বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
সংসদে শোক প্রস্তাব

জিয়া-এরশাদকে রাষ্ট্রপতি বলা বৈধ নয়: প্রধানমন্ত্রী

সমালোচনার পাশাপাশি এরশাদের ভালো কাজের প্রশংসাও করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, জিয়া ক্ষমতায় এসে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেননি। এরশাদ সেটি করেছিলেন
যাযাদি রিপোর্ট
  ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০
আপডেট  : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০৩
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা রোববার জাতীয় সংসদে শোক প্রস্তাবের উপর আলোচনায় অংশ নেন -স্টার মেইল

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, আদালতের রায় অনুযায়ী সাবেক সেনাশাসক জিয়াউর রহমান এবং এইচ এম এরশাদের শাসনামল অবৈধ। এ দুজনের কাউকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে উলেস্নখ করা বৈধ নয়। এই রায়ের মধ্য দিয়ে দেশে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখার সুযোগ হয়েছে। তিনি বলেন, ১৯৮২ সালে এরশাদকে ক্ষমতা দখল করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা এইচ এম এরশাদের মৃতু্যতে রোববার জাতীয় সংসদে আনা শোক প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

এরশাদের মৃতু্যতে গতকাল জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতভাবে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। পরে জাতীয় সংসদের রেওয়াজ অনুযায়ী চলমান সংসদের সদস্য এরশাদের মৃতু্যতে অধিবেশন মুলতবি করা হয়। রোববার থেকে শুরু হয় একাদশ জাতীয় সংসদের চতুর্থ অধিবেশন। এ অধিবেশন চলবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত।

শোক প্রস্তাবের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৮২ সালে এরশাদকে ক্ষমতা দখল করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। এ কারণেই তিনি খালেদা জিয়াকে শুধু দুটি বাড়িই নয়, নগদ ১০ লাখ টাকাসহ অনেক সুযোগ-সুবিধা দিয়েছিলেন। যে কারণে জিয়া হত্যার ঘটনায় করা মামলা বিএনপি চালায়নি। বহু বছর পর ১৯৯১ সালে বা এর পরে খালেদা জিয়া জেনারেল এরশাদকে তার স্বামী হত্যার জন্য দায়ী করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৮১ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন বিচারপতি সাত্তার। এরশাদ বলেছিলেন, সাত্তার তার প্রার্থী। রাজনীতিতে না এলেও সে সময় খালেদা জিয়া হঠাৎ করে বিবৃতি দেন সাত্তারকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পদ থেকে বিদায় দেয়ার জন্য।

জাতীয় পার্টির সাম্প্রতিক কাজের প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, জাতীয় পার্টি বিরোধী দলে আসার পর গঠনমূলক সমালোচনা করেছে, গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করেছে। গত ১০ বছরে সংসদের ওপর, গণতন্ত্রের ওপর মানুষের আস্থা ফিরে এসেছে। জাতীয় পার্টি সে ভূমিকা রেখে যাচ্ছে।

বিএনপিও নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদে যোগ দেয়ায় দলটির সদস্যদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, শক্তিশালী বিরোধী দল ছাড়া গণতন্ত্র মজবুত হয় না। এখন গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে। বিএনপি সংসদে আসে, আবার বলে জনগণ এই সরকারকে ভোট দেয়নি। ভোট না দিলে ১৯৯৬ সালের মতো জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি আন্দোলন করে সরকারকে উৎখাত করতে পারত। জনসমর্থন নেই বলে তারা তা পারছে না। জনগণ ভোট না দিলে ক্ষমতায় থাকা যায় না, তার প্রমাণ ১৯৯৬ সালে খালেদা জিয়ার নির্বাচন।

১৯৯১ সালে বিএনপির শাসনামলে এরশাদের জেল হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরশাদ ও রওশনকে বন্দি করে দিনের পর দিন অকথ্য নির্যাতন করা হয়। কারাগারের ভেতরও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানকে হেয় করা হয়েছে। বর্তমান সরকার খালেদা জিয়ার সঙ্গে সে ধরনের অভদ্র আচরণ করছে না। যথেষ্ট উদারতা দেখাচ্ছে। দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত আসামি হলেও খালেদা জিয়াকে অনেক সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়েছে।

সমালোচনার পাশাপাশি এরশাদের ভালো কাজের প্রশংসাও করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, জিয়া ক্ষমতায় এসে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেননি। এরশাদ সেটি করেছিলেন। স্মৃতিসৌধ ও শহীদ মিনারের কাজ এরশাদ শেষ করেছিলেন। ১৪ জন ছাত্রনেতার মৃতু্য পরোয়ানা ছিল, তাদের মুক্তি দিয়েছিলেন। ব্যক্তিজীবনে এরশাদ ছিলেন অমায়িক, মানুষের প্রতি তার দরদ ছিল।

বিরোধীদলীয় উপনেতা রওশন এরশাদ তার স্বামী এরশাদের ভুলত্রুটির জন্য সবার কাছে ক্ষমা চান। তিনি বলেন, এরশাদ কতটা জনপ্রিয় ছিলেন, তার মৃতু্যর পরও সেটা প্রমাণিত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের আগে জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, রক্তপাতহীন অভু্যত্থানে এরশাদ ক্ষমতা গ্রহণ করেছিলেন। সে সময় সব বিরোধী দল তাতে সমর্থন দিয়েছিল। আদালত এরশাদের প্রথম শাসনামলকে অবৈধ বলেছেন, তবে সে সময়ের কর্মকান্ড গ্রহণ করেছেন। আর দ্বিতীয় শাসনামল নিয়ে আদালত নেতিবাচক কিছু বলেননি।

কাদের বলেন, এরশাদের কর্মকান্ডের সঠিক মূল্যায়ন করলে দেখা যাবে, তিনি গণতন্ত্র রক্ষা ও বিকাশে কাজ করেছেন।

সংসদে আনা শোক প্রস্তাবে বলা হয়, 'হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃতু্যতে দেশ একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ, সফল রাষ্ট্রনায়ক এবং নিবেদিত সমাজসেবককে হারাল।'

প্রস্তাবে আরও বলা হয়, এরশাদ ১৯৮৩ থেকে ১৯৯০ সময়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একনাগাড়ে প্রায় আট বছর ক্ষমতায় থাকাকালে এরশাদ দেশে অসংখ্য উন্নয়ন ও সংস্কারমূলক কাজ করেন।

সরকারি ও বিরোধীদলের বেশির ভাগ সদস্য এরশাদের বিভিন্ন কর্মকান্ড তুলে ধরে ইতিবাচক কথা বললেও সরকারি দলের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সাংসদ এরশাদের সমালোচনাও করেন। এদের মধ্যে আমির হোসেন আমু বলেন, 'সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃতু্যর কারণে শোক প্রস্তাবে এ আলোচনা। দোষগুণে মানুষ। সেগুলো আজকে আলোচনা না করাই ভালো। আমি তার আত্মার শান্তি কামনা করি।'

সরকারি দলের আরেক জ্যেষ্ঠ সাংসদ মোহাম্মদ নাসিম বলেন, 'জেনারেল এরশাদ জিয়াউর রহমানের পথ অনুসরণ করে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের আশ্রয় দিয়েছেন, প্রশ্রয় দিয়েছেন। এমনকি একটি তথাকথিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কর্নেল ফারুকের মতো ঘৃণিত খুনিকে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী করেছিলেন। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক, দুর্ভাগ্যজনক, যেটা আমি ভুলে যেতে চাই। আজকের দিনে স্মরণ করতে চাই না। তবে, বলতে চাই এ জন্য যে এটা রেকর্ডে থাকবে।'

অন্যদের মধ্যে সরকারি দলের সাংসদ তোফায়েল আহমেদ, জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কাজী ফিরোজ রশীদ, ফখরুল ইমাম, মসিউর রহমান, বিএনপির হারুনুর রশীদ, তরীকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।

বৈঠকের শুরুতে স্পিকার এইচ এম এরশাদ, সাবেক সাংসদ সিরাজুল ইসলাম, মুজিবনগর সরকারের উপদেষ্টা ও সাবেক সাংসদ ন্যাপ সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ, সাবেক সাংসদ খালেদা হাবিব এবং আনোয়ারা বেগমের মৃতু্যতে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন।

এ ছাড়া ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, ভারতের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুণ জেটলি, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আ ন ম শফিকুল হক, মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হানিফ, কথাসাহিত্যিক রিজিয়া রহমান, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর নুরুল ইসলাম, সমাজসেবী ঝর্ণা ধারা চৌধুরী, ভাষাসংগ্রামী খালেকুল আল আজাদ, জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রথম অধিনায়ক আনোয়ারুল কবির শামীমের মৃতু্যতে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়।

দেশের বিভিন্ন স্থানে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে, যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও ও টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে বন্দুকধারীদের হামলায়, সুদানে বন্যায় এবং দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে শোক প্রকাশ করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<66128 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1