শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

দল পুনর্গঠন নিয়ে ফের অনিশ্চয়তায় বিএনপি

ছাত্রদলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারেক: ফখরুল
যাযাদি রিপোর্ট
  ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০
আপডেট  : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:১৮
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে স্বাধীনতা ফোরাম আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তৃতা করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন -যাযাদি

ছাত্রদলের কাউন্সিলের ওপর আদালত স্থগিতাদেশ দেয়ায় দল ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের কাউন্সিল নিয়েও শঙ্কায় পড়েছে বিএনপি। আগামীতে বিএনপিসহ অঙ্গ সহযোগী সব সংগঠনই কাউন্সিলে নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্ব তৈরি করার দলীয় সিদ্ধান্ত ছিল। ছাত্রদলের কাউন্সিল ঝুলে যাওয়ায় পুরো দল পুনর্গঠনেও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বিএনপির হস্তক্ষেপই ছাত্রদলের কাউন্সিলে স্থগিতাদেশের অন্যতম কারণ হলেও দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বললেন, ছাত্রদলের কাউন্সিল অনুষ্ঠানের সঙ্গে বিএনপি জড়িত নয়।

উৎসবমুখর প্রস্তুতি শেষে হঠাৎ আদালত ছাত্রদলের ষষ্ঠ কাউন্সিলের ওপর 'অস্থায়ী' নিষেধাজ্ঞা জারি করায় শুক্রবার পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে বিএনপির স্থায়ী কমিটিসহ সিনিয়র নেতারা বৈঠক করেন। সেখানে দলের আইনজীবী ও সাবেক ছাত্রনেতারাও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের মাঝপথে বেরিয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, আদালতকে দিয়ে রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করার সরকার যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি তৈরি করছে তা অত্যন্ত ভয়াবহ। বৃহস্পতিবার রাতে সবার অগোচরেই আদালতের এই স্থগিতাদেশ এসেছে। এখানে সরাসরি সরকারের হস্তক্ষেপে আছে বলেই এই স্থগিতাদেশ দেয়া হয়েছে। বর্তমান সরকার নির্বাচিত সরকার নয় এজন্য তাদের জবাবদিহিতা নেই। তারা বাংলাদেশে গণতন্ত্রের নূ্যনতম পরিবেশ থাকুক, সেটা চান না। দুঃখজনকভাবে তারা ব্যবহার করছেন আদালতকে। যেটা কখনোই কোনো গণতান্ত্রিক কোনো রাষ্ট্রের জন্য, জাতির ভবিষ্যতের জন্য শুভ হতে পারে না।

কাউন্সিলের ওপর আদালতের স্থগিতাদেশের ঘটনাকে 'নজিরবিহীন' উলেস্নখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ছাত্রদলের বিষয়ে এখন পর্যন্ত যা কিছু হয়েছে তা আইনসম্মতভাবেই হয়েছে। ছাত্রদলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত চেয়ারম্যান অর্থাৎ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানই নিয়েছেন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানই পারেন এই সিদ্ধান্ত নিতে। এটা সম্পূর্ণ লিগ্যাল। এখন পর্যন্ত যা হয়েছে কোনোটাই বেআইনি হয়নি, সবকিছুই আইনসম্মত হয়েছে।

ছাত্রদলের কাউন্সিলের বিষয় কী হবে প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটি ছাত্রদলের বিষয়। ছাত্রদলের বিষয়ে তারা আলোচনা করছে। তাদের (ছাত্রদল) সিদ্ধান্ত তারা নেন। বিএনপি এর সঙ্গে কোনোমতেই জড়িত নয়।

বিএনপিকে পক্ষ করে আদালত যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে তার জবাব দেয়া হবে উলেস্নখ করে ফখরুল বলেন, বিএনপি নেতারা উত্তরগুলো আদালতের কাছে যথাসময়ে দেবে। সেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তবে ছাত্রদলের সিদ্ধান্ত ছাত্রদলই নেবে, এখন যারা দায়িত্বে আছে তারাই বলবে।

বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব ছাড়াও স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। দলের আইনজীবীদের মধ্যে অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, এজে মোহাম্মদ আলী, নিতাই রায় চৌধুরী, মাহবুবউদ্দিন খোকন, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, কায়সার কামাল, আসাদুজ্জামান আসাদ, ওমর ফারুক ফারুকী, জয়নাল আবেদীন মেজবাহ এবং সাবেক ছাত্র নেতাদের মধ্যে শামসুজ্জামান দুদু, ফজলুল হক মিলন, খায়রুল কবির খোকন, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কামরুজ্জামান রতন, আজিজুল বারী হেলাল, শফিউল বারী বাবু, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, রাজিব আহসান ও আকরামুল হাসান ছিলেন।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রদলের কাউন্সিলে নিষেধাজ্ঞা আসায় সিনিয়র নেতারা বৈঠকে এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। পুরো দল পুনর্গঠনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে অনেক নেতাই মত দেন।

জানা যায়, সামনে মেয়াদোত্তীর্ণ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি করার পথে এগোচ্ছিল বিএনপি। ছাত্রদলের ওপর নিষেধাজ্ঞার আদেশ আসায় হোঁচট খায় দলটি। জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনগুলোর সামনের কমিটিগুলো কাউন্সিলের মাধ্যমে করারও চিন্তাভাবনায় ছিল দলটি। ছাত্রদলের কাউন্সিলের দিকে তাকিয়ে ছিল নেতাকর্মীরা। বেগম জিয়া মুক্তি পেলে ডিসেম্বরে বা নতুন বছরের শুরুতে বিএনপির কাউন্সিল করারও বিষয়টি মাথায় রেখেছিল দলটি। দলের মহাসচিব একাধিকবার কাউন্সিল করার কথাও গণমাধ্যমে বলেন। কিন্তু ছাত্রদলের ঘটনায় ছেদ পড়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে। ছাত্রদল নিয়ে পরবর্তী করণীয় কি তা নিয়ে গত দুদিন ধরে দীর্ঘ সময় বৈঠকও করে বিএনপি। দলের আইনজীবী নেতা ও সাবেক ছাত্রনেতাদের মতামতও নেন লন্ডনে অবস্থান নেয়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

সূত্রমতে, সুষ্ঠুভাবে ছাত্রদলের কাউন্সিল সম্পন্ন হলে যুবদলের নতুন নেতৃত্বও একই পদ্ধতিতে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিএনপির হাইকমান্ড। এরপর জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটিও একই পদ্ধতিতে হওয়ার কথা ছিল। ছাত্রদলের কাউন্সিলে সাময়িক নিষেধাজ্ঞার ঘটনায় বিএনপির নীতি নির্ধারকদের সব হিসাবই উলটপালট করে দিয়েছে।

বিএনপি নেতারা বলেন, বিএনপিতে ভালো কিছু হোক সেটা সরকার চায় না। কারণ, বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের শক্তিশালী কমিটি হলে নিজেদের হুমকি মনে করছে সরকার। তাই আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে সরকার এই ষড়যন্ত্রটা করল।

এ বিষয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন বলেন, ছাত্রদলের কাউন্সিলে বাধা দিয়ে সরকার গণতন্ত্রের ওপর আঘাত হানল। দল ও অঙ্গ সংগঠনের ভবিষ্যতে কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতৃত্ব বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও এ ধরনের নিষেধাজ্ঞার আদেশ আসতে পারে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<66704 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1