বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পেঁয়াজ নেই, তবুও বিক্রির ঘোষণা টিসিবির

টিসিবির মুখপাত্র মো. হুমায়ুন কবির বলেন, সোমবার থেকে ন্যায্যমূল্যে খোলাবাজারে পেঁয়াজ বিক্রির কথা ছিল; কিন্তু এখনো বিক্রি শুরু হয়নি। পেঁয়াজ কেনার কাজ শুরু হয়েছে।
যাযাদি রিপোর্ট
  ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০
আপডেট  : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:১৪

কেনা হয়নি পেঁয়াজ। সরকারের গোডাউনেও মজুত নেই। তারপরও ন্যায্যমূল্যে পেঁয়াজ বিক্রির ঘোষণা দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কোনো প্রস্তুতি না থাকায় খোলাবাজারে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেনি ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোমবার টিসিবির মুখপাত্র মো. হুমায়ুন কবির বলেন, সোমবার থেকে ন্যায্যমূল্যে খোলাবাজারে পেঁয়াজ বিক্রির কথা ছিল; কিন্তু এখনো বিক্রি শুরু হয়নি। পেঁয়াজ কেনার জন্য কাজ শুরু হয়েছে। খোলাবাজারে বিক্রি শুরু করতে কয়েক দিন সময় লাগবে। তিনি বলেন, পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে দুটি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি স্বল্প সময়ে বন্দর থেকে পেঁয়াজ কেনার জন্য টিসিবি কাজ শুরু করেছে। পেঁয়াজ কেনা হলে এর ওপর ভর্তুকি দিয়ে দাম নির্ধারণ করা হবে। দ্রম্নত এসব কার্যক্রম শেষ করা হবে। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ হিসেবে মিসর, তুরস্কসহ কয়েকটি দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির কথাবার্তা চলছে। দেশে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতার কারণে রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সভাপতিত্বে সভা হয়। সভায় বাজারে স্থিতিশীলতা আনার জন্য কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যার একটি ছিল সোমবার থেকে টিসিবির মাধ্যমে খোলাবাজারে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করা। এছাড়া বন্দরে আমদানি করা পেঁয়াজ দ্রম্নত খালাস করা, পরিবহনের নির্বিঘ্ন চলাচল নিশ্চিত করা, পেঁয়াজ আমদানিতে এলসি মার্জিন ও সুদের হার হ্রাসে বাংলাদেশ ব্যাংককে পত্র দেয়ার মতো কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরপর পেঁয়াজের দামের ঊর্ধ্বগতি রোধে সোমবার থেকে ন্যায্যমূল্যে ট্রাক সেলের মাধ্যমে টিসিবি খোলাবাজারে পেঁয়াজ বিক্রি করবে বলে গত রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে এলসি মার্জিন এবং সুদের হার হ্রাসের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এছাড়া বন্দরে আমদানিকৃত পেঁয়াজের খালাস প্রক্রিয়া দ্রম্নততার সঙ্গে সম্পন্ন করা এবং নির্বিঘ্নে পরিবহন নিশ্চিত করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষ বরাবর চিঠি পাঠানো হয়েছে। জানা গেছে, নিজেদের বাজার সামাল দিতে পেঁয়াজ রপ্তানির নূ্যনতম মূল্য টনপ্রতি ৮৫০ ডলার বেঁধে দিয়েছে ভারত। এ খবরে দু'দিনে দেশের বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রায় ২০ থেকে ২৫ টাকা। ঢাকার বড় বড় বাজারে এখন ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ ৭০-৭৫ টাকা, দেশি কিং নামের এক ধরনের পেঁয়াজ ৬০-৬৫ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবারও দেশি পেঁয়াজ ৫০-৫৫ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৪৫-৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। খুলনার বাজারে আগুন এদিকে খুলনা থেকে আমাদের প্রতিবেদক আতিয়ার রহমান জানান, ভারতে দাম বৃদ্ধির ঘোষণাতেই খুলনায় পেঁয়াজের বাজারে আগুন লেগেছে। মাত্র দু'দিনের ব্যবধানেই ৫০ টাকা কেজির পেঁয়াজ ৮০ টাকায় ঠেকেছে। অথচ পূর্বের এলসির পেঁয়াজই খুলনার বাজারে বিক্রি হচ্ছে। যার মাশুল গুণতে হচ্ছে মধ্য ও নিম্নাবত্ত শ্রেণির ভোক্তাদের। আর ব্যবসায়ীদের বরাবরের ন্যায় একই অজুহাত সম্প্রতি ভারতের নাসিকসহ কিছু এলাকায় বন্যা হওয়ার কারণে ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে দেশীয় বাজারে। সোমবার নগরীর বিভিন্ন বাজারে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ৮০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৭০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। অথচ গেল শুক্রবার প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ৫৫ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। প্রাপ্ততথ্য মতে, ২০১৭ সালে এই সময়ে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৩০-৩৫ টাকা, ২০১৮ সালে ৫৫-৬০ টাকা এবং ২০১৯ সালের জুলাই মাসে দেশি পেঁয়াজ মানভেদে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য দ্বিগুণ করেছে ভারত। প্রতিবেশী দেশটির বাজারে দাম বাড়ায় বাংলাদেশে পেঁয়াজের রপ্তানি নিরুৎসাহিত করতে ভারত এ কাজ করেছে বলে জানান হিলি স্থলবন্দরের একাধিক আমদানিকারক। আর এ ঘোষণা শোনার সঙ্গে সঙ্গে সব ধরনের পেঁয়াজের দাম ইচ্ছামাফিক বাড়িয়ে দিয়েছে এ দেশের ব্যবসায়ীরা। অথচ ভারতে দাম বৃদ্ধির ঘোষণার পর সেই বাড়তি দামের পেঁয়াজ আমদানির কোনো প্রক্রিয়াই এখনো শুরু করেননি দেশের আমদানিকারকরা। শুধু ভারত পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য দ্বিগুণ করার ঘোষণাতেই মাত্র দু'দিনের ব্যবধানে তারা দেশীয় বাজারে সব ধরনের পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৩০ টাকা বৃদ্ধি করেছে। নগরীর কদমতলা রোড এলাকায় আসা ব্যবসায়ী জাকির হোসেন মোলস্না বলেন, সব ধরনের পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, ভারতে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় খুলনায়ও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। আরেক ব্যবসায়ী সেলিম সরদার বলেন, হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৮০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বড় বাজারে আসা ক্রেতা রূপসা স্ট্যান্ড রোডের মো. আবু জাফর শেখ বলেন, বাজারে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। দু'দিন আগে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৫০/৫৫ টাকা দরে অথচ সেই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০ টাকা। এছাড়া দু'দিন আগে ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা। অথচ সেই পেঁয়াজের দাম বেড়ে হয়েছে ৭০ টাকা। নগরীর কদমতলা রোডের মেসার্স সোহেল ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, সব ধরনের পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়তি, তাই খুলনায় পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে