শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাবির ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন নিয়ে বিতর্ক

যাযাদি রিপোর্ট
  ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে সম্মান প্রথমবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা চলছে। ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদভুক্ত 'গ' ইউনিট, বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত 'ক' ইউনিট ও সর্বশেষ কলা অনুষদভুক্ত 'খ' ইউনিটের পরীক্ষা এরই মধ্যে শেষ হয়েছে।

প্রথমবারের মতো লিখিত পরীক্ষাযুক্ত হওয়ায় অনুষদের কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। পরীক্ষা শেষে শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন দেয়া, না দেয়া নিয়েও ভর্তিচ্ছু অভিভাবকরা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

বিগত ৫ বছরে অনুষ্ঠিত পরীক্ষাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অনুষদে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন রেখে দেয়া হতো না। প্রশ্ন রেখে দেয়ার সংস্কৃতি চালু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের মধ্য দিয়ে। ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদভুক্ত 'গ' ইউনিটের অধীনে স্নাতক প্রথমবর্ষ ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নে একাধিক ভুল পাওয়া যায়।

এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে সমালোচনা হয় ঢাবির প্রশ্নপত্রের মান নিয়ে। প্রতি সেটে ১০০টি প্রশ্ন থাকার কথা থাকলেও একটি সেটে প্রশ্ন ছিল ৯৯টি। এরপরে অনুষদ প্রশ্ন রেখে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু অন্য অনুষদ পরীক্ষার প্রশ্ন দিয়ে দিত শিক্ষার্থীদের।

চলতি বছর প্রথমবারের মতো ৪৫ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা যুক্ত হয়েছে। যা নিয়ে শিক্ষার্থীদের কোনো ধরনের ধারণা ছিল না। বরাবরের মতো এবারও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের পরীক্ষার প্রশ্ন রেখে দেয়া হয়। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরীক্ষার প্রশ্ন পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম বলেন, 'প্রশ্ন রেখে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার কারণ হচ্ছে, তিন বছর আগে এক ছাত্র 'খ' সেটের সঙ্গে 'গ' সেটের প্রশ্ন সংযুক্ত করে ফটোকপি করে নিয়ে আসে। ওই ছাত্র বলে প্রশ্ন ভুল আছে, মামলা করব। তখন আমরা পরীক্ষা করে দেখি বিষয়টা মিথ্যা। তখন থেকে অনুষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশ্ন পরীক্ষার পর কালেক্ট করার।'

অন্যদিকে বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত 'ক' ইউনিটের নৈর্ব্যক্তিক ও লিখিত অংশের প্রশ্ন শিক্ষার্থীদের দিয়ে দেয়া হয়। তবে শনিবার অনুষ্ঠিত কলা অনুষদের প্রশ্ন কিছু কেন্দ্রে রেখে দেয়া হয় আবার কিছু কেন্দ্রে দিয়ে দেয়া হয়।

ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটসহ বেশ কয়েকটি পরীক্ষার কেন্দ্রে প্রশ্ন শিক্ষার্থীদের দিয়ে দেয়া হয়। আবার কলা ভবন, কার্জন হলের বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রশ্ন রেখে দেয়া হয়। আবার কোনো কোনো কেন্দ্রে শুধু লিখিত অংশের প্রশ্ন দেয়া হয়।

কিশোরগঞ্জের রফিকুল ইসলাম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করা ও ভর্তিচ্ছু সোহাগ বলেন, পরীক্ষা ভালো দিয়েছি। তবে আমার হাতে এখন কোনো প্রশ্ন নেই। কত নম্বর আনসার করেছি এবং কত পেতে পারি তা হিসাব করার সুযোগ নেই, কারণ প্রশ্ন পরীক্ষার হলে রেখে দেয়া হয়েছে। শোনলাম শুক্রবার যারা পরীক্ষা দিয়েছে তাদের প্রশ্ন দিয়ে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে আমার অনেক বন্ধুও রয়েছে।

'কিন্তু শনিবার আমাদেরটা রেখে দিল। এগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত থাকা উচিত।'

কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের সাইমুম হাসনাত বলেন, লিখিত পরীক্ষায় ইংরেজি অংশের সব উত্তর করতে পারিনি। এমসিকিউ কতটা হয়েছে সেটাও দেখতে পারছি না। আমার বন্ধুদের কিন্তু পরীক্ষার প্রশ্ন দেয়া হয়েছে। আমাদের দেয়নি, এটা একটা বৈষম্য।

সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে পরীক্ষা দেয়া রাজশাহী থেকে আসা শাহীন আলম বলেন, আমাদের হলে সবাইকে লিখিত অংশ দিয়েছে। কিন্তু অন্য হলে দেয়নি শুনেছি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আল-আমিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত থাকবে। হয় প্রশ্ন দিব, না হয় দিব না। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে প্রশ্ন দিচ্ছে না। অথচ প্রশ্ন ঠিকই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বলেছেন, এ বিষয়ে অনুষদগুলোর কমন সিদ্ধান্ত থাকা প্রয়োজন।

তবে অভিভাবকরা মনে করেন, প্রশ্নে হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন দেয়া যেতে পারে। নেত্রকোনা থেকে আসা এক পরীক্ষার্থীর অভিভাবক আবুল হাশেম বলেন, প্রশ্ন দিয়ে দিলে পরবর্তী বছরে শিক্ষার্থীরা প্রস্তুতি নিতে সুবিধা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবু মো. দেলোয়ার বলেন, 'এ বিষয়ে অনুষদ সিদ্ধান্ত নিতে পারে। শনিবারের পরীক্ষায় প্রশ্ন না দেয়ার সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু কিছু কেন্দ্রে প্রশ্ন দিয়ে দেয়া হয় সেটা শুনেছি। আগামী পরীক্ষায় আমরা সিদ্ধান্ত নেব।'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, অনুষদগুলো সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

এক অনুষদে কিছু শিক্ষার্থী প্রশ্ন পেল আবার কিছু শিক্ষার্থী প্রশ্ন পায়নি- এ বিষয়ে তিনি বলেন, একই অনুষদে ভিন্ন নিয়ম হওয়া উচিত নয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<67897 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1