বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির প্রবিধানে পরিবর্তন আসছে

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

বেসরকারি স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে অনিয়ম আর দুর্নীতির অসংখ্য অভিযোগ জমা হচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। ম্যানেজিং কমিটির হাতে শিক্ষকদের হেনস্থা হওয়া, কারণে-অকারণে বরখাস্ত করা, নিয়ম ভেঙে নিয়োগ বাণিজ্য, অবসরভাতা ঝুলিয়ে রাখার অভিযোগই বেশি। এরইমধ্যে এর সত্যতাও খুঁজে পেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা বিভাগ। এ অবস্থায় বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির প্রবিধানমালা সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আসা কিছু অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গিয়ে, সামনে আসে রাজধানীর উইলস্‌ লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিষয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিদ্যালয়টির পরিচালনা কমিটি নিয়ম ভেঙে নিজেদের ইচ্ছামতো কর্তৃত্ব চালাচ্ছে। নিজেদের মতের সঙ্গে না মিললেই শিক্ষকদের বরখাস্ত করা হয় এখানে।

এমনই এক ভুক্তভোগী উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি বিভাগের সাবেক প্রধান নাজমা হোসেন লাকী। তিনি জানান, সতেরো বছর তিনি ওই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। গত ৭ আগস্ট ঈদের তিন দিন আগে তাকে বিনা কারণে বরখাস্ত করে ম্যানেজিং কমিটি।

তিনি জানান, ম্যানেজিং কমিটির চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান টিটুর ইচ্ছামতো চলে বিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠানের নিয়ম ভেঙে ননগ্রাজুয়েট শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। বিজ্ঞপ্তি ছাড়া বিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণ, ক্রয়-বিক্রয়, নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগও রয়েছে এ পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে। এই অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় গত কয়েক মাসে ১০ জন শিক্ষককে বরখাস্ত করে ম্যানেজিং কমিটি। তিনজনকে চাকরিচু্যত করা হয়। এসব শিক্ষকরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এই অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।

সে অভিযোগ খতিয়ে দেখতে মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তদন্ত কাজে কমিটির গড়িমসি দেখে শিক্ষকরা প্রধানমন্ত্রীয় কার্যালয়ে গত মাসে গভর্নিং বডির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। সেখান থেকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখতে নির্দেশ আসে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে।

এ প্রসঙ্গে তদন্ত কমিটির প্রধান মো. নাসির উদ্দীন জানান, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ অনেক জনপ্রিয় এবং বড় প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ এসেছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দীর্ঘ সময় ধরে তদন্ত কাজ চলছে, এখন শেষ পর্যায়ে। দ্রম্নত সময়ের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে অপরাধীরা নিয়ম অনুযায়ী শাস্তি পাবে বলে উলেস্নখ করেন তিনি।

এদিকে অনুমতি নিয়ে দুদিন বিদ্যালয়ে গিয়েও দেখা পাওয়া যায়নি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবুল হোসেন এবং ম্যানেজিং কমিটির চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান টিটুর। তাদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তারা সাড়া দেননি।

এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরে গিয়ে জানা গেছে, শুধু রাজধানীই নয় সারাদেশ থেকে ম্যানেজিং কমিটির বিরুদ্ধে এমন অসংখ্য অভিযোগ তাদের কাছেও আসছে। তবে প্রতিবছর কত সংখ্যক অভিযোগ আসছে তার পরিসংখ্যান তাদের কাছে নেই।

পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের যুগ্মপরিচালক বিপুল চন্দ্র সরকার জানান, জনবল সংকটের কারণে সব অভিযোগ খতিয়ে দেখা সম্ভব হয় না। তবে গুরুত্বপূর্ণ এবং স্বনামধন্য বিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ তারা দ্রম্নত আমলে নিয়ে খতিয়ে দেখেন।

তিনি আরও জানান, বর্তমানে দেশে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩৬ হাজার। এ সব বিদ্যালয় পরিদর্শন ও নিরীক্ষার জন্য কাজ করেন মাত্র ২৮ জন কর্মকর্তা। যদিও প্রতি বছর তাদের সাড়ে তিন হাজারের মতো বিদ্যালয় পরিদর্শন করার লক্ষ্য থাকে। এই বিভাগের জন্য সাতশ জনবল চেয়ে মন্ত্রণালয়কে চাহিদা প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

এদিকে এসব অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ আমলে নিয়ে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির প্রবিধানে সংশোধন আনার কাজ শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট বোর্ডগুলোর সুপারিশ নিয়ে মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তর সংশোধনী খসড়া প্রস্তাব পাঠিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। তা নিয়ে কাজ করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, নতুন সংশোধনীতে শিক্ষকদের কী কী কারণে এবং কী ধরনের শাস্তি দেয়া যাবে তা সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে।

সংশোধনীতে থাকছে

# কোনো শিক্ষক অদক্ষ, দুর্নীতি, কর্তব্যে অবহেলা, প্রতিষ্ঠানের স্বার্থের পরিপন্থি কাজ করলে তাকে শাস্তি দেয়া যাবে। তবে তদন্ত কমিটির সুপারিশে শাস্তি কার্যকর করতে হবে।

# পরিচালনা কমিটি ছোটখাটো অভিযোগে চাইলেই প্রধান শিক্ষক কিংবা অন্য শিক্ষকদের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।

# কাউকে দুই মাসের বেশি বরখাস্ত করে রাখতে পারবে না। রাখলে পুরা বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হবে। তবে বরখাস্ত বা অপসারণের প্রস্তাব শিক্ষা বোর্ডের আপিল ও সালিশি কমিটির মাধ্যমে পরীক্ষিত হতে হবে এবং বোর্ডের অনুমোদন লাগবে।

# পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সদস্যরা পারিশ্রমিক নিতে পারবে না।

# সভা বাবদ কী পরিমাণ অর্থ পরিচালনা কমিটি খরচ করতে পারবে তাও প্রবিধানে নির্ধারণ করে দেয়া হচ্ছে।

# কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী কাঙ্ক্ষিত ফলাফল না করলে পরিচালনা কমিটিকে বোর্ডের কাছে জবাবদিহি করার বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে।

# এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পর পর তিন বছর ফলাফল খারাপ করলে সরকারি অনুদান বাতিল করা হবে। প্রতিষ্ঠানের পাঠদানের অনুমতি ও স্বীকৃতি বাতিলের বিষয় থাকছে সংশোধনীতে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<66854 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1