মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
নতুন গবেষণা

গর্ভেই নির্ধারিত হয় সন্তানের ব্যক্তিত্ব

যাযাদি ডেস্ক
  ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০
গর্ভাবস্থায় মায়ের মানসিক অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে সন্তানের ব্যক্তিত্ব

নতুন এক গবেষণা বলছে, কোনো নারী যদি গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত মানসিক চাপে থাকেন, ওই সন্তান ৩০ বছর বয়সের পৌঁছানোর আগেই সে 'পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার' বা ব্যক্তিত্ব বৈকল্যে আক্রান্ত হতে পারে। ওই ঝুঁকি স্বাভাবিকের তুলনায় ১০ গুণ বেশি হতে পারে।

এমনকি গর্ভাবস্থায় মাঝারি মাত্রার মানসিক চাপ যদি দীর্ঘমেয়াদী হয়, তাহলেও সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

ফিনল্যান্ডে ৩,৬০০ গর্ভবতী নারী তাদের সন্তানদের ওপর ওই গবেষণাটি চালানো হয়।

গর্ভাবস্থায় ওই নারীদের মানসিক চাপ নিরূপণ করা হয়। পরে তাদের সন্তান জন্ম নেয়ার পর, ওই সন্তানদের মানসিক বিকাশের ওপর নজর রাখা হয়।

মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, গর্ভবতী নারীদের মানসিক স্বাস্থ্যকে বিশেষভাবে বিবেচনায় নেয়া উচিত। কীভাবে সন্তানকে বড় করা হয়, পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা কী, শিশু বয়সে সে কোনো সহিংসতা বা অপ্রীতিকর ঘটনার শিকার হয়েছিল কিনা-এগুলোও ব্যক্তিত্বের ওপর প্রভাব ফেলে।

তবে ওই গবেষণায় জড়িত মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, গর্ভাবস্থায় মায়ের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রভাবও সন্তানের ব্যক্তিত্বে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে।

ব্যক্তিত্ব বৈকল্য কী

'পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার' এমন একটি মানসিক অবস্থা যাতে আক্রান্ত ব্যক্তি নিজের জীবন তো বটেই, অন্যের জীবনেও বড় ধরনের সংকট তৈরি করে।

এরা অনর্থক এবং অতিমাত্রায়

উদ্বিগ্ন হতে পারে, আবেগের ওঠানামার পেছনে কোনো যুক্তি থাকে না, অতিমাত্রায় সন্দেহপ্রবণ হয়ে পড়ে। এমনকি অনেক সময় সমাজবিরোধী কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে।

এ ধরনের মানুষ প্রায় মানসিক চাপে ভোগে। অনেক সময় এরা মাদক এবং মদাসক্ত হয়ে পড়ে।

কীভাবে হয়েছিল এই গবেষণা

এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে মনোবিজ্ঞানবিষয়ক বিখ্যাত সাময়িকী 'ব্রিটিশ জার্নাল অব সাইকিয়াট্রি'তে।

গবেষণায় ৩,৬০০ গর্ভবতী নারীকে তাদের গর্ভাবস্থায় প্রত্যেক মাসে কিছু প্রশ্ন করে তাদের মানসিক অবস্থা বোঝার চেষ্টা করা হয়। বিশেষ করে মানসিক চাপের মাত্রা নিরূপণের চেষ্টা করা হয়।

এই নারীরা ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকি এবং আশপাশে থাকতেন। তারা ১৯৭৫ এবং ১৯৭৬ সালে সন্তানের জন্ম দেন।

ওই সন্তানদের বয়স তিরিশে পৌঁছানোর পর দেখা যায়, তাদের ৪০ জনের মধ্যে মারাত্মক ব্যক্তিত্বের সংকট তৈরি হয়েছে। তাদের মানসিক অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে।

গবেষণায় ফলাফল

গবেষণায় দেখা যায়, যেসব মা গর্ভাবস্থায় দীর্ঘদিন বড়োরকম মানসিক অস্থিরতার মধ্যে ছিলেন, প্রধানত তাদের সন্তানরাই মানসিক সংকটে পড়েছে।

যেসব মায়ের গর্ভাবস্থায় মানসিক চাপ কম ছিল, তাদের সন্তানদের চেয়ে চাপে থাকা মায়েদের সন্তানদের ব্যক্তিত্ব বৈকল্য হয়েছে অনেক বেশি-প্রায় ১০ শতাংশ বেশি।

মায়েদের চাপের কারণগুলোর মধ্যে ছিল-সম্পর্কের সংকট, সামাজিক বা মনস্তাত্ত্বিক সংকট।

কী করা যেতে পারে?

ব্রিটেনের রয়াল কলেজ অব সাইকিয়াট্রিস্টের অধ্যাপক ড. ট্রুডি সিনিভারত্নে বলছেন, গর্ভধারণ করলে অনেক নারী মানসিক চাপে পড়েন। তাদের জন্য সাহায্য খুবই জরুরি।

তিনি বলছেন, যদি এই মানসিক চাপ ঠিকমতো নিরসন না করা হয়, তার পরিণতি দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে, তাদের জন্য এবং সন্তানদের জন্য।

'আমরা চাই না যে বাবা-মার মনে এমন কোনো অপরাধ-বোধ তৈরি হোক যে তারা তাদের সন্তানদের ক্ষতি করছেন- কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী এবং উঁচু মাত্রার মানসিক চাপ সন্তানদের ক্ষতি করে।'

কীভাবে গর্ভাবস্থায় মাসনিক

\হচাপ কমানো সম্ভব

ড. সিনিভারত্নে বলছেন, গর্ভবতী নারীদের অবশ্যই বাড়িতে এবং কাজের জায়গায় সাহায্য করতে হবে। চাপ তৈরি হলে, কীভাবে সে তা সামলাতে পারে-সে ব্যাপারে তাকে পরামর্শ দিতে হবে।

'তাদের জানতে হবে কীভাবে বিশ্রাম নিতে হয়, মানসিক চাপে পড়লে অন্যের কাছ থেকে কীভাবে সাহায্য চাইতে হয়।'

গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি ধূমপান ত্যাগ এবং যথেষ্ট ঘুমানোর পরামর্শ দেয়া হয়। বিবিসি বাংলা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<65785 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1