বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ফ্রান্সে যাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে লাশ হলেন স্স্নোভাকিয়ার জঙ্গলে

নতুনধারা
  ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০
ফরিদ উদ্দিন আহমেদ

যাযাদি ডেস্ক

দালাল ধরে ইউরোপের দেশ ইউক্রেন থেকে ফ্রান্স যাওয়ার পথে স্স্নোভাকিয়ার জঙ্গলে নিখোঁজ হয়েছিলেন ফরিদ উদ্দিন আহমেদ (৩৫)। ৯ সেপ্টেম্বর স্স্নোভাকিয়ার পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে। এখন তার লাশ বাংলাদেশে নিয়ে আসার প্রস্তুতি চলছে।

ফরিদের বাড়ি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার কারিকোনা গ্রামে। গত বৃহস্পতিবার রাতে ফরিদের স্বজনেরা তার লাশ শনাক্ত করেন।

স্বজনেরা জানিয়েছেন, ২০১৮ সালে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখতে রাশিয়া গিয়েছিলেন ফরিদ। খেলা শেষ হওয়ার মাসখানেক পর তিনি রাশিয়া থেকে ইউক্রেন যান এবং সেখানে দীর্ঘদিন অবস্থান করেন। সম্প্রতি ইউক্রেন থেকে ফ্রান্স যাওয়ার জন্য রাশিয়ায় অবস্থানরত 'দাদা' নামে পরিচিত দালাল লিটন বড়ুয়ার সঙ্গে চুক্তি করেন।

নিহতের পরিবারের লোকজন জানান, লিটনের বাড়ি চট্টগ্রামে। চুক্তি অনুযায়ী লিটনের এজেন্ট বাংলাদেশে থাকা সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার এক দালালের কাছে ৭ লাখ টাকা জমা রাখে ফরিদের পরিবার। এরপর দালালের সঙ্গে কথা হয়েছিল, মাত্র ২ ঘণ্টা হেঁটে এবং বাকি রাস্তা বৈধপথে গাড়িতে করে ফরিদকে ফ্রান্স পৌঁছে দেয়া হবে। সে অনুযায়ী ফরিদ ইউক্রেনে দালালের শিবিরে গিয়ে এক মাস অবস্থান করেন এবং গত ২৮ আগস্ট ফ্রান্সের উদ্দেশে একজন দালালের সঙ্গে ছয়জন সঙ্গীসহ যাত্রা শুরু করেন।

গত ২ সেপ্টেম্বর ফরিদের ফ্রান্স যাত্রাপথের এক সঙ্গী ফোন করে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত ফরিদের ভাই কাওছার আলীকে জানান, হেঁটে ইউক্রেন থেকে ফ্রান্স পৌঁছাতে ৫ দিন সময় লাগে। কিন্তু তাদের সঙ্গে খাবার ছিল মাত্র দুই দিনের। দুই দিন হেঁটে দালালসহ ফ্রান্সগামী সবাই স্স্নোভাকিয়ার একটি জঙ্গলে পৌঁছান। সেখানে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ফরিদের সঙ্গীদের দাবি, অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তারা সকালে ফরিদকে না পেয়ে তাকে ছাড়াই ফ্রান্স চলে যান। ওই দালালের সঙ্গে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার একজন এবং হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার চারজন ছিলেন। তারাও ফরিদের মতো ফ্রান্স যাচ্ছিলেন। ২ সেপ্টেম্বর তারা ফ্রান্স পৌঁছান।

৯ সেপ্টেম্বর স্স্নোভাকিয়ার একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে সংবাদ প্রকাশ হয়, স্স্নোভাকিয়ার স্টারিনা জঙ্গলে একজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সংবাদ যুক্তরাজ্যে থাকা ফরিদের স্বজনদের চোখে পড়ে। পরে তারা যুক্তরাজ্য পুলিশের সহায়তায় খোঁজ নিয়ে ফরিদের লাশ শনাক্ত করেন।

ফরিদের মৃতু্যর খবর প্রচারিত হওয়ার পর থেকে এলাকায় শোক চলছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ফরিদ উপজেলার সদর ইউনিয়নের কারিকোনা গ্রামের সমশাদ আলীর ছেলে। ছয় ভাই ও এক বোনের মধ্যে ফরিদ সবার বড় ছিলেন। তার স্ত্রী সেলিনা সুলতানা উপজেলার রামধানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা। তাদের তিন বছর বয়সি এক কন্যাসন্তান আছে। ফরিদ বিদেশ যাওয়ার আগে স্থানীয় ইস্টার্ন ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন।

ফরিদের ভাই গিয়াস উদ্দিন বলেন, তাদের ধারণা যে ফরিদকে স্স্নোভাকিয়ার জঙ্গলে হত্যা করে সেখানেই ফেলে রেখে দালাল ও অপর সঙ্গীরা ফ্রান্সে চলে যান। ২ ঘণ্টা হেঁটে এবং বাকি রাস্তা বৈধভাবে গাড়িতে করে তাদের ভাইকে ফ্রান্স পৌঁছে দেয়ার চুক্তি হয়েছিল। দালালেরা তার ভাইয়ের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন এবং হত্যা করেছেন। তারা এ ঘটনার বিচার চান।

সব ধরনের প্রস্তুতি শেষে আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে তার ভাইয়ের মরদেহ বাংলাদেশ আসবে বলে গিয়াস উদ্দিন জানিয়েছেন।

সোমবার দুপুরে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বর্ণালী পালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি তার জানা নেই। তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<67176 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1