শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

আতঙ্কে মন্ত্রী-এমপি-নেতারা

নৌকার বিরোধিতাকারীদের শোকজ
ফয়সাল খান
  ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

উপজেলা নির্বাচনে নৌকার বিরোধিতাকারী ১৫০ মন্ত্রী-এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান ও নেতাকে শোকজ নোটিশ পাঠানোর উদ্যোগ নিলেও এখনো কারও নাম প্রকাশ করেনি আওয়ামী লীগ। এ অবস্থায় কার ঘাড়ে শোকজের খড়গ চাপছে এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন অনেকেই। কারণ প্রকাশ্য নৌকার বিরোধিতা না করলেও গোপনে ইন্ধন দেয়া প্রভাবশালী অনেক নেতার নামও এ তালিকায় থাকার আভাস দিয়েছে দলীয় হাইকমান্ড।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের আসন্ন কেন্দ্রীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে দলে শুদ্ধি অভিযান চালানোর অংশ হিসেবেই উপজেলা নির্বাচনে নৌকার বিরোধিতাকারী নেতাদের শাস্তির মুখোমুখি করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ১৫০ নেতার জন্য আলাদা আলাদা শোকজ নোটিশ তৈরি করা হয়েছে। সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষর করলে যেকোনো মুহূর্তে তা পাঠানো হবে। নোটিশ হাতে পাওয়ার তিন সপ্তাহের মধ্যে জবাব দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। জবাব পাওয়ার পর দলের হাইকমান্ড তা যাচাই-বাছাই করে শৃঙ্খলাভঙ্গকারী ও দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের চূড়ান্তভাবে দল থেকে বহিষ্কারের জন্য একটি তালিকা প্রস্তুত করবেন। এরপর তা দলের পরবর্তী কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় ওই বৈঠকে আলোচনা শেষে চূড়ান্ত বহিষ্কার হওয়া বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাদের মদদদাতাদের তালিকা গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হবে।

কেন্দ্রীয় নেতাদের এমন মনোভাবে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন অনেক মন্ত্রী-এমপি ও প্রভাবশালী নেতা। এ নিয়ে কেন্দ্রে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করছেন তারা। শোকজ চিঠি ঠেকানো বা শাস্তি থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য জোর তদবিরও করছেন কেউ কেউ। তাছাড়া যেসব উপজেলা চেয়ারম্যান বা প্রার্থীকে শোকজ পাঠানো হচ্ছে, তাদের জবাব নিয়েও চিন্তিত অনেক মন্ত্রী-এমপি। কেননা তৃণমূল পর্যায়ের বেশির ভাগ বিদ্রোহী প্রার্থীর পেছনে স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীর মদদ ছিল। এক্ষেত্রে বিদ্রোহী প্রার্থীদের শোকজের জবাবেও ফেঁসে যেতে পারেন দলের অনেক প্রভাবশালী নেতা।

এদিকে, বিদ্রোহী প্রার্থীরা শুরু থেকেই অভিযোগ করে আসছেন, জেলা নেতৃবৃন্দ টাকার কাছে বিক্রি হয়ে ত্যাগী ও জনপ্রিয় প্রার্থীদের নাম কেন্দ্রে পাঠাননি। স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে অজনপ্রিয় ও হাইব্রিড নেতাদের নাম কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন। তাই তারা বিদ্রোহী হয়েছেন। নির্বাচনের পর শতাধিক উপজেলায় নৌকার প্রার্থী পরাজিত হলে বিদ্রোহীদের এমন অভিযোগ আরও জোরালো হয়।

বিদ্রোহী প্রার্থীরা বলছেন, তাদের প্রতি কোনো ব্যবস্থা নেয়া হলে তা সঠিক হবে না। নানা লবিং ও গ্রম্নপিংয়ের কারণে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে প্রার্থী হয়েছিলেন তারা। দলীয় নেতাকর্মী ও জনসাধারণের জনপ্রিয়তা কার কতটুকু তা ওই নির্বাচনে প্রমাণ হয়ে গেছে।

দলের সিদ্ধান্তের বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হয়েছেন- ঢাকার পার্শ্ববর্তী এমন এক উপজেলার চেয়ারম্যান জানান, দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি একটি পরিবারের হাতে কুক্ষিগত করে রাখা হয়েছিল। দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছিল। মানুষের চাওয়ার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে প্রার্থী হয়েছিলেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মনোনয়নের ক্ষেত্রে কেন্দ্রে ভুল মেসেজ দিয়েছেন স্থানীয় নেতারা, যা নির্বাচনে জয়লাভ করার মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের একটি সূত্র বলছে, সব অভিযোগের ব্যাপারে একই ধরনের শাস্তি প্রযোজ্য হবে না। তাদের ব্যাপারে দুই-তিন ধরনের শাস্তি দেয়া হতে পারে। অভিযোগ ছাড়াও সরকারের বিভিন্ন সংস্থার তদন্ত রিপোর্ট রয়েছে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে এসব রিপোর্টও পর্যালোচনা করা হবে। যারা নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করেছে তাদের একটি অংশকে সরাসরি বহিষ্কার করা হতে পারে। মদদদাতাসহ যাদের অপরাধ তুলনামূলক কম তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। তা ছাড়া কোনো মন্ত্রী-এমপি সরাসরি সংগঠনের বিরুদ্ধে গিয়ে কোনো কাজ করার প্রমাণ পাওয়া গেলে ভবিষ্যতে তাদের আর মনোনয়ন দেয়া হবে না। পাশাপাশি দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেয়ার ক্ষেত্রেও বিষয়গুলো বিবেচনা করা হবে।

ইতঃপূর্বে বিভিন্ন নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের সতর্ক করলেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি আওয়ামী লীগ। এই প্রথম দলের বিশাল সংখ্যক নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

শনিবার দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা করায় অন্তত দেড়শ নেতাকে শোকজ করা হবে। রোববার থেকে এই শোকজ নোটিশ সংশ্লিষ্ট নেতাদের কাছে পাঠানো শুরু করার কথা থাকলেও ওই দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো চিঠি পাঠানোর খবর পাওয়া যয়নি।

প্রসঙ্গত, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কোনো নেতা বা কর্মী স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে তাকে দলের বিদ্রোহী হিসেবে ধরে নেয় আওয়ামী লীগ। সম্প্রতি পাঁচ ধাপে অনুষ্ঠিত ৪৭৩টি উপজেলা নির্বাচনের ১৪৯টিতে চেয়ারম্যান পদে জিতেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ১৪০ জনই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী। অন্তত দুই শতাধিক উপজেলায় কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে এবং স্থানীয় মন্ত্রী-এমপি ও প্রভাবশালী নেতাদের মদদে নৌকার বিপক্ষে প্রার্থী হন আওয়ামী লীগের স্থানীয় অনেক নেতা। নির্বাচন শেষ হলে এসব নেতার বিরুদ্ধে শত শত অভিযোগ জমা পড়ে কেন্দ্রে। দলে নীতিনির্ধারণী ফোরামের একাধিক সভায় এসব অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। প্রাথমিকভাবে এসব নেতাকে শোকজ করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু বন্যা, ডেঙ্গু, ছেলেধরা গুজব, গণপিটুনি ও শোকের মাসের কর্মসূচির কারণে তা দীর্ঘদিন আটকে থাকলেও এরই মধ্যে ১৫০ জন নেতাকে চিহ্নিত করে শোকজ নোটিশ তৈরি করছে আওয়ামী লীগ।

গত ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিত দলের সভাপতিমন্ডলীর সভায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকার বিরোধিতাকারী নেতাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর ৫ এপ্রিল এসব নেতাকে কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে কারণ দর্শানোর চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। ১২ জুলাই অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে 'বিদ্রোহী' ও তাদের মদদদাতাদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়। সর্বশেষ গতকাল শনিবার তাদের শোকজ নোটিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<66094 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1