শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

তাজিয়া মিছিলে বোমা বিচার আটকা সাক্ষ্যে

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০
বোমা হামলায় বিধ্বস্ত হোসেনি দালান চত্বর -ফাইল ছবি

চার বছর আগে আশুরার দিন পুরান ঢাকার হোসেনি দালানে তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলার ঘটনায় করা মামলার বিচারকাজ প্রায় একবছর ধরে সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে আটকে আছে।

গত বছরের ২২ অক্টোবরের পর ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইবু্যনালে বেশ কয়েকটি নির্ধারিত শুনানির তারিখে রাষ্ট্রপক্ষ কোনো সাক্ষী হাজির করতে পারেনি।

ট্রাইবু্যনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ৪৬ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ১১ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। সর্বশেষ সাক্ষ্যগ্রহণ হয় গত বছরের ২২ অক্টোবর।

তিনি বলেন, ওইদিন বোমা হামলায় নিহত একজনের সহোদর আবু সাইদ (৪৯) সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। এরপর গত বছরের নভেম্বর, চলতি বছরের জানুয়ারি ও মার্চে বেশ কয়েকটি তারিখ থাকলেও কোনো সাক্ষী আসেনি। তাদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করা হয়।

সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইবু্যনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমানের আদালতে সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) মামলাটির পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন নির্ধারিত আছে বলে তিনি জানান।

২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর প্রথম প্রহরে তাজিয়া মিছিলের জন্য পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে হোসেনি দালান ইমামবাড়ায় সমবেত হয়েছিলেন ২০ থেকে ২৫ হাজার মানুষ। পরপর তিনটি বোমা বিস্ফোরণে অর্ধশত আহত হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাজ্জাদ হোসেন নামে এক কিশোর ও জামাল উদ্দিন নামে একজন মারা যান।

হামলার দু'দিন পর অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে চকবাজার থানায় মামলা করে পুলিশ। মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো. শফিউদ্দিন শেখ।

পরের বছর ১৮ অক্টোবর নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) ১০ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এর মধ্যেই ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ; অভিযানের সময় কথিত বন্দুকযুদ্ধে সন্দেহভাজন তিন জঙ্গি নিহত হয়।

২০১৭ সালের ৩১ মে ঢাকার মহানগর জজ আদালতে গ্রেপ্তার ১০ আসামির

\হবিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। গত বছরের ১৪ মে মামলাটি ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইবু্যনালে স্থানান্তরিত হয়। এ আদালতে সর্বশেষ সাক্ষ্য দেন আবু সাঈদ।

মামলার নথিপত্রে দেখা যায়, সাক্ষীরা প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে মামলার ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন। কিন্তু কেউই মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে কোনো কিছু বলেননি।

এ কারণে আসামিদের আইনজীবী ফারুক আহাম্মাদ তাদের জেরাও করতে চাননি। বাদী আদালতে দেয়া সাক্ষ্যেও কোনো আসামিকে শনাক্ত করেননি বলে জানান আইনজীবী ফারুক।

পরে মামলার ১০ আসামির মধ্যে চার জন জামিন পেয়েছেন। এরা হলেন- নেত্রকোনার কলমাকান্দার লেংগুড়া মধ্যপাড়ার ওমর ফারুক মানিক, একই উপজেলার হাফেজ আহসান উলস্নাহ মাসুদ, গাজীপুরের কালিয়াকৈরের বড়ইতলী গ্রামের শাহজালাল মিয়া এবং গাইবান্ধার সাঘাটার ডিমলা পদুম শহরের চান মিয়া।

কারাগারে আছেন- সাঘাটার কচুয়া দক্ষিণপাড়ার কবির হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আশিক, বগুড়ার আদমদীঘির কেশরতা গ্রামের মাসুদ রানা মাসুদ ওরফে সুমন, রুবেল ইসলাম ওরফে সজীব, দিনাজপুর কোতোয়ালির ঘাসিপাড়ার আবু সাঈদ রাসেল ওরফে সোলায়মান ওরফে সালমান ওরফে সায়মন, রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের পশ্চিম ইব্রাহিমনগর বালুরমাঠ এলাকার আরমান ওরফে মনির, কামরাঙ্গীরচরের পূর্ব রসুলপুরের জাহিদ হাসান ওরফে রানা ওরফে মুসায়াব ও দিনাজপুরের রুবেল ইসলাম ওরফে সজীব ওরফে সুমন।

এদের মধ্যে জাহিদ, আরমান, রুবেল ও কবির আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

এরই মধ্যে আসামি পক্ষের আইনজীবী ফারুখ আহাম্মাদের আবেদনে আসামি জাহিদ হাসান রানা ওরফে মুসায়াবকে শিশু হিসেবে দেখিয়ে শিশু আইনে আলাদা অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা।

আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীরা আদালতে এসে অভিযোগ প্রমাণ করার মতো কিছু বলেনি।

মামলার নথিতে বলা হয়, গত জানুয়ারিতে 'বন্দুকযুদ্ধে' নিহত আবদুলস্নাহ বাকি ওরফে নোমান ছিলেন হোসেনি দালানে হামলার মূল পরিকল্পনাকারী। হামলার আগে ১০ অক্টোবর তারা বৈঠক করে হামলার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেন।

বোমা হামলার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন জাহিদ, আরমান ও কবির। কবির ও জাহিদ ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ করেন। হামলার পর আশ্রয়ের জন্য কামরাঙ্গীরচরে বাসা ভাড়া করেন আরমান ও রুবেল। ঘটনাস্থলে আরমান পরপর পাঁচটি বোমা ছুঁড়েন।

বাকি পাঁচজন চান মিয়া, ওমর ফারুক, আহসানউলস্নাহ, শাহজালাল ও আবু সাঈদ হামলার চিত্র ভিডিও করা ছাড়াও হামলায় উদ্বুদ্ধ ও সহায়তা করেন। আসামি মাসুদ রানারও হামলায় অংশ নেয়ার কথা ছিল। কিন্তু আগের দিন গাবতলীতে পুলিশের তলস্নাশি চৌকিতে এএসআই ইব্রাহীম মোলস্নাকে হত্যার সময় ঘটনাস্থলে গ্রেপ্তার হন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<66095 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1