শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ডেঙ্গুতে আর্থিক ক্ষতি সাড়ে তিনশ কোটি টাকা: সমীক্ষা

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর প্রকোপ এ বছর আর্থিকভাবে কতটা ক্ষতির কারণ হয়েছে সে বিষয়ে সরকারি কোনো হিসাব এখনো আসেনি; তবে এর পরিমাণ সাড়ে তিনশ কোটি টাকার কম নয় বলে মনে করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে তিন মাসের তথ্য বিশ্লেষণ করে এক গবেষণায় বলা হচ্ছে, এই সাড়ে তিনশ কোটি টাকার মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসায় সরাসরি খরচ হয়েছে অন্তত ২২৬ কোটি।

পাশাপাশি রোগীদের সঙ্গে হাসপাতালে অবস্থানকারীদের পেছনে খরচ ও তাদের কর্মঘণ্টার হিসাবে আরও প্রায় ৮১ কোটি টাকার ক্ষতি ধরা হয়েছে এই সমীক্ষায়। যারা মারা গেছেন তাদের (ইয়ার অব লাইফ লস) অর্থনৈতিক ক্ষতি ধরা হয়েছে প্রায় ৪০ কোটি টাকা।

তাদের হিসাবে, সব মিলিয়ে এবার ডেঙ্গুতে এরইমধ্যে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৩৪৬ কোটি টাকা। তবে যারা হাসপাতালের বহিঃবিভাগে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরে গেছেন তাদের খরচ এখানে অন্তর্ভুক্ত হয়নি।

এ বছর জানুয়ারি থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারি হিসাবে প্রায় ৭৭ হাজার ডেঙ্গু রোগী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ৬০ জনের মৃতু্যর তথ্য নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

সরকারি তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এ সমীক্ষা করে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করা হয়েছে বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, 'আমরা ইনস্টিটিউট থেকে স্বউদ্যোগে এ আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। মধ্য অক্টোবর নাগাদ পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেব। প্রাথমিকভাবে আমরা পেয়েছি, এ বছর ডেঙ্গুতে শুধু হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের পেছনে প্রায় ৩৪৬ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।'

তিনি বলেন, যারা মারা গেছেন তাদের জীবনের মূল্য তো আর্থিকভাবে হিসাব করা যাবে না। কিন্তু মাথাপিছু আয় বিবেচনা করে তাদের গড় বয়সের হিসাবে আর্থিক ক্ষতিটা তুলে ধরা হয়েছে।

সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাসপাতালে ভর্তি ফি, শয্যা ভাড়া, পরীক্ষার ফি, ডাক্তার ফি, ওষুধ ও খাবার খরচ মিলিয়ে স্থানীয় সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী প্রতি ব্যয় হয়েছে প্রায় ১০ হাজার ৯৫২ টাকা। এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে পাঠানো রোগীর খরচ হয়েছে ২০ হাজার ৪৯৩ টাকা।

বেসরকারি নামি-দামি হাসপাতালে দুই লাখ ১৭ হাজার ১৪ টাকা এবং সাধারণ হাসপাতালে ৪১ হাজার ৩১৯ হাজার টাকার ব্যয়ের তথ্যও রয়েছে।

গড় বয়স ৩০ বছর বিবেচনায় বৈজ্ঞানিকভাবে হিসাব করে মৃত ৬০ জনের জন্য আর্থিক ক্ষতি ধরা হয়েছে সাড়ে ৩৯ কোটি টাকা।

অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ জানান, জানুয়ারি থেকে রোগী আসছে। তারা কাজ শুরু করেন জুলাই-সেপ্টেম্বরে। ঢাকা শহরের অন্তত ১২টি হাসপাতালের কয়েকশ রোগীর ওপর এ সমীক্ষা চালানো হয়। ঢাকার ভেতরে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে রোগীরা চিকিৎসা নিয়েছেন। ঢাকার বাইরে যাদের অবস্থা খারাপ তাদের ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অধিকাংশই সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

'আমাদের শিক্ষার্থীরা সমীক্ষার জন্যে নামি-দামি হাসপাতাল ও সাধারণ মানের হাসপাতালের রোগী ও তাদের পরিজনের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা মানে তাকে থাকতে হয়েছে। এখানে সরাসরি একটা খরচ। এর বাইরে রোগীর সঙ্গে অন্তত দুইজন এটেনডেন্ট থাকতে হয়েছে। এদের কর্মঘণ্টার ক্ষতি হয়েছে। এ তিন জনের অর্থনৈতিক মূল্য আমরা বের করেছি।'

'দ্বিতীয়ত যারা মারা গেছেন। গড় হিসাবে তাদের অধিকাংশই অন্তত ৩৫ বছর কন্ট্রিবিউট করতে পারত। বর্তমান মাথাপিছু আয় বিবেচনা করে তাদের অনুমিত কন্ট্রিবিউশনের অর্থনৈতিক ক্ষতিটা তুলে ধরেছি। সব মিলিয়ে প্রায় ৩৪৬ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে আমরা তুলে ধরেছি।'

অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ জানান, হাসপাতালে ভর্তি ছাড়া ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসা খরচের পাশাপাশি এই রোগ থেকে বাঁচতে মশা প্রতিরোধে স্প্রে, কয়েল, মশারিসহ বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম কেনার খরচ গবেষণার বাইরে রাখা হয়েছে। এসব খরচের মধ্যে এলে ব্যয় আরও ১০০ কোটি টাকা বাড়বে বলে মনে করছেন তিনি।

তিনি বলেন, 'আমরা যেটা করতে পারিনি আউট প্যাশেন্টের খরচ। টেস্টে কারও পজিটিভি, কারও নেগেটিভ এসেছে। ধরা পড়লেও আর্লি স্টেজ হওয়ায় ডাক্তার তাদের বাসায় পাঠিয়েছে, হাসপাতালে সিট না থাকায় ভর্তি হতে পারেনি। সব মিলিয়ে এ খরচ আরও ১০০ কোটি যোগ হতে পারত বলে ধারণা করছি।'

সমীক্ষার কাজ চলমান রয়েছে জানিয়ে এই অধ্যাপক বলেন, সারা বছরের তথ্য জোগাড় না করা গেলেও আগামী ১৫ অক্টোবর নাগাদ কাজ শেষে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে পারবেন বলে আশা করছেন তারা।

আড়াই মাস পর ঢাকায় ডেঙ্গু

রোগীর সংখ্যা ১৫৬

রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালে নতুন ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমে ১৫৬ জনে নেমে এসেছে। প্রায় আড়াই মাস পর ঢাকায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমল। একই সঙ্গে কমেছে ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা।

গত ২৪ ঘণ্টায় অর্থাৎ শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত রাজধানী ঢাকায় ১৫৬ জন ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন বিভাগীয় শহরের হাসপাতালে নতুন ৩৭১ জনসহ সারা দেশে ৫২৭ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হন।

গত ২৩ জুলাইয়ের পর এই প্রথম সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা সাড়ে ৫০০ জনের নিচে নামল। আর এ মৌসুমে গত ২ জুলাই সর্বশেষ রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে সর্বনিম্ন ১৫৫ জন রোগী ভর্তির তথ্য রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার এসব তথ্য জানিয়েছেন।

রাজশাহীতে নারীর মৃতু্য

এদিকে রাজশাহী অফিস জানায়, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত এক নারীর মৃতু্য হয়েছে। শনিবার সকাল ১০টা ৫ মিনিটে হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। নিহতের নাম রওশন আরা (৫৫)। তিনি কুষ্টিয়া জেলার দৌলপুর গ্রামের মোসলেম উদ্দিনের স্ত্রী।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস জানান, ডেঙ্গজ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ১০ সেপ্টেম্বর রওশন আরা হাসপাতালে ভর্তি হন। তার শারীরিক অবস্থান অবনতি হলে ১২ সেপ্টেম্বর তাকে আইসিইউেিত নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

মাদারীপুরে যুবলীগ নেতার মৃতু্য

অন্যদিকে মাদারীপুরের স্টাফ রিপোর্টার জানান, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার উমেদপুর ইউনিয়ন যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক মো. সেলিম মাদবরের (৩৫) মৃতু্য হয়েছে। তিনি উপজেলার উমেদপুর ইউনিয়নের রামরায়েরকান্দি গ্রামের লালমিয়া মাদবরের ছেলে।

জানা গেছে, সেলিম মাদবর গত ১০ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার রাতে প্রথমে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে শিবচরের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি হন। পরদিন বুধবার উন্নত চিকিৎসার জন্য পরিবারের লোকজন ঢাকার আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে ভর্তি করেন। তার অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় তাকে ওই হাসপাতালের আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা চলছিল। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার রাত ৯দিকে তিনি মারা যান। শনিবার সকালে তার লাশ শিবচরের নিজ বাড়িতে আনা হয়।

ডেঙ্গুজ্বরে সিরাজগঞ্জে নারীর মৃতু্য

এছাড়া সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, ডেঙ্গুজ্বরে সিরাজগঞ্জে নিলুফার ইয়াসমিন (৫৬) নামে এক নারীর মৃতু্য হয়েছে। শুক্রবার দিবাগত রাতে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেয়ার পথে তার মৃতু্য হয়। ইয়াসমিন সিরাজগঞ্জ পৌরসভা এলাকার রহমতগঞ্জ গ্রামের মৃত নুরুল ইসলামের স্ত্রী।

মৃতের ছেলে সুমন জানান, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১১ সেপ্টেম্বর শহরের বেসরকারি নর্থ বেঙ্গল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন তার মা ইয়াসমিন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য শুক্রবার রাতে তাকে ঢাকার সিএমএইচ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন।

শনিবার দুপুরে নর্থ বেঙ্গল হাসপাতালের মেডিসিনি বিভাগের সহকারী রেজিস্টার ডা. এসএম নাজিম ওয়াহিদ উলস্নাহ বলেন, ইয়াসমিনের রক্তে পস্নাটিলেটের সংখ্যা কমে যাওয়ায় তাকে ঢাকার সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়েছিল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<66850 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1