখতে চান।

অমিত সাহা ছাত্রলীগ

থেকে স্থায়ী বহিষ্কার

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।

সোমবার ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অমিত সাহাকে বহিষ্কারের বিষয়টি জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির এক জরুরি সিদ্ধান্ত মোতাবেক জানানো যাচ্ছে যে, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় ছাত্রলীগ কর্তৃক গঠিত দুই সদস্যের তদন্ত কমিটির অধিকতর তদন্ত সাপেক্ষে এই তথ্য উঠেছে এসেছে, অমিত সাহা ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থাকলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কথোপকথনের মাধ্যমে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অধিকতর তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হলো।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<71231 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1